Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৪ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

জার্নি টু সাজেক

হাসান ইমাম চৌধুরী

প্রকাশিত: ২২:৫২, ৩০ এপ্রিল ২০১৫

আপডেট: ০২:০০, ২০ মে ২০১৫

প্রিন্ট:

জার্নি টু সাজেক

ছবি-সংগৃহীত

ঢাকা: অজানাকে জানা মানুষের চিরন্তন অভ্যাস। তাইতো দেশ থেকে দেশান্তরে মানুষ ছুটে চলছে। আমারও মনের ভেতর সাজেক দেখার ইচ্ছেটাকে অনেক দিন ধরে পুষে রেখেছিলাম। অনেকের কাছ থেকে সাজেক সম্পর্কে নানা ধরনের খোঁজ-খবর নিতে শুরু করলাম। সবকিছু শুনে দুর্গম রূপসী সাজেকে যাবার জন্য মন আনচান করতে লাগল। একদিন দল নিয়ে রওনা দিলাম সাজেকের পথে।

ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাবার অনেক বাস পাওয়া যায়। যাওয়া যায় ট্রেনেও। এরপর চট্টোগ্রামের অক্সিজেন বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রতি আধঘণ্টা পরপর বিরতিহীন বাস ছাড়ে রাঙামাটির উদ্দেশ্যে। ভাড়া জনপ্রতি ৭৫ টাকা। একটু আরাম-আয়েশ করে যেতে চাইলে এস আলম, সৌদিয়া, চ্যালেঞ্জার কিংবা কর্ণফুলী চেয়ারকোচে যাওয়া যায়। ভাড়া একশ’ টাকা। চট্টগ্রাম শহর থেকে রাঙামাটি যেতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা।

অপরূপা রাঙামাটিতে গাঢ় সবুজের পাহাড় আছে, চঞ্চলা ঝরনা আছে, নৌকা ভ্রমণের হ্রদ আছে। আছে পাহাড় রাণী সাজেক। প্রকৃতির সব সৌন্দর্যই আছে এই জেলাটিতে। কর্ম ব্যস্ত জীবন থেকে বুকভরে একটু নিশ্বাস নিতে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন রাঙামাটি তথা সাজেক থেকে।

রাঙামাটির আয়তন ছয় হাজার ৪৮১ বর্গকিলোমিটার। সত্তর দশকের শেষদিকে সরকার রাঙামাটি জেলাকে পর্যটন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে এবং পর্যটন করপোরেশনও পর্যটকদের সুবিধার্থে বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা গড়ে তুলে।

পার্বত্য অঞ্চল রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় সাজেক ভ্যালি। রাঙামাটি থেকে সাজেক যাওয়ার তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। সাজেক যেতে হলে কাপ্তাই লেক পার হয়ে ৩৫ কিলোমিটার পাহাড় বেয়ে তবেই আপনাকে পৌঁছাতে হবে সেখানে। আবার খাগড়াছড়ির দিঘীনালা উপজেলা হয়ে সাজেক যাওয়ার সহজ পথ রয়েছে।

খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার আর এই রাস্তা বানানো শুরু হয় ২০০৪ সালে। সাজেক ইউনিয়নের আয়তন ৭০২ বর্গমাইল। সাজেকের উত্তরে রয়েছে ভারতের ত্রিপুরা, পূর্বে মিজোরাম, পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দিঘীনালা ও দক্ষিণে রাঙামাটির লংগদু উপজেলা।

খাগড়াছড়ি পৌঁছে আমরা পর্যটন হোটেলে রাত কাটিয়ে পরদিন সকালে চান্দের গাড়িতে সাজেকের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। অনেক আর্মি চেকপোস্ট, পুলিশ চেকপোস্ট পার হয়ে যেতে হয় সাজেকে। অনেক কথার পর আমাদের যাওয়ার অনুমতি মিলল। অবশেষে চেকপোস্ট পার হয়ে চান্দেও গাড়ি ছুটল পাহাড়ি পথে। তখন শুধু প্রকৃতির বিস্ময়কর রূপ। দু’পাশে গভীর অরণ্য, মাঝে পাহাড়কাটা আঁকাবাঁকা পথ। গাড়ি কখনও উপরের উঠছে, কখনও নিচে নামছে। কোনো জনমানবের চিহ্ন নেই।

দিঘীনালা আর্মি চেকপোস্ট পেরিয়ে রাঙামাটি ঢুকতেই বাঘাইছড়ির বাঘাইহাট বাজার। যারা দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসতে চান তারা এই বাজারের হোটেলে আগাম খাবারের অর্ডার দিয়ে যেতে হবে। আর প্রয়োজনীয় বাকি জিনিসপত্রও এখান থেকে অবশ্যই সংগ্রহ করে নিতে হবে।

Sajekসাজেকে যাওয়া পর্যটকের সংখ্যা খুবই কম। হাতেগোনাই বলা যায়। প্রচার ও যোগাযোগ ব্যবস্থাই মূলত এর কারণ। টাইগার টিলার চেকপয়েন্ট হচ্ছে সাজেক যেতে পথের চতুর্থ চেকপয়েন্ট। নিরাপত্তার জন্য এ ধরনের চেকপয়েন্টে দিতে হবে পরিচয়সহ নানা তথ্য। নিতে হবে ছাড়পত্র। এগুলো অবশ্যই সময়সাপেক্ষ কাজ। সামরিক বাহিনীতে বড় কেউ পরিচিত থাকলে অথবা কোনো অফিসারের লিখিত চিরকুট দেখাতে পারলে এ ধরনের কাজের জটিলতা কিছুটা কমে। আর সাজেক যাওয়া মুখের কথা নয়। যেমন দুর্গম তেমনি কঠোর নিরাপত্তা বেষ্ঠিত।

মাসালং ব্রিজের পর পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত মাসালং আর্মি ক্যাম্পটি মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে অবস্থিত। এটিই সাজেক যাওয়ার পথের সর্বশেষ আর্মি ক্যাম্প। এখান থেকেও ছাড়পত্র নিতে হবে আপনাকে। পাহাড়ি সেনা ক্যাম্পগুলোতে ছবি তোলা নিষেধ।
মাসালং ক্যাম্পের পরেই দেখা মিলল মাসালং বাজারের। এই পাহাড়গুলোতেই বাস করে সাধারণ অথচ অসাধারণ পাহাড়ি মানুষ। আপাত দৃষ্টিতে দেখে মনে হয় এরা খুবই চুপচাপ, তবে হাত বাড়িয়ে দিলে তারাও হাত বাড়িয়ে দেবে। এই পাহাড়ি জনপদগুলোয় ম্যালেরিয়ার ভয় আছে। তবে ভরসার ব্যাপার এই যে, সারা দেশের তুলনায় এখানে ম্যালেরিয়ার ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে।

সকাল সাতটায় রওনা দিলেও সাজেক পৌঁছতে দুপুর গড়িয়ে যাবে। কারণ, বর্তমানে খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যেতে চান্দের গাড়িতে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগে, কিন্তু বাকি সময়টা লাগে পাহাড়ি এবড়ো থেবড়ো পথ আর বিভিন্ন চেক পয়েন্টে। আর রাস্তার যা অবস্থা তাতে চান্দের গাড়ির চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারে না। সাধাণত ত্রিশ চল্লিশজন মানুষ এই চান্দের গাড়িতে ওঠে আর এ কারণে গাড়িতে ঝাঁকিও কম হয়।

সাজেকে ঢোকার মুখের খাঁড়া পথটি ধরে উঠে গেলেই চোখে পড়বে এর প্রথম পাড়াটি। পাড়াটির নাম রুইলুই। সমতল থেকে এই পাড়ার উচ্চতা ১৮শ’ ফুট। এই সাজেকেই অবস্থিত বিজিবির সর্বোচ্চ বিওপি ক্যাম্প। এখানে রিপোর্টিং করলেই আপাতত সাজেক আসার ছাড়পত্র নেয়া শেষ। এই দুর্গম পাহাড়ি জনপদে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক নেই। ক্যাম্পের পাশের পাহাড়টির উপর আছে কংলক পাড়া।

পাহাড় ছাড়িয়ে চোখ চলে যায় দূর দিগন্তে। তবে এই দৃশ্য ঋতুভেদে একেক রকম। সাজেক বেড়াতে আসার উপরই নির্ভর করে তাকে কেমন দেখা যাবে। ক্যাম্পের বাইরের দৃশ্য অসাধারণ সবুজ। এই বিশাল সবুজের পুরোটাই বাঁশবন।

সাজেকে পাহাড়ের উপর পানির উৎস হচ্ছে পুরোটাই প্রাকৃতিক। রুইলুই পাড়ার এক পুকুরে জমা হচ্ছে পাহাড়ি জঙ্গলের গাছের শেকড় থেকে চুঁইয়ে আসা পানি। সেই  পানি ভাগাভাগি করে ব্যবহার করে বিজিবি সদস্যসহ পাড়ার অধিবাসীরা। পাহাড়ের নিচুতে এরকম কয়েকটি পানির ছোট ঝরনা এলাকার পানির চাহিদা মিটিয়ে আসছে। পাহাড়ের গ্রামগুলোর হেডম্যানরাই হচ্ছে সেখানের হর্তাকর্তা। পাহাড়ে এলে হেডম্যানরাই সব ধরনের সহযোগিতা করে থাকে।

সাজেকের পাহাড় চূড়া থেকে মিজোরামের লুসাই পাহাড়ের অদ্ভুত দৃশ্য দেখে সব কান্তি ও কষ্ট নিমিষেই ম্লান হয়ে যায়। প্রকৃতির এতো সুন্দর রূপও হতে পারে! সাজেকের এই প্রাকৃতিক রূপের সাথে পাংখোয়া ও লুসাই আদিবাসীদের বৈচিত্রময় জীবনযাত্রা দেখে আরও বিস্মিত ও হতবাক হতে হয়। উঁচু মাচার ঘরে গাছের গুড়ি কেটে বানানো সিঁড়ি, ঘরের ছাউনী বাঁশের পাতার। ঘরের সামনে ফুলের বাগান, মাঝে মাঝেই ক্যাকটাস ও অর্কিডের গাছ। ঢালুতে ২/৩ শ’ বছরের পুরানো বিশাল বিশাল গাছ।

বাড়ির একটু দূরেই অসংখ্য কমলা বানান। এরই মাঝে অসংখ্য ওষুধি গাছ-গাছড়া। একেবারে ঢালুতে যেদিকে তাকানো যায় শুধু বাঁশ আর বাঁশ। ঘর থেকে বেড়িয়ে কেউ পানি আনতে যাচ্ছে, কেউ বা জুম ক্ষেতে যাচ্ছে। পরনে তাদের জিন্সের প্যান্ট, গায়ে হাতা কাঁটা সট গেঞ্জি, ব্রা, শার্ট, স্টাট ইত্যাদি।
সাজেকে বসবাস করে লুসাই, পাংখোয়া, ত্রিপুরা ও চাকমা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি।

১৮৮৫ সালে স্থাপিত সাজেকের প্রথম পাড়া রুইলুইতে মাত্র সাড়ে তিনশ’ মানুষের বসবাস করতো। এখানে বেশিরভাগ মানুষ লুসাই জনগোষ্ঠির। তাছাড়া পাংখোয়া ও ত্রিপুরা অধিবাসীরাও আছে কয়েক ঘর। এদের জীবন খুবই কঠিন। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮শ’ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই পাড়াটির মানুষদের সবকাজ নিজেদেরই করতে হয়। নেই সহজ পানির ব্যবস্থা, নেই স্কুল, নেই হাসপাতাল, নেই বিদ্যুৎ, নেই বাজার, নেই নাগরিক কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা। শুধু আছে নয়ন জুড়ানো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এর মধ্যেই বেড়ে ওঠে তারা। একসময় যাযাবর প্রকৃতির ছিল লুসাই জনগোষ্ঠির লোকেরা।

কোনো এক জায়গায় ৪ থেকে ৫ বছরের বেশি তারা থাকতো না। তারা ছিল তুখোড় শিকারী। লুসাই পর্বতে তাদের আদি নিবাস ছিল বলে তাদের নাম হয়েছে লুসাই। তবে বর্তমানে লুসাইরা উন্নত জীবন-যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। বেশিরভাগ লুসাইরা ধর্মান্তরিত হয়ে খৃস্টান ধর্ম গ্রহণ করেছে। এতে তারা তাদের আদি সংস্কৃতি থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়লেও পাশ্চাত্যের প্রভাব তাদের জীবনধারাকে উন্নত করেছে।

রুইলুই পাড়ার বিজিবি ক্যাম্পকে বায়ে ফেলে উচুঁ-নিচু এবড়ো-থেবড়ো পাহাড়ি চিকন পথ ধরে এগোতে হয় কংলক পাড়ার দিকে যেতে। রুইলুই থেকে কংলক ২ কিলোমিটারের পথ, আর এই পথে সাধারণত গাড়ি চলে না। আয়তনে মেহেরপুর জেলার তিনগুণ। সাজেকে আছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল যার আয়তন ৪ লক্ষ একর। সাজেক একসময় এতোই গহীন এলাকা ছিল যে মানুষের আসা-যাওয়া ছিল না বললেই চলে। তাই বইপত্রে বা অন্য কোথাও সাজেক সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায় না।

সাজেকের কংলক পাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮শ’ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। এখানের জীবন সম্পূর্ণই অন্যরকম। বাইরের লোক বা পর্যটকের দেখা এরা পায়নি বললেই চলে, তাই বাইরের লোক এখানে এক কথায় ভিন্ন জগতের মানুষ। ভারতের মিজোরাম সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর দুর্গম এই পাহাড়ি এলাকায় লুসাই ও পাংখোয়া পল্লীগুলো অবস্থিত। বর্তমানে এই জাতিগোষ্ঠির সংখ্যাও বিলুপ্তির পথে।

১৯৮১ সালের আদমশুমারী মতে এরা ছিল মাত্র ৬৬২ জন। কংলক পাড়ায় এলে প্রথমেই যে ফলকগুলো চোখে পড়ে সেগুলো স্মৃতিফলক। লুসাই সম্প্রদায়ের যারা গত হয়েছেন তাদের স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তাদের প্রিয়জনেরা এই ফলকগুলো তৈরি করেছে। এখানে স্বচ্ছল ও দরিদ্র এই দুই শ্রেণীর মানুষের বসবাস। মিজোরামের সাথে যোগাযোগ সহজ হওয়ায় স্বচ্ছলেরা সেখানেই লেখাপড়া, ব্যবসা-বাণিজ্য ও আত্মীয়তা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

১০টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির বসবাস সত্বেও সাজেকের এই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির জীবন যাপন একেবারেই ভিন্ন। রাঙামাটি জেলার সাজেক ইউনিয়নের রুইলুই, কংলক, শিয়ালদাই, বেথলিং, তৈচৈ, ওল্ড লংকর-নিউ লংকর মৌজায় পাংখোয়া ও লুসাই উপজাতিরা বসবাস করে। এই মিজোদের চাল-চলন, আচার ব্যবহার উঠা-বসা সবই ভারতের মিজোরাম রাজ্যের সংস্কৃতির সাথে। এখানকার অধিকাংশ মানুষ গান শোনে ইংরেজি ও মিজো ভাষায়। কথা বলে মিজো ও ইংরেজি ভাষায়। লেখাপড়া ইংরেজিতে। মিজোদের নিজস্ব অক্ষর ইংরেজিতে। ওয়েস্টান কালচারে অভ্যস্ত খৃস্টান ধর্মাবলম্বী লুসাই, পাংখোয়াদের পোশাক-পরিচ্ছেদ, আচার-ব্যবহার, মিজো ও ইংরেজিতে কথা বলার ধরন দেখে মনে হবে সাজেক উপত্যাকা যেন বাংলাদেশের বুকে একখ- ইউরোপ। Sajek

লুসাই পাহাড়ে জন্ম নিয়েছে অনেক নদী। এদের মধ্যে কর্ণফুলী একটি। লুসাইয়ের নিচের সমতলে অনেক ছোট ছোট পাড়া আছে। সেখানেও বাস করে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির মানুষ। পাহাড়ের নিচে হাঁটাপথ ছাড়া যাতায়াতের কোনো ব্যবস্থা নেই। লুসাইয়ের দুর্গম পাহাড় চূড়ায় খুব সুন্দর একটি বিশ্রামাগার রয়েছে। সাজেকের মতো দুর্গম এলাকায় এটি অভাবনীয়ই বটে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার সাজেক ভ্যালি হতে পারে বাংলাদেশের পর্যটনের এক বিশাল আকর্ষণ। শুধু দরকার কর্তৃপক্ষের সামান্য পদক্ষেপ ও যাতায়াতের সহজ সুবিধা।

রাঙামাটিতে নিরিবিলি থাকতে চাইলে পর্যটন মোটেলে ভালো। এখানে শুধু ডাবল রুম রয়েছে। প্রতি রুমের ভাড়া ৮০৫ টাকা। আবার এসি ডবল রুমের ভাড়া এক হাজার ৭২৫ টাকা। এছাড়া বেসরকারি হোটেলও আছে। পৌরসভায় অবস্থিত সুফিয়া হোটেল, রিজার্ভ বাজারের গ্রিন ক্যাসেল, কলেজ গেইটের মোটেল জজ ও চম্পক নগরের গেস্ট হাউস বনরূপা টুরিস্ট ইনের যেকোনো একটিতে থাকা যায়।

এসব হোটেলে সিঙ্গেল রুমের ভাড়া সাড়ে ৪শ’ টাকা, ডবল রুম ৮শ’ টাকা এবং এসি রুমের জন্য দিতে হবে এক হাজার ২শ’ থেকে দেড় হাজার টাকা। এছাড়াও পর্যটকদের থাকার জন্য মাঝারি মানের অল্প টাকার হোটেলও রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল দিগনিটি, সমতা বোর্ডিং, হোটেল অনিকা, হোটেল আলবোমা ও হোটেল সৈকত অন্যতম।

পর্যটন মোটেলে থাকতে চাইলে ০৩৫১-৬৩১২৬ নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে। এছাড়া সুফিয়া হোটেল ০৩৫১-৬২১৪৫, গ্রিন ক্যাসেল ০৩৫১-৬১২০০, মোটেল-০৩৫১-৬৩৩৪৮ ও বনরূপা টুরিস্ট ইনে থাকতে চাইলে ০১৭৩২৭৩৭৫২২ নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে।
সাজেক ছাড়াও কাপ্তাই হ্রদ, ঝুলন্ত সেতু, সুভলং ঝরনা, পেদা টিং টিং, সাংফাং রেস্টুরেন্ট, চাকমা রাজার রাজবাড়ি, রাজ বন বিহার, বনরূপা, রিজার্ভ বাজার, তবলছড়ি ও আসাম বস্তির ক্ষ্রদ্র নৃগোষ্ঠির পাড়া, বাজার ও হস্তশিল্পের দোকানে।

তবলছড়ির পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ঝুলন্ত সেতু ঘুরে দেখতে ভুলবেন না। যেতে পারেন বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান রাজবন বিহার। দেখতে পারেন রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট জাদুঘর। এছাড়া ফুরামোন পাহাড়, বরকলের ফালিাঙ্গ্যা চুগ (পাহাড়), বালুখালীর কৃষি খামার ও মোন ঘর শিশু সদন দেখতে পারেন।

প্রতি বছর এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক উৎসব উদযাপন করে থাকে। এদিকে রাঙামাটিতে অনেক আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট রয়েছে যেগুলো অসংখ্য পর্যটকের অজানা। এর মধ্যে অন্যতম

রাঙামাটি শহর থেকে নৌপথে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট এলাকায় স্বচ্ছ জলরাশিবেষ্টিত ছোট একটি দ্বীপে রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আবদুর রউফ স্মৃতিসৌধ। স্মৃতিসৌধের চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের বিমোহিত করে। সম্প্রতি নির্মাণ করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আবদুর রউফের ভাস্কর্য। সেখানে তুলে ধরা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠের জীবনী। আসা-যাওয়ার পথে পাহাড়বেষ্টিত ওই স্থানে ঘুরতে পারেন।

রাঙামাটিতে আসতে পারেন যেকোনো ঋতুতে। প্রতি ঋতুতে রাঙামাটির রূপ বদলায়। সাজে অপরূপ সাজে। আর তার এ সাজ সবাইকে মুগ্ধ করবে। তাইতো রাঙামাটিকে একবার দেখে কোনো দিনই তৃপ্তির ঢেঁকুর ওঠে না।

লেখক: পরিব্রাজক ও গবেষক

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer