-লেখক
হে মানুষ, আমি জানি তুমি এখন বড়ই বিচলিত। আমি বাঁচবার জন্য তোমাকে জীবিত চাই আর তুমি আমাকে মেরে বাঁচতে চাও- এই বাঁচা মরার লড়াইয়ে কে জয়ী হবে? আমি, না তুমি?
আমিতো অতি ক্ষুদ্র জীব! আমি জীব কিনা তা নিয়েও বিতর্কও আছে। সে বিষয় এখন নাই বা কিছু বললাম। শুধু বলতে যাই যে আমার অস্তিত্ব নিয়ে যেসব hypothesis আছে, তাতে যদি তুমি সমর্থন করো তবে তোমার বহু আগে আমার জেনেটিক উপাদান RNA, পৃথিবীতে এসেছে। কিন্তু দেখ আমি কত অচল, শক্তিহীন?
সেই RNA নিয়েও আমি কিছুই করতে পারি না যতক্ষণ না আমি তোমায় খুঁজে না পাই। তোমার দেহের ভিতরে আমি প্রবেশ করলে আমি আমার প্রাণ পাই, আমার জেনারেশন বৃদ্ধি করি। তোমার machinery আমাকে ব্যবহার করে বাঁচতে হয়; আবার তোমার immunity system -এর ভয় নিয়ে আমায় সারাক্ষণ থাকতে হয়। বোঝো তো আমার বাঁচা-মরার লড়াইটা কতোখানি কঠিন? শুধু মাত্র তিরিশ হাজার base pair এর RNA নিয়ে আমাকে তোমার মত তিনশো কোটি genome সাইজের মানুষ কে কাবু করতে হয়। তোমাকে হারানো কি এত সহজ?
আমি আজ সত্যিই উদ্বিগ্ন! আমার জন্য তোমার দিন-রাত্রির চিন্তা, পরিশ্রম, আশা, হতাশ, অনিশ্চয়তা!আমিই তোমাদের গবেষণা, আলোচনা, সমালোচনার প্রধান বিষয়বস্তু! প্রতিদিন আমাকে নিয়ে তোমাদের তথ্য, তত্ত্ব, অভিমত, বিশ্লেষণ, প্রকাশিত আর প্রচারিত হচ্ছে! সারাবিশ্ব আজ সকল- জাতি, ধর্মের, বর্ণের, গোত্রের মানুষ উৎকণ্ঠিত- শুধু আমাকে নিয়ে! আমাকে, শনাক্ত করো, উন্মোচন করো, আমার কাছ থেকে বাঁচার উপায় খুঁজে বের কর- আমাকে প্রতিরোধ করো – এটাই তো তোমার লড়াই। তাতে আমার কোনও আপত্তি নাই।
শুধু অনুরোধ করছি- এই বিষয়গুলিকে নিইয়ে তোমরা প্রতিযোগিতায় মেতে উঠো না। আমাকে নিয়ে নিরবিচ্ছিনতা, বিশৃঙ্খলা, হাহাকার, রাজনীতি, দুর্নীতির আর মূল্যহীন তর্ক-বিতর্কের বিষয় করে তুলনা। সত্যের সাথে মিথ্যাকে মিশিয়ে অতিরঞ্জিত করে অতি দ্রুত কিছু প্রকাশ করো না। তোমাদের কথা, কাজ, প্রতিশ্রুতিকে স্বচ্ছতার মধ্যে রেখো। সময় নাও, সময় দাও, ধৈর্য ধরো; সময়ই তোমাকে আমার সম্পর্কে সব জানিয়ে দেবে।
তুমি মানুষ – তুমি বিজ্ঞান, বুদ্ধি দিয়ে দিয়ে অনেক কিছু করার ক্ষমতা রাখো। সৃষ্টিকর্তা এই ক্ষমতা তোমাকেই শুধু দিয়েছেন। আর আমি? পৃথিবীর বয়সের বিচারে তোমার বড়ো হয়েও জ্ঞানে বিজ্ঞানের কিছুই জানিনা। আমি শুধু সৃষ্টিকর্তার নির্দেশ মেনে চলতে শিখেছি। আমি সীমালঙ্ঘন করতে পারি না, আমি অহংকারী হতে জানি না। আমি অবিবেচক না, আমি বিভেদ সৃষ্টি করি না। বড়ো আফসোস! তুমি এত বড় হয়েও নিজের মূল্য বোঝো না! তুমি এমনি ক্ষুদ্র হয়ে যাও যে তা বোঝানোর জন্য আমার মত অতি ক্ষুদ্র “আমিকে” তোমার ভিতরের “আমি”তে প্রবেশ করতে হয়। এরপরও তোমার জন্য আমি শুভ কামনা করি, যেন তোমার বোঝার ক্ষমতা আসে, তোমার জাগরণ ঘটে। জয় যেন শুধু তোমারিই হয়।
তোমার সে জয়ের প্রত্যাশায় রইলাম ‘COVID-19’
লেখক: বিজ্ঞান গবেষক, ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র।
বহুমাত্রিক.কম