ছবি- বহুমাত্রিক.কম
রাক্ষস, প্রেতাত্মা ইত্যাদি রূপক চরিত্রগুলো গ্রীক থিয়েটারের আবহ তৈরি করবে
গাজীপুর: গাজীপুরের বাড়িয়ায় ১৯৭১ সালের ১৪ মে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত গণহত্যার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে নির্মিয়মাণ পরিবেশ থিয়েটার ‘বাড়িয়া গ্রামের অন্ধকার দিন’ পরিবেশিত হবে আগামী ২৬ নভেম্বর। এর আগে ১২ নভেম্বর ঘটনাস্থল বাড়িয়ায় নাটকটি পরিবেশনার জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল। গাজীপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে এ নাটকের মহড়া চলছে। চলছে শেষ মুহুর্তের জোর প্রস্তুতি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ‘বাড়িয়া গণহত্যা’ বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সৈয়দ মোকছেদুল আলম (লিটন)-এর একটি গবেষণামূলক সরেজমিন প্রতিবেদন অবলম্বনে ‘বাড়িয়া গ্রামের অন্ধকার দিন’ এর পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছেন মিজানুর রহমান। নাট্যনির্দেশক হিসেবে কাজ করছেন জুনায়েদ ইউসুফ। সহকারী পরিচালক হিসেবে আছেন শাহজাহান শোভন।
একাডেমি কর্তৃপক্ষ জানান, প্রস্তুতি পর্বে গত ২ অক্টোবর থেকে গাজীপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হওয়া মাসব্যাপী কর্মশালায় স্থানীয় নাট্যকর্মী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা অংশ নিচ্ছেন। নাটক নির্মাণে নেপথ্য কলাকুশলী হিসেবে কাজ করছেন দেশের খ্যাতিমান কিছু নাট্যব্যক্তিত্ব।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ নাটকের কোরিওগ্রাফি করবেন মাসরুর রহমার (ম্যাস)। পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি আমেরিকায় অবস্থান করছেন। সেখান থেকে ফিরে আসার পর চলতি নভেম্বরের ২২ তারিখ থেকে মহড়ায় যোগ দেবেন। বিভিন্ন হাত ঘুরে পাণ্ডুলিপি চূড়ান্ত হতে বেশ ক্ষাণিকটা সময় ক্ষেপণ হয়েছে। ফলে নাটকের চরিত্র ঘষামাজা ও পরিস্ফূটনের জন্য প্রয়োজনের তুলনায় সময় সংকোচিত হয়ে পড়েছে। ভয়েস রেকর্ডিং, মিউজিক, পাপেট, পোশাক ও মঞ্চ নির্মাণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতেও রয়েছে শেষ সময়ে প্রস্তুতির চাপ।
অন্যান্য নেপথ্য কলাকুশলীরা হলেন- পোশাক পরিকল্পনায়: শ্রেয়শ্রী সরকার, মঞ্চ পরিকল্পনা ও মঞ্চ ব্যবস্থাপনা: খন্দকার রফিক, আলোক পরিকল্পনা: সাইফ মন্ডল, আবহ সংগীত: মো. আহসান ও দ্রব্য সামগ্রী: মামুন।
নাট্যনির্দেশক জুনায়েদ ইউসুফ ও পাণ্ডুলিপিকার মিজানুর রহমান এর সাথে কথা বলে জানা যায়, ‘বাড়িয়া গ্রামের অন্ধকার দিন’ আধুনিক থিয়েটারের আঙ্গিকে পরিবেশিত হতে যাচ্ছে। গ্রীক থিয়েটারের আদল ও আবহ পাওয়া যাবে পরিবেশনায়। থাকছে পাপেট এর ব্যবহারও।
শেক্সপীয়ার দ্বারা প্রভাবিত ‘বাড়িয়া গ্রামের অন্ধকার দিন’ এর পাণ্ডুলিপিতে রাক্ষস, প্রেতাত্মা ইত্যাদি রূপক চরিত্রগুলো গ্রীক থিয়েটারের আবহ তৈরি করবে। হারিয়ে যেতে থাকা ‘পুতুল নাচ’ এর মতো লোকজ ঐতিহ্যকে আধুনিক পরিম-লে উপস্থাপন হতে দেখা যাবে পাপেট সংযোজন করায়; নাটকে বহুমাত্রিকতার পরিসর আরও বিস্তৃতি পাবে।
জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা শারমীন জাহান জানান, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে সারাদেশের ৬৪ জেলায় গণহত্যার পরিবেশ থিয়েটার নির্মাণ কাজ চলছে। এর অংশ হিসেবে গাজীপুরে মহড়া চলছে। আগামী ২৬ নভেম্বর ঘটনাস্থল বাড়িয়ায় নাটকটি পরিবেশনার জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকি নাটকটির পরিবেশনায় উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। অন্যান্য অতিথির তালিকা চূড়ান্ত হবার অপেক্ষায় আছে।
এদিকে গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য বাড়িয়ায় প্রেস শো হবে আগামী ২৫ নভেম্বর। এ নাটকের মূল বার্তা হচ্ছেÑ ‘বাড়িয়া গ্রামের অন্ধকার দিন’ যেন আগামীর পথ চলায় আমাদের জন্য আলোর নিশানা হয়ে চিরভাস্বর থাকে। ধারণা করা হচ্ছে, গাজীপুরের মিইয়ে পড়া সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ‘বাড়িয়া গ্রামের অন্ধকার দিন’ নাটকটি বিশেষ সাড়া ও প্রভাব ফেলবে।
বহুমাত্রিক.কম