Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৩ ১৪৩০, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

চামড়ার বাজারের ধ্বস ঠেকানো জরুরি

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

প্রকাশিত: ১৬:৪১, ১৩ আগস্ট ২০১৯

প্রিন্ট:

চামড়ার বাজারের ধ্বস ঠেকানো জরুরি

ছবি- সংগৃহীত

মনে করেছিলাম এবারের ঈদ মোটামোটি ভালোভাবেই কাটছে। ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়, ঘরে ফেরা যাত্রীদের যানজটে পড়তে হয়েছে। তবে এগুলো প্রতি ঈদেই এখন মোটামোটি স্বাভাবিকভাবেই মেনে নিয়েছে এর ভুক্তভোগীরা। সেইসাথে এখন এর সাথে একটি সমস্যা নতুনভাবে বড় হিসেবে যুক্ত হয়েছে। আর সেটি হলো কোরবানির পশুর চামড়া এবং চামড়ার মূল্য।

আমরা সাধারণত সবকিছু তুচ্ছ মূল্য বুঝাতে পানির দর বলে থাকি। কিন্তু বাস্তবে এখন আর সেই দিন নেই। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে দুধের দামের চেয়েও পানির দর বেশি। সেজন্যই চামড়ার মূল্য যদি বলা হয় পানির দর তাহলেও মিথ্যা বলা হবে। কারণ এখন চামড়ার কোন মূল্যই নেই। কাজেই কারোর দামের সাথে তুলনা করার কোন সুযোগই নেই। 

অথচ চামড়া একটি অতি প্রয়োজনীয় রপ্তানি পণ্য। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে চামড়ার মূল্য নিয়ে চলছে এক অন্যরকম কারসাজি। গড়ে উঠেছে নানা অবৈধ সিন্ডিকেট। সেসব সিন্ডিকেট এ সম্ভাবনাময় অথচ অতি প্রাচীন শিল্পটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনে দাঁড় করিয়েছে। আমরা দেখেছি আজ থেকে বিশ বছর আগেও একটি পূর্ণবয়স্ক পশুর চামড়ার দাম ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকার মধ্যে।

ছোট পশুর চামড়ার মূল্য সেরকম আনুপাতিক হারে চারশ-পাঁচশ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অথচ তখন মূল্যস্ফীতি আরো কয়েকগুণ কম ছিল। টাকার মূল্যমানও অনেক কম ছিল। কিন্তু বর্তমানে অন্যান্য জিনিসের বাজার মূল্যের সাথে তাল মিলালে উক্ত চামড়ার মূল্য এখন কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা হওয়ার কথা ছিল। আর ছোট পশুর চামড়া সেই অনুপাতে এক থেকে দেড় হাজারের মধ্যে হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে বিগত কয়েকবছর যাবৎ চামড়ার অল্প কিছু মূল্য থাকলেও এবছরে (২০১৯) কোরবানি ঈদের পর প্রাপ্ত চামড়ার কোন মূল্যই নেই। কেউ যেন চামড়া কিনতেই চাচ্ছে না। আমরা জানি সারাবছরে যত পশু জবাই হয়, এক কোরবানি ঈদেই তার অর্ধেকের বেশি পশু কোরবানি হওয়ায় বছরের মোট উৎপাদনের প্রায় ৬০% চামড়া এ সময়ে পাওয়া যায়। বিপত্তি এবারে এখানেই হয়েছে।

আমি আমার নিজের কোরবানি করা পশুর চামড়া কোন বেপারি কিংবা ফড়িয়ার কাছে বিক্রি করতে পারিনি। সারাদিনেও একজন বেপারিও আসেনি। শেষপর্যন্ত প্রতিবেশি এক এতিমখানায় চামড়াটি দান করেছি। জানিনা তারা আবার সেটাকে কিছু করতে পেরেছে কিনা। আমি জানতে পেরেছি আমার অনেক প্রতিবেশি এবং পরিচিতজন এমনটাই করেছেন।

অথচ কোরবানি করা পশুর মাংসের যেমন একটি অংশ গরীবদের জন্য প্রাপ্য ঠিক তেমনি কোরবানির পশুর চামড়ার পুরো মূল্যই দরিদ্র মানুষের প্রাপ্য। কাজেই চামড়ার মূল্যের যেকোন উঠতি-পড়তির ওপর গরীবের হক প্রাপ্তিতে ব্যত্যয় ঘটে। বঞ্চিত হয় তারা। কারণ অনেক গরীব-দুস্থ মানুষ রয়েছে যারা সারা বছরের এ ঈদটিকে তাদের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে গণ্য করে থাকে। তারা মাংস পাবে এবং পাবে চামড়ার মূল্য বাবদ কিছু অর্থ অনুদান হিসেবে। এগুলো দিয়ে তারা বিশেষ ধরনের কোন কাজ করবে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এবারের পর থেকে তাদের জন্য আবার নতুন করে ভাবতে হবে।

আমাদের দৈনন্দিন নিত্য ব্যবহার্য চামড়ার তৈরী জিনিসের দাম দিন দিন বেড়ে চলেছে। বাড়ছে এর কদরও। কিন্তু কি কারণে চামড়ার বাজার নিয়ে এমন ঘটনা ঘটছে তা সঠিকভাবে বের করার এখন উপযুক্ত সময়। এক সময় পাট নিয়ে বাংলাদেশে এমন ঘটনা ঘটতে দেখেছে জাতি। কিন্তু পাটের অনেক বিকল্প তন্তু আবিষ্কার হয়েছে। তারপরও এখন পাটের আবার সুদিন ফিরতে শুরু করেছে। অথচ চামড়ার অনেক বিকল্প তৈরী হলেও এখনও বিশ্ব বাজারের কোথাও চামড়ার তৈরী পণ্যের কদর কমতে দেখা যায়নি। তারপরও কেন এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প কাঁচামালের মূল্য নিয়ে এমন দুরবস্থা হবে- সেটি কারোরই বোধগম্য নয়।

চামড়ার মূল্যের বিষয়ে যে দুযেকটি প্রতিবন্ধকতার কথা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে শোনা যায় সেগুলোও গ্রহণযোগ্য কোন কারণ হতে পারে না। কোন ব্যবসায়ী ব্যবসা করবে আর তার পুরোনো বছরের বাকী পরিশোধ করবে সরকার কিংবা ব্যাংক- সেটা কোন অবস্থাতেই যৌক্তিক হতে পারে না। এখানে দেশি বিদেশি কোন চক্র যদি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে তাহলে তাদেরকে খোঁজে বের করতে হবে। কারণ চামড়ার মূল্য না পাওয়ার জন্য সারাদেশে যেভাবে বিভিন্ন স্থানে চামড়া অযত্নে অবহেলা পড়ে থাকছে তাতে একদিকে যেমন বেপারি, ফড়িয়া, কৃষক, ব্যবসায়ী এবং সর্বোপরি এর মূল্যে দাবিদার দুস্থ-দরিদ্র মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

অপরদিকে এখানে সেখানে পড়ে থেকে চামড়াগুলো প্রাকৃতিক পরিবেশ কিনষ্ট করে জনজীবন দৃর্বিষহ করে তুলবে যা কোন অবস্থাতেই কাম্য হতে পারে না। কাজেই এক্ষণি সময় এগুলো বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে কাউকে ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের সুযোগ তৈরী করে না দেওয়া।

লেখক: কৃষিবিদ ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। email: [email protected] 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer