Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৬ ১৪৩১, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

চামড়ার ধারাবাহিক দরপতনে নজরদারি জরুরি

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

প্রকাশিত: ২১:৪১, ৩ আগস্ট ২০২০

প্রিন্ট:

চামড়ার ধারাবাহিক দরপতনে নজরদারি জরুরি

সারাবছর বাংলাদেশে যে পরিমাণ প্রাণির চামড়া পাওয়া যায় এক কোরবানির ঈদ মৌসুমেই তার থেকে অনেক বেশি চামড়া পাওয়া যায়। বাংলাদেশে চামড়া একটি অন্যতম রপ্তানিপণ্য হিসেবে বিশে^ অনেক খ্যাতি রয়েছে। যেমনটি এক সময় ছিল নীল, তারপর পাট, এখন চা, তৈরি পোষাক ইত্যাদি। কিন্তু চামড়া শুধু রপ্তানি পণ্য হিসেবে বিদেশেই নয় বরং এখন আমাদের দেশেই অনেক শিল্প উদ্যোক্ত সৃষ্টি হওয়ার কারণে এখন দেশেও চামড়া প্যক্রিয়াজত করে এখানেই নানা চামড়াজাত পণ্য তৈরি করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হয়ে আসছে। বাংলাদেশে কাঁচা চামড়াকে পাকা করার জন্য আগে পুরাতন ঢাকায় হাজারিবাগের ট্যানারিগুলোতে প্রক্রিয়াকরণ করা হতো। কিন্তু এখন এ শিল্পের দেশ বিদেশে সম্ভাবনা থাকার কথা চিন্তুা করে এবং পরিবেশের কথা বিবেচনায় নিয়ে ঢাকার অদূরে সাভারে স্বাস্থ্য ও পরিবেশসম্মত গুচ্ছ পদ্ধতিতে ট্যানারি স্থাপন করার জন্য সরকারিভাবে সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া হয়েছে।

ভাবতে অনেক কষ্ট হয় সেই চামড়ার এখন কোনো মূল্যই নেই। কিন্তু কীভাবে তা সম্ভব। আমরা দেখেছি প্রাকৃতিক নীলের বদলে অনেক কৃত্রিম রঙ সৃষ্টি হওয়ায় নীলের কদর কমে গেছে। অনেক সহজলভ্য ও সস্তা কৃত্রিম তন্তু সৃষ্টি হওয়ায় পাটের কদরও বিশ্ববাজারে কমে গেছে। এগুলো না হয় তর্ক ও যুক্তির খাতিরে হলেও মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু যেখানে বিশ্ববাজারে চামড়া এবং চামড়ার তৈরি জিনিসপত্রের দাম উর্ধ্বমুখী সেখানে কাঁচা-পাকা চামড়ার এখন ধারাবাহিক দরপতন কোন অবস্থাতেই কাম্য হতে পারে না। আমরা আমাদের নিজের দেশের অভিজ্ঞতা দিয়েই একটু উদাহরণ দিলে তা পরিষ্কার হওয়া যাবে।

পিওর চামড়ায় তৈরি যেকোন এক জোড়া জুতার দাম কত, একটি পিওর চামড়ার তৈরি ব্যাগের দাম কত, একটি পিওর চামড়ার বেল্টের দাম কত- এগুলো আমরা সবাই জানি। কিন্তু চামড়া বিক্রি করতে গেলে এর কোন মূল্যই থাকবে না তা নিশ্চয়ই ন্যায়সঙ্গত হতে পারে না। তাহলে এ শিল্পটিতে এমন একটি অশনিসঙ্কেত কীভাবে সৃষ্টি হলো তা নিশ্চয়ই ভেবে দেখা দরকার। আর শুধু ভাবলেই চলবে না। এখানে সরকারের কিছু করণীয় থাকলে অবশ্যই শক্ত হাতেই করতে হবে। আমরা বলতে চাইনা যে এখানে কোন সিন্ডিকেট কাজ করছে, তবে যদি এমনভাবেই দিনের পর দিন, বছরের পর বছর চলতে থাকে সেখানে অবশ্যই কঠোর হস্তে শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনতে হবে।

কারণ এমনিতে অন্য যেকোন পণ্যের মূল্যের সাথে সরাসরি গরীবের হক জড়িত থাকেনা। কিন্তু কোরবানির চামড়ার মূল্যের সাথে গরীবের অর্থ প্রাপ্তির বিষয়টি সরাসরি জড়িত থাকায় সেঠাতে গরীবের হকও সরাসরি জড়িত। কারণ কোরবানির চামড়ার মূল্যের পুরোটাই গরীব মানুষের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার বিধান রয়েছে ইসলাম ধর্মীয় বিধান মতে। কাজেই এ চামড়ার মূল্যের সাথে বেশ কয়েটি বিষয় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে। প্রথমত একটি রপ্তানিপণ্যের মূল্যহানি, দ্বিতীয়ত গরীবের হক প্রাপ্তিতে ঘাটতি, তৃতীয়ত মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী তথা মধ্যস্বত্তভোগীদের আর্থিক ক্ষতি সর্বোপরি পরিবেশ বিনষ্ট হওয়া ইত্যাদি আরো অনেক কিছু।

বিগত দুই তিন বছর যাবৎ চামড়ার বাজার মূল্যের যে অবস্থা যাচ্ছে তা সত্যিই মেনে নেওয়া যায় না। প্রতিবারই দেখা যায় ঈদের আগে গরু/মহিষ, খাসি/ভেড়া ইত্যাদি প্রাণির চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া থাকে। কিন্তু কোনবারই ট্যানারি মালিকগণ সে নির্ধারিত মূল্যে চামড়া ক্রয় করে না। তারা নানা টালবাহান করে যার ফলে খুচরা ও পাইকারি চামড়ার কারবারিরা হয় নামে মাত্র মূল্যে চামড়া বিক্রি করে যায় নয়তো সেই চামড়া রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যায়। এতে ফিবছরই সেসব প্রান্তিক পর্যায়ের চামড়ার ব্যবসায়ী ফরিয়ারা লোকসান গোনে ঘরে ফিরে। এবারের (২০২০) কোরবানির ঈদেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। যথারীতি কোরবানির চামড়া কিনে যখন মধ্যস্বত্তভোগী ফরিয়ারা ট্যানারি মালিকদের কাছে নিয়ে যায় তখন তারা তা গ্রহণ করেনি। ফলে তারা সেসব চামড়া রাস্তায় ফেলে যেতে বাধ্য হয়েছে।

এতে শুধু যে চামড়া নষ্ট হলো তাই নয়, সে চামড়া পঁচে গন্ধ বের হয়ে আশেপাশের পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। আর তাছাড়া চাহিদার জায়গায় চাহিদা রয়েই গেল মাঝখানে চামড়াগুলো যেখানে সম্পদ হতে পারতো তা না হয়ে জীবাণুর বাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। এমনিতেই দখল দুষণের কারণে শহরাঞ্চল অনেকটাই কৃত্রিম বাগাড়। তারউপর এমন পরিস্থিতিতে তা আরো এক ডিগ্রি বেড়ে গেল আরকি। কাজেই এখানে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই যথাযথ ব্যবস্থায় এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে দিনের পর দিন বছরের পর বছর ধারাবাহিকভাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের এমন পনিণতি হতে থাকলে প্রকারান্তরে দেশেরই ক্ষতি যা মেনে নেওয়া যায় না। একে তো করোনাকালে এমনিতেই দেশবাসি নাকাল, সেখানে চামড়া খাতের এ ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।

লেখক: কৃষিবিদ ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

email: [email protected] 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer