Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৪ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

গোলাপ গ্রামে গাছেই শুকাচ্ছে ফুল : দিশেহারা চাষীরা

তুহিন আহামেদ, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩:২৫, ২৩ এপ্রিল ২০২০

প্রিন্ট:

গোলাপ গ্রামে গাছেই শুকাচ্ছে ফুল : দিশেহারা চাষীরা

ছবি- বহুমাত্রিক.কম

বাংলাদেশে প্রাণঘাতি নোভেল করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এ থমকে গেছে পুরো দেশ। দিন দিন বেড়েই চলেছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নানামুখী কর্মসূচি।

এরপরেও সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না। জনগণকে ঘরে থাকার লক্ষ্যে `লকডাউন` ঘোষণা করা হয়েছে দেশের বেশির ভাগ জেলা। করোনার প্রভাব থেকে রক্ষা পায়নি সাভারে গোলাপ গ্রাম নামে খ্যাত বিরুলিয়ার শত শত ফুল চাষীরা। ফলে গাছের ফুল গাছেই শুকিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা এ অঞ্চলের চাষীরা।

গত ২৬ মার্চ থেকে পহেলা বৈশাখে ফুল বিক্রির টার্গেট নিয়ে চাষীরা নানা প্রস্তুতি নিলেও করোনা ভাইরাসের কারণে ক্ষেত থেকে ফুল তুলতে পারেনি কোন চাষী। যার ফলে ক্ষেতের বড় বড় লাল গোলাপগুলো গাছেই পঁচে ও শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে দিশেহারা হয়ে পরেছে চাষীরা। সেই সাথে ধার দেনায় জর্জরিত কৃষক পরিবারগুলোতে চলছে শুধু হাহাকার।

সাভার কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্ততর সূত্রে জানা গেছে, এবার বিরুলাসহ সাভারের কয়েকটি অঞ্চলে প্রায় ৩`শ একর জমিতে গোলাপসহ অনন্য ফুলের চাষ করেছেন চাষীরা। এ বছর লাভের প্রত্যাশা ছিল কয়েক কোটি টাকা। করোনার আগে কয়েকটি দিবসে এ পর্যন্ত ৩০% ফুল বিক্রি হয়েছে, বাকি ফুলগুলো ক্ষেতে রয়ে গেছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে উপজেলার বিরুলিয়ার গোলাপ গ্রামে শ্যামপুর, মোস্তারাপাড়া ও বাগ্নীবাড়ী গিয়ে দেখ গেছে, পাল্টে গেছে চীরচেনা সেই গোলাপ গ্রাম। নেই আগের মত ফুল ক্ষেতে চাষীদের কর্মযজ্ঞ। ক্ষেতের বড় বড় গোলাপ ফুলগুলো পঁচে শুকিয়ে যেয়ে পুরো গোলাম গ্রাম যেন মলিন হয়ে গেছে। সড়কে দেখা যায়নি গোলাপ ভর্তি খাচা নিয়ে চাষীদের বাজারে যেতে। জনশূন্য ওই এলাকার গোলাপের বাজার গুলো। পুরু এলাকা যেন রুপ নিয়েছে এক স্তব্ধতায়। চাষীদের চোখে মুখে নেই হাসির ছাপ। তাদের কেবল চিন্তা চেতনায় লোকশানের ছাপ। এই অবস্থায় তারা যেন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

এই অবস্থায় গ্রামটির বাগানগুলোতে প্রবেশ মুখে কলাগাছ কেটে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কোনো দর্শনার্থী যেন প্রবেশ করতে না পারে। ইতিমধ্যে এলাকাটি পর্যটনদের জন্য পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

জানা গেছে, সকাল সন্ধ্যা পুলিশ প্রশাসনের টহল থাকে এই গোলাপ গ্রামে। কোনো বহিরাগত লোক ঢুকতে পারেনা আবার কেউ বের হতেও পারে না। আর চাষীরা বাগানে যেতে পারছেনা তাই ফুল্গুলো বিভিন্ন রোগবালাইসহ নানা কারণে পঁচে যাচ্ছে৷

গোলাপ বাগানে কাউকে না পেয়ে বাগানগুলোর মালিকের খোঁজে এক বাড়িতে গিয়ে কথা হয় ইসমাইলের সঙ্গে। তিনি প্রায় ১৫ বছর ধরে ৩ বিঘা জমির উপর গোলাপ চাষ করে আসছেন। তিনি জানান, আমার এত বছরের ফুল চাষের বয়সে এমন পরিস্থিতিতে কখনো পরিনি। কত রকম রোগ হয়েছে ফুলে তারপর আবার সেরে গেছে। কিন্তু এবার সারাদেশের সাথে সাথে আমাদের ফুলের বাগানগুলোতেও বড় ধরণের প্রভাব পড়েছে। আমাদের এখন পথে বসার উপক্রম হয়ে গেছে।

আরেক ফুল চাষী আতাউল জানান, আমি ৪ শতাংশ জমিতে গোলাপের গাছ লাগিয়েছি। করোনার কারণে ক্ষেতে যেতে পারছি না, এতো সুন্দর সুন্দর গোলাপগুলো গাছেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷ আর বাজার বন্ধ কোথাও গোলাপ বিক্রিও হয় না৷ গোলাপ বিক্রি করলে আমাদের পেটে ভাত যায়, আর বিক্রি না হলে না খেয়ে থাকেতে হয়।

আপনাদের সরকারের পক্ষ থেকে কোনো খাদ্য সামগ্রী বা সহয়তা আসেনি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না ভাই, এখন পর্যন্ত আমাদের এখানে কোনো রকম সাহায্য সহযোগিতা আসেনি। ঘরে যা জমানো টাকা ছিলো তা তো শেষের দিকে। কয়েকদিন পর পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে।

সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বলেন, আসলে সারাদেশের যে অবস্থা শুরু হয়ে গেছে মানুষের জীবন বাঁচানো চেষ্টায় রয়েছে। কয়েকটি দিবস ফুল চাষীরা ফুল বিক্রি করতে পারলো না। চাষীদের ঘরে এখন খাবারের অভাব। আমি যতটুকু পারছি চাষীদের সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি৷ সরকার প্রাপ্ত সকল উপহার চাষীদের ঘরে ঠিক মত চলে যাবে বলে আসা করি।

গোলাপ গ্রামের নিরাপত্তাসহ জনসমাগম রোধে কাজ করে যাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ বিষয়ে বিরুলিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (এসআই) অপুর্ব দত্ত জানান, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমারা সবার মাঝে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে কাজ করছি৷ প্রতিদিন গোলাপ বাগানসহ তার আশেপাশের এলাকায় টহল দেওয়া হচ্ছে। কোনোরকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা সব সময় প্রস্তত রয়েছি৷

 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer