Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

ডিম পাড়া মুরগীর খাদ্যে উচ্ছিষ্ট ডিমের খোসা ব্যবহার

ড. মোঃ আমিনুল ইসলাম

প্রকাশিত: ০০:৩৬, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

আপডেট: ০০:৪৩, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০

প্রিন্ট:

ডিম পাড়া মুরগীর খাদ্যে উচ্ছিষ্ট ডিমের খোসা ব্যবহার

-লেখক

ব্যবহারের কারণঃ সারা বিশ্বে বর্তমানে মানুষের প্রয়োজনে পোল্ট্রি উৎপাদন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে একদিকে প্রচলিত খাদ্য উপাদানের স্বল্পতা ও অন্যদিকে দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই জন্য পোল্ট্রি বিজ্ঞানীরা পোল্ট্রি খাদ্যে দামী প্রচলিত খাদ্য উপাদানের পরিবর্তে পর্যাপ্ত অপ্রচলিত স্বস্তা খাদ্য উপাদান অন্তর্ভুক্ত করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন, যাতে করে নিরাপদ ও সুলভ মুল্যে পোল্ট্রি বা পোল্ট্রি প্রডাক্টস উৎপাদন করা যায়। দেখা গেছে যে, পোল্ট্রি উৎপাদনে মোট খরচের প্রায় ৬০-৬৫% খরচ হয় শুধুমাত্র খাদ্যের জন্য।

ডিমের খোসাতে ৯৪% ক্যালসিয়াম কার্বনেট, ১% ক্যালসিয়াম ফসফেট, ১% ম্যাগনেসিয়াম কার্বনেট এবং ৪% জৈব পদার্থ থাকে। ঝিনুকের খোসা থেকে প্রাপ্ত ক্যালসিয়াম কার্বনেটের মধ্যে কিছু বিষাক্ত পদার্থ থাকে যেমনঃ অ্যালুমিনিয়াম, ক্যাডমিয়াম এবং মারকারী জাতীয় পদার্থ। ডিমের শক্ত খোসা গঠনের জন্য ডিম পাড়া মুরগীর খাদ্যে ক্যালসিয়াম অপরিহার্য। যদি খাদ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম না থাকে, মুরগী তার শরীরের হাড় থেকে ক্যালসিয়াম নিয়ে ডিমের খোসা গঠন করে।

সেই জন্যে ডিম পাড়া মুরগীর খাদ্যে অধিক পরিমাণ ক্যালসিয়াম সরবরাহ করা আবশ্যক। উচ্ছিষ্ট ডিমের খোসা ক্যালসিয়ামের একটি উত্তম উৎস যা মুরগীর খুবই পছন্দনীয় খাদ্যোপাদান, এমনকি ক্যালসিয়ামের অন্যান্য উৎস যেমনঃ লাইমস্টোন, শামুক বা ঝিনুক ভাঙার চেয়েও অধিক বেশী পছন্দ করে। বর্তমানে বাংলাদেশে গ্র্যান্ডপ্যারেন্ট, প্যারেন্ট স্টক ফার্ম, হ্যাচারি, প্রতিদিন মুরগীর ডিম এবং ব্রয়লার বাচ্চা উৎপাদন হয় যথাক্রমে; ১৬, ২০৬, ৩,৩০,০০০০০ এবং ১,০০৭০,০০০ টি। কাজেই রেস্টুরেন্ট, হ্যাচারি, কিচেন এবং ডিমজাত দ্রব্য উৎপাদনকারী ফ্যাক্টরি হতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিমের খোসা উচ্ছিষ্ট হিসাবে ফেলে দেয়া হচ্ছে। এই উচ্ছিষ্ট ডিমের খোসাতে শুধুমাত্র ক্যালসিয়ামই নয় এমনকি অল্প পরিমানে প্রোটিনও থাকে যা মুরগীর খাদ্যে ব্যবহারে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া ডিম উৎপাদন ও ডিমের গুনগত মানের উপর প্রভাব বিস্তার করে না।

ডিমের খোসা সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াকরণঃ রেস্টুরেন্ট, কিচেন এবং হ্যাচারী হতে প্রাপ্ত পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিমের খোসা প্রক্রিয়াকরণ করা খুবই সহজ। ডিমের খোসা সংগ্রহের পর পরিষ্কার পানিতে ধৌত করে গরম পানিতে কয়েক মিনিট ফুটাতে হয়। তারপর সূর্যের আলোতে শুকিয়ে গ্রাইন্ডিং মেশিনের সাহায্যে গ্রাইন্ডিং করে প্যাকেটজাত বা সংরক্ষণ করা হয় এবং পরবর্তীতে মুরগীর খাদ্যে ব্যবহার করা হয়। অতি সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ৮% উচ্ছিষ্ট ডিমের খোসা ব্যবহার করে ডিম পাড়া মুরগীর খাদ্য খরচ হয়েছে প্রতি কেজিতে ২৭.৬০ টাকা মাত্র যেখানে বাণিজ্যিকভাবে তৈরী বাজারজাত প্রতি কেজি খাদ্যের দাম ৩৫.০০- ৪০.০০ টাকা।

উচ্ছিষ্ট ডিমের খোসা, লাইমস্টোন ও ঝিনুক ভাঙা এর খাদ্যমানঃ সম্প্রতি গবেষণার খাদ্যমান মূল্যায়নে দেখা গেছে যে, কিচেন ও হ্যাচারি উচ্ছিষ্ট ডিমের খোসায় আছে যথাক্রমে; ৯৮.৫২% ও ৯৯.২০% ড্রাইমেটার এবং ১.৪৮% ও ০.৮০% আর্দ্রতা। লাইমস্টোন ও ঝিনুক ভাঙাতে আছে যথাক্রমে; ৯৯.৬০% ও ৯৯.৫১% ড্রাইমেটার এবং ০.৪০ ও ০.৪৯% আর্দ্রতা। তাছাড়া কিচেন উচ্ছিষ্ট ডিমের খোসাতে আছে যথাক্রমে; ৪.২৪% প্রোটিন, ২৯.৭৫% ক্যালসিয়াম এবং ১৪.৮২% ফসফরাস, এবং হ্যাচারী উচ্ছিষ্ট ডিমের খোসাতে আছে যথাক্রমে; ১৩.৮০% প্রোটিন, ২৫.৫৩% ক্যালসিয়াম এবং ১৩.৮৭% ফসফরাস। তবে লাইমস্টোন ও ঝিনুক ভাঙাতে আছে শুধুমাত্র ৩৭.১২% ও ৩৫.২০% ক্যালসিয়াম।

মাঠ পর্যায়ে ডিম উৎপাদন, উৎপাদন খরচ, লাভ এবং ডিমের গুণগতমানের উপর উচ্ছিষ্ট ডিমের খোসা, লাইমস্টোন ও ঝিনুক ভাঙার প্রভাবঃ মাঠ পর্যায়ে গবেষণায় দেখা গেছে যে, ৮% উচ্ছিষ্ট ডিমের খোসা ব্যবহারে সর্বোচ্ছ সংখ্যক ডিম উৎপাদন (৩১৪ ডিম/বৎসর) ও লাভ (৩২.৩৯ টাকা/ডজন) হয় এবং সর্বনি¤œ উৎপাদন খরচ ( ৬৯.৬১ টাকা/ডজন) হয়। এই ক্ষেত্রে পরবর্তী অবস্থানে আছে যথাক্রমে; ৮% লাইমস্টোন ও ৮% ঝিনুক ভাঙা। তবে লিপিড প্রোফাইল ধারনের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। ডিম পাড়া মুরগীর খাদ্যে, লাইমস্টোন বা ঝিনুক ভাঙা ব্যবহারের চেয়ে উচ্ছিষ্ট ডিমের খোসা ব্যবহারে ডিমের খোসার ভঙ্গুরতা শক্তি (৩.৭৭ কেজ্/িডিম) অনেক বেশী বৃদ্ধি পায়।

আরও যা জানা প্রয়োজন

-উচ্ছিষ্ট ডিমের খোসাতে উচ্চ মাত্রায় ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস এবং অল্প পরিমাণে আমিষ আছে।

-উচ্ছিষ্ট ডিমের খোসা বিশেষ করে ৮% উচ্ছিষ্ট ডিমের খোসা, লাইমস্টোন বা ঝিনুক ভাঙার চেয়ে ডিম উৎপাদন, লাভ, ডিমের খোসার ভঙ্গুরতা শক্তি এবং ড্রাইমেটারসহ ডিমের অন্যান্য গুণগতমানের উপর অনেক বেশী প্রভাব বিস্তার করে থাকে। তবে ডিমের কলেস্টেরলের পরিমাণ সকল ক্ষেত্রে প্রায় একই রকম থাকে।

-অতএব, ডিম উৎপাদনকারী মুরগীর খাদ্যে উচ্ছিষ্ট ডিমের খোসা বিশেষ করে ৮% উচ্ছিষ্ট ডিমের খোসার ব্যবহার নিরাপদ, উচ্চগুণসম্পন্ন ও লাভজনক ডিম উৎপাদনে খুবই ফলপ্রসু হবে বা সুফল বয়ে আনবে। তবে ডিমপাড়া মুরগীর খাদ্যে ১০-১২% উচ্ছিষ্ট ডিমের খোসা ব্যবহারের প্রভাবও দেখা দরকার।

লেখক : অধ্যাপক, ডেইরি ও পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়-গাজীপুর।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer