Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৫ ১৪৩১, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

জোট কে বাদ দিয়ে একাই পথ চলার নীতিতে বিএনপি

বহুমাত্রিক.ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৫৮, ১৩ জুন ২০২১

আপডেট: ১২:১৪, ১৩ জুন ২০২১

প্রিন্ট:

জোট কে বাদ দিয়ে একাই পথ চলার নীতিতে বিএনপি

একলা চলো নীতিতে হাটা শুরু করেছে বিএনপি। বিশ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টকে বাদ দিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন কিংবা ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে এই দুই জোটকে আপাতত এড়িয়ে চলার কৌশল নিয়েছে বিএনপি। করোনা মহামারির মতো দুর্যোগেও তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে দেখা যাচ্ছে না।নানা ইস্যুতে দুই জোট ও বিএনপির মধ্যে দূরত্ব অনেকটাই স্পষ্ট। এই দূরত্ব ঘোচানোর কোনো উদ্যোগও দলগুলোর ভেতর থেকে কেউ নেয় নাই। বিভিন্ন কর্মসূচি ও রাজনৈতিকভাবে জোটগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে বিএনপির একলা চলো নীতির কারণে বাকি দুই জোটের শরিকদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে হতাশা।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, করোনার কারণে দেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নেই বললেই চলে। সীমিত পরিসরে আমরা দলীয় কর্মসূচি পালন করছি। সে কারণে জোটের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। তবে সবার সঙ্গে যোগাযোগ আছে। তাছাড়া এই মুহূর্তে আমরা নিজেদের দল গোছানোকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কিভাবে দ্রুত সময়ে দলের পুনর্গঠন শেষ করা যায় সে লক্ষ্যে কর্মকৌশল প্রণয়ন করছি। শোনা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চরম ভরাডুবির পর জোট ও ঐক্যফ্রন্টের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করে বিএনপির হাইকমান্ড। রাজনৈতিক কর্মকৌশল চূড়ান্তে তৃণমূলসহ বিভিন্ন মহলের পরামর্শ নেওয়া হয়। প্রায় সবাই জোটকে গুরুত্ব না দিয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্ব দেন। তাদের পরামর্শের ওপর ভিত্তি করে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর ওপর জোর দেয় বিএনপি। দ্রুত সময়ে সংগঠন গোছাতে নেওয়া হয় নানা উদ্যোগ।

এছাড়া নানা ইস্যুতে ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টকে এড়িয়ে চলছে বিএনপি। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতেও তাদের কোনো পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে না। বিগত সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। কয়েকটি উপ-নির্বাচনেও অংশ নেয় দলটি। এসব নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগে জোট বা ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে কোনো আলোচনাই করেননি বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার ব্যাপারে কোনো পরামর্শও নেওয়া হয়নি।অথচ এর আগে গুরুত্বপূর্ণ এসব নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগে জোটের পরামর্শ নেওয়া হতো। এমনকি বিএনপি দলীয় প্রার্থী দিলেও তাকে জোটগতভাবে সমর্থন দেওয়া হতো। শুধু তাই নয়, ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে জোটের নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠেও নেমেছেন। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর চিত্র পুরো উলটো। বিএনপি এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় জোট বা ফ্রন্টের কোনো শরিককে তাদের সঙ্গে নির্বাচনী মাঠে দেখা যায়নি।

নির্বাচনের আগে তাদের পরামর্শ না নেওয়ায় বিএনপির হাইকমান্ডের ওপর ক্ষুব্ধ জোটের নেতারা। তাদের মতে, বিএনপির পক্ষ থেকে সবসময় বলা হয়, এটা আন্দোলন ও নির্বাচনী জোট। তাহলে নির্বাচনসংক্রান্ত বিষয়েও কেন তাদের এড়িয়ে চলা হচ্ছে?জানতে চাইলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী  বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অস্তিত্ব এখন নেই বললেই চলে। এটা এখন অনেকটা কাগজে কলমে। ফ্রন্টের বড় দল বিএনপির এ ব্যাপারে আগ্রহ কম। তাছাড়া গণফোরামের মধ্যে সমস্যা হয়েছে। আর যারা আছে তারা তো ছোট ছোট দল।’

তিনি জানান,‘ঐক্যফ্রন্ট বর্তমানে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয়। তবে ভবিষ্যতে সক্রিয় হবে কিনা সেজন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। কারণ বিএনপি ফ্রন্টে থাকবে না-এটা তো বলছে না।’রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দেশে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে জোট ও ফ্রন্টের মধ্যে দূরত্ব কমার কথা। করোনা মহামারিতে ঐক্যবদ্ধভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু করোনা মহামারিতে তাদের মধ্যে দূরত্ব আরও বেড়েছে। মহামারিতে করণীয় নিয়ে জোট কিংবা ফ্রন্টের সঙ্গে কোনো আলোচনাই করেনি বিএনপি। সারা দেশে অসহায় ও দুস্থদের পাশে দাঁড়ালেও সেখানে জোটের কাউকে দেখা যায়নি।

সর্বশেষ জাতীয় সংসদের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর প্রতিক্রিয়া জানানোর আগেও তাদের কোনো পরামর্শ নেয়নি বিএনপি। এমনকি জোট বা ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাজেট নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়াও দেওয়া হয়নি।২০ দলের অন্যতম শরিক এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, ‘জোটের এখন কোনো কার্যক্রম নেই। বিভিন্ন কারণে বিএনপির পক্ষ থেকে কিছু সমস্যা রয়েছে। জোটকে সক্রিয় করতে বিএনপিকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের অক্টোবরে বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য মিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয় । এরপর এতে যোগ দেয় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। যদিও পরে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে যায়। নির্বাচনের আগে রাজনীতির মাঠ গরম রেখেছিল এ ফ্রন্ট। কিন্তু নির্বাচনে চরম বিপর্যয়ের পর ধীরে ধীরে অনেকটা অকার্যকর হয়ে গেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। নানা ইস্যুতে ফ্রন্টের শরিকদের মধ্যে সৃষ্টি হয় দূরত্ব।

তাছাড়া জোটের নেতৃত্বে থাকা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের ভূমিকা নিয়ে শুরুতেই দলের একটি অংশের সন্দেহ ছিল। ফ্রন্টকে ভালোভাবে নেয়নি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিকরাও। সব মিলিয়ে জোট ও ফ্রন্টকে নিয়ে অস্বস্তিতে পড়ে বিএনপি। ফলে এ দুটো জোটকে এড়িয়ে চলার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় তারা। জানতে চাইলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ঐক্যফ্রন্ট মারা যায়নি কিংবা বিলুপ্তও করে দেওয়া হয়নি। বেঁচে আছে তবে কার্যত নেই। ঐক্যফ্রন্ট আলোর মুখ দেখবে কিনা জানি না। তবে দেশে যে অন্যায় অত্যাচার চলছে তাতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রয়োজন। কিন্তু সেই আন্দোলনের কোনো উদ্যোগ দেখছি না। তবে বর্তমান বাস্তবতায় দেশে ঐক্যফ্রন্টের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

 

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer