Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৪ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

জাবির ছাত্রলীগ সভাপতি-সেক্রেটারিকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা

জাবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০১:০১, ৩১ জানুয়ারি ২০২০

প্রিন্ট:

জাবির ছাত্রলীগ সভাপতি-সেক্রেটারিকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি মো জুয়েল রানা এবং সেক্রেটারি আবু সুফিয়ান চঞ্চলকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে শাখা ছাত্রলীগের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। বৃহস্পতিবার বেলা ১২ টায় বিশ্ববিদ্যালয় ট্রান্সপোর্ট চত্ত্বর থেকে ৩০-৪০ টি মোটরসাইকেলে শাতধিক নেতার্কমী অংশগ্রহণে একটি মিছিল ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে।

সভাপতি মোঃ জুয়েল রানা নিজ হল আ ফ ম কামাল উদ্দিন হল ছাড়া অন্য সকল হলের নেতাকর্মীরা এই মিছিলে অংশগ্রহণ করে। জাবি ছাত্রলীগের বর্তমান অচলাবস্থা সমাধান এবং সংগঠনকে গতিশীল করার জন্যে অতিদ্রুত বর্তমান কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন কমিটি করে দেয়ার আহবান জানান বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সকল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। পাশাপাশি বর্তমান কমিটির সভাপতিকে বাদ দিয়ে তারা ছাত্রলীগের নিয়মিত কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা করেন।

গত, ২০১৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন সাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে মো জুয়েল রানাকে সভাপতি এবং  আবু সুফিয়ান চঞ্চলকে সেক্রেটারি করে এক বছর মেয়াদী জাবি ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০১৭ সালের ২৮ এপ্রিল তা পূর্ণাঙ্গ করা হয়। কিন্তু এক বছরের কমিটির বর্তমান বয়স চার বছর হতে চলছে। এদিকে সেক্রেটারি আবু সুফিয়ান চঞ্চল ২০১৯ সালের আগষ্ট মাসে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যান। আজ অবধি তিনি ফিরে না আসায় ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির কার্যক্রম স্থবির হয়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি, কমিটিতে শিবিরের স্থান, হল কমিটি দিতে না পারা, গ্রুপিং, অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ বিভিন্ন কারণে নেতাকর্মীদের অসন্তোষ আর হতাশা সৃষ্টি হয়েছে নেতা-কর্মীদের মাঝে। এদিকে ৪১ ব্যাচ (২০১১-১২ সেশন) এবং ৪২ ব্যাচের ( ২০১২-১৩ সেশন) অধিকাংশ নেতার্কমীরা তাদের শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করেছে। হল কমিটি দিতে না পারায় ছাত্রলীগের ত্যাগী অনেককেই কোন ছাত্রলীগের পদবী ছাড়া তাদের শিক্ষা জীবন শেষ করতে হয়েছে। এছাড়া বর্তমান কমিটির অধিকাংশ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ চাকরীতে যোগদান করেছেন। ফলে বর্তমান ছাত্রলীগের বিভিন্ন সাংগঠনিক কার্যক্রমে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে সঠিক নেতৃত্বের অভাবে সংঘর্ষে জাড়িয়ে পড়ছে কর্মীরা যা ছাত্রলীগের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্য করছে।

এদিকে ২৮ জানুয়ারি জাবি ছাত্রলীগ সভাপতি জুয়েল রানাকে বাদ দিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সাথে দেখা করেন নেতাকর্মীরা। এসময় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনী প্রচাণায় ব্যস্ত থাকায় দেখা করতে পারেননি। নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় কমিটিকে জাবি ছাত্রলীগের বর্তমান পরিস্থিত সর্ম্পকে অবহিত করে। ছাত্রলীগের মন্থর গতিকে গতিশীল করার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির হস্থক্ষেপ কামনা করেন। আগামী পহেলা ফেব্রুয়ারী ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পরে জাবি শাখা নেতাদের সাথে বসে আলোচনার মাধ্যমে ফেব্রুয়ারী মাসের মধ্যে এ সংকট সমাধান করা হবে বলে আশ্বাস দেয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি।

ছাত্রলীগ সভাপতি-সেক্রেটারিকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করার ব্যাপারে ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফফান হোসেন আপন বলেন, “তিনি (জুয়েল রানা) ছাত্রলীগকে ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার করতেছেন। তার কথার কাজে কোন মিল নাই। নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্যে যাকে যখন যে ভাবে ব্যবহার করা দরকার সেভাবে ব্যবহার করতেছে। আমরা তো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আর্দশ ধারণ করে ছাত্রলীগ করি। জুয়েল ভাই বর্তমানে ক্যাম্পাসে না থাকাই উত্তম। আমরা তার সাথে আর কোন মিছিল মিটিং এ অংশ গ্রহণ করবো না।”

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অভিষেক মন্ডল বলেন, “এই কমিটি মেয়াদ উত্তীর্ণ। এদিকে সেক্রেটারি আবু সুফিয়ান চঞ্চল ভাই অনেক আগে ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যান যা একটি সংকটে পরিণত হয়েছে। হল কমিটি না হওয়া সহ বিভিন্ন কারণে আমাদের জুনিয়রদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এ সংকট সমাধানের জন্যে কেন্দ্রেীয় কমিটির কাছে আবার যাব।”

জাবি শাখা ছাত্রলীগের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক তারেক হাসান বলেন, “ছাত্রলীগের জুনিয়র নেতাকর্মীদের মধ্যে সংশয় প্রকাশ পেয়েছে যে, জুয়েল ভাই সভাপতি হিসেবে ব্যর্থ। সে আর এ কমিটিতে থাকার কোন যৌত্তিক দাবি রাখে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সে যেন ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যায়। কেন্দ্র ঘোষিত কোন কর্মসূচিতে তাঁর সাথে আর আমরা অংশগ্রহণ করবো না।  চঞ্চল ভাই যেমন চলে গেছে সবাইকে বিপদে ফেলে দিয়ে জুয়েল ভাই একই কাজ করবে। সংগঠনকে গতিশীল করার জন্যে আমি নতুন নেতৃত্ব কামনা করছি।”

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক এম মাইনুল হুসাইন রাজন বলেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের র্দীঘ দিনের অচলাবস্থা দূর করার জন্যে কাজ করা শুরু করেছে সকল হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। আমাদের বিশ্বাস সত্যিকারের মুজিববাদ এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের প্রশ্নে ছাত্রলীগের সকল পর্যায়ের কমীরা ক্রিয়ানক হিসেবে কাজ করবে।”

ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা ব্যাপারে সভাপতি মো জুয়েল রানার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমি সবার সাথে কথা বলবো।”

আজ শোডাউন শেষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর আ. স. ম. ফিরোজ-উল-হাসানের সাথে দেখা করে ছাত্রলীগ নেতৃকর্মীরা। ছাত্রলীগের কমিটি দেয়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এখতিয়ার। তবে বর্তমান পরিস্থিতি উপর মহলে জানানোর আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং তিনি সবাইকে শান্ত থাকার আহবান জানিয়েছেন বলে ছাত্রলীগ নেতৃকর্মীরা জানান।

গতকাল সভাপতি জুয়েল রানাকে ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় উপার্চায অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের সাথে দেখা করেন শাখা ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ। এসময় তারা ছাত্রলীগের বর্তমান পরিস্থিতি সর্ম্পকে উপার্চাযকে অবহিত করেন। উপাচার্য, সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষায় একযোগে কাজ করবেন বলে জানান। পাশাপাশি ছাত্রলীগের মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটির ব্যাপারে উচ্চ মহলে জানানো আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানা যায়।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer