Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৫ ১৪৩১, শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

জমি অধিগ্রহণ জটিলতা:কাঙ্খিত মূল্য পাননা ক্ষতিগ্রস্তরা

শেখ হেদায়েতুল্লাহ, খুলনা

প্রকাশিত: ১৭:২৯, ২৩ জানুয়ারি ২০১৯

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

জমি অধিগ্রহণ জটিলতা:কাঙ্খিত মূল্য পাননা ক্ষতিগ্রস্তরা

ফাইল ছবি

খুলনা : সরকারী-বেসরকারী যে কোন উন্নয়নমূলক কাজের জন্যেই জমির প্রয়োজন হয়। আর জমির জন্যে অধিগ্রহণের বিকল্প নেই। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার অধিগ্রহণকৃত জমির মূল্য পরিশোধ করে থাকে। কিন্তু প্রায়শই জমির মালিকরা যথার্থ মূল্য পায় না বলে অভিযোগ ওঠে।

কারণ, জমি হারানো মানুষেরা ক্ষতিপূরণের টাকায় আবারও বসতি গড়ে তুলতে পারেন না। বেসরকারি পর্যায়ে জমির দাম হু হু করে বাড়ছে। আবার নিয়মের বেড়াজালে পড়ে পুরো অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ করতে বছরের পর বছর সময় লেগে যায়, পাশাপাশি জমির দাম বাড়তে থাকে। তখন ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে অল্প টাকায় জমি কেনা দু:সাধ্য হয়ে পড়ে। মানুষ ক্ষুব্ধ হয়। শেষ পর্যন্ত ক্ষোভ উন্নয়ন কর্মকান্ডের বিরোধিতায় পর্যবসিত হয়। এসব নিরসনের জন্যে নাগরিক নেতৃবৃন্দের অভিমত হচ্ছে, অধিগ্রহণ আইন সহজতর করতে হবে; ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বাড়াতে হবে এবং ক্ষতিপূরণ দ্রুততম সময়ে জমির মালিকদের পরিশোধ করার ব্যবস্থা করতে হবে।

অনুসন্ধনে জানা যায়, দেশের অন্যান্য স্থানের মতো খুলনা জেলায় বর্তমানে ২৪টি উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। শুধুমাত্র অধিগ্রহণ জটিলতায় এরমধ্যে একাধিক প্রকল্প বছরের পর বছর আটকে আছে। আবার কোন কোনটির কাজ শুরু হয়েছে; কোন কোনটি অর্থ ছাড়ের অপেক্ষায় রয়েছে। আবার কোনটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

খুলনা অঞ্চলে জমি অধিগ্রহণ জটিলতা নিয়ে প্রকল্পের বিরোধিতার সবচেয়ে বড় উদাহরণ রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপ-বিদ্যুৎ প্রকল্প। এই প্রকল্প এলাকার জমির মালিকেরা ক্ষতিপূরণের টাকা নিয়ে অসন্তুষ্টি ঘিরেই বিরোধিতা শুরু করেছিল। যা এখন জাতীয়-আন্তর্জাতিক ইস্যু। এখন ওই এলাকার রামপাল উপজেলাধীন খানজাহান আলী বিমান বন্দর প্রকল্পটির জমি অধিগ্রহণ জটিলতা এখনও নিরসন হয়নি। একটি গ্রামের বাসিন্দারা অধিগ্রহণের অর্থ নিয়ে তাদের অসন্তুষ্টির কথা জেলা প্রশাসনকেও জানিয়েছে। অধিগ্রহণ কার্যক্রম সম্পন্ন না হলেও প্রকল্পের প্রস্তাবিত মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে।

খুলনা-মংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে জমি হারানো মানুষগুলোও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন। বিক্ষুব্ধদের অনেকেরই শুধুমাত্র মাথা গোঁজার ভিটাটুকু ছাড়া কিছু ছিল না। ফলে জমি হারানো মানুষগুলো প্রয়োজনীয় অর্থ পাওয়ার জন্যে আদালতের দ্বারস্থও হন। খুলনা শহরের মধ্যে শিপ-ইয়ার্ড এলাকার সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পও আটকে ছিল দীর্ঘদিন।

ক্ষতিপূরণের অর্থ প্রদান সংক্রান্ত আইনটি ১৯৮২ সালের। তখনকার ক্ষতিপূরণ নীতিমালা এবং নির্দিষ্ট এলাকার জমি কেনা-বেচার বাজার দরের গড় করে ক্ষতিপূরণের অর্থ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু যে এলাকাটি বসতি এবং সাধারণত: কেনা-বেচা হয় না, সেখানে দাম নির্ধারিত হয় পুরনো সাবেকী কেনা-বেচার তথ্যের ভিত্তিতে, এতে দাম হয় খুবই কম। আর সেসব জায়গায় বিরোধিতাও বেশী হয়।

জানতে চাইলে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, উন্নয়ন কর্মকান্ডে সরকারি ও বেসরকারিভাবে জমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষা করে সামাজিকভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এজন্য সামাজিক ও পরিবেশ সুরক্ষানীতি প্রয়োজন। যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে, তাদেরকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপুরণ দিতে হবে। পাশাপাশি অর্থপ্রাপ্তির দীর্ঘসূত্রিতাও পরিহার করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাওনা মিটিয়ে দিতে হবে।

জানতে চাইলে নাগরিক নেতা অ্যডভোকেট কুদরত-ই-খুদা বলেন, সরকারী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন যেমন জরুরী তেমনি জমি-হারানো ব্যক্তিদেরকেও পুনর্বাসন করাও জরুরী। বসতবাড়ি থেকে মানুষের চলে যাওয়াটা আবেগী ও বৈষয়িক ক্ষতি। এই দুই ক্ষতিই উপশমের ব্যবস্থা থাকতে হবে। আর অধিগ্রহণের অর্থ দ্রুত পরিশোধ এবং উৎকোচ দেওয়া বা যেকোন ধরণের হয়রানি হতে জমিহারানোদের মুক্তি দিতে হবে। এজন্যে প্রয়োজনে নতুন আইন তৈরি করা যেতে পারে। 

এ বিষয়ে খুলনা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি, এলএ) মো: ইকবাল হোসেন বলেন, ২০১৭ সালের আগে অধিগ্রহণ করা জমির মূল্য ১৯৮২-এর ৮(এ) ধারা অনুযায়ী জমির বাজারমূল্য নির্ধারণ করে পরিশোধ করা হচ্ছে। ২০১৭ সালের নতুন সংশোধিত আইনের পর যে সমস্ত জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, সেই জমি নতুন আইনে বাজার মূল্য নির্ধারণ করে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer