ছবি- বহুমাত্রিক.কম
জয়পুরহাট: জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে পাঁচ শত বছরের ঐতিহ্যবাহী গোপীনাথপুর মেলা জমে উঠেছে। প্রতি বছর দোল পূর্ণিমাতে উপজেলার গোপীনাথপুরে এই মেলা বসে। করোনার কারণে গত দুই বছর মেলা বন্ধ থাকলেও এ বছর উৎসব মুখর পরিবেশে মেলা বসেছে। মেলায় প্রধান আকর্ষণ থাকে ঘোড়ার মেলা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিযোগীতার ঘোড়া ক্রয় বিক্রয়ের জন্য মেলায় আসে ক্রেতা বিক্রেতারা। ঘোড়ার দৌঁড় দেখার জন্য উৎসুক জনতা ভিড় জমায় মেলায়। তাছাড়া গরু, মহিষ ক্রয় বিক্রয় চলে মেলা শুরু হওয়ার পাঁচদিন পর্যন্ত চলে।
স্থানীয় ও মেলা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর দোল পূর্ণিমায় পাঁচ শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই মেলা বসে। দোল শুরুর আগে থেকেই মেলায় বিভিন্ন দোকান পাট আসতে শুরু করে। সারাদেশের ঘোড়া বেচাকেনার একমাত্র মেলা এটি। মেলাটি প্রায় মাসব্যাপি চলে। তবে এবার মেলায় বিনোদন মূলক যাত্রা, সার্কাসের অনুমোদন দেয়নি প্রশাসন। মেলায় ঘোড়া, গরু, মহিষ, কাপড়, জুতা, ছাতা, গৃহস্থালি সামগ্রী, মসলা, কাঠের ও প্লাস্টিকের আসবাব, কম্বল, মিষ্টান্ন সহ নানা রকমের দোকানপাট বসে। মেলায় দুই থেকে চার কেজি একটি মাছ আকৃতির মিষ্টান্ন’র আকর্ষণ ধরে রেখেছে দীর্ঘ দিন থেকে। এসব দোকান রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মেলায় আসে। তাঁরা দোলপূর্ণিমা শুরুর দুই দিন আগেই এখানে এসে দোকানঘরের বরাদ্দ নেন।
মেলায় ঢাকা থেকে আসা কম্বল ব্যবসায়ী রিপন হোসেন বলেন, ‘করোনার কারনে গত দুই বছর এই মেলায় ব্যবসা করতে পারিনি। ২০১৯ সালে মেলায় আসলেও করোনার কারনে ব্যবসা না করেই ফিরে যেতে হয়েছে। এবার আশা করছি ব্যবসা ভাল হবে’। মেলায় ঘোড়া কিনতে আসা ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার আব্দুল মজিদ বলেন, ‘প্রতি বছর এই মেলার জন্য আগ্রহে থাকি। আমি মেলায় ঘোড়া কিনতে এসেছি। একটি ঘোড়ার দাম দুই লক্ষ হাঁকার পরও কিনতে পারিনি। তবে এবার ঘোড়া কিনেই বাড়ি ফিরব’।
রংপুর থেকে আসা এক ঘোড়া বিক্রেতা বলেন, ‘আমি এই মেলায় ঘোড়া বিক্রয়ের জন্য প্রায় প্রতি বছরই আসি। এবার চারটি ঘোড়া নিয়ে এসেছি দুইট তিন লক্ষ টাকায় বিক্রয় করেছি। বাকি গুলোও বিক্রি হবে আশা করি’। মেলায় এবার একটি ঘোড়ার সর্বোচ্চ দাম হাকা হয়েছে সাড়ে পাঁচ লক্ষ টাকা। ঘোড়াটির মালিক মজিবর রহমান বলেন, ‘ঘোড়াটি ভারতীয় তাজী ঘোড়া। এর বয়স সাড়ে চার বছর। এটি দ্রুত দৌড়াতে পারে। লাল-সাদা ডোরাকাটা ঘোড়াটির যত্ন নিজেই নেই’।
গোপীনাথপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘গোপীনাথপুর মেলাটি বিগত পাঁচ শত ১৩ বছর থেকে চলছে। এটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম মেলা। মেলায় কোন ধরনের অপ্রিতীকর ঘটনা যেন না ঘটে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সাথে সমন্বয় রেখে আমরা কাজ করছি। মেলায় স্বাস্থ্য বিধি প্রতিপালনের জন্য নিয়মিত প্রচার এবং মাইকিং করা হচ্ছে।
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইদুর রহমান বলেন, ‘এই মেলায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা আগমন করেন। মেলার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সার্বক্ষনিক পুলিশি টহল চলমান আছে। কোন অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটতে দেওয়া হবে না’।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস.এম হাবিবুল হাসান বলেন, ‘গোপীনাথপুরের মেলাটি একটি প্রাচীন মেলা। এই মেলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক টিম কাজ করছে। নিরাপত্তার জন্য বিনোদনমূলক যাত্রা, সার্কাসের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। মেলাটি আমামরা নজরদারির মধ্যে রেখেছি’।
বহুমাত্রিক.কম