Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১০ ১৪৩১, বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪

খোলা চিঠি: রিক্সা বন্ধ হলে আমি চলব কিসে?

তালুকদার রিফাত পাশা

প্রকাশিত: ০১:১৭, ৬ জুলাই ২০১৯

প্রিন্ট:

খোলা চিঠি: রিক্সা বন্ধ হলে আমি চলব কিসে?

ছবি- সংগৃহীত

জনাব
শুভেচ্ছা নিবেন।
গণমাধ্যমের কাছে প্রত্যাশা নিয়ে আমি লিখছি। আমার যাতায়াত অধিকার ক্ষুণ করার প্রক্রিয়া রুখতে আপনাদের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

আমি তালুকদার রিফাত পাশা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তজার্তিক সম্পক বিভাগের প্রথম দৃষ্টিপ্র্রতিবন্ধী ছাত্র ছিলাম। পেশাগত কারণে আমাকে প্রতিদিন মগবাজার থেকে ধানমন্ডি যেতে হয়। বাসার দরজা থেকে অফিসের দরজা পর্যন্ত যাতায়াতে এ রাস্তায় আমার জন্য রিক্সার বিকল্প কিছু নেই। এটি নিরাপদ, অন্য বাহন তুলনায় সাশ্রয়ী ও আরামদায়ক। ঢাকায় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চলাচলের কোন সুব্যবস্থা নেই। এই ক্ষেত্রে রিক্সা শুধু আমার মত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিই নয়, নারী, শিশু, বৃদ্ধাসহ সকলের জন্য আর্শিবাদ।

রিক্সা শুধুমাত্র যাত্রী আর পরিবেশবান্ধবই নয়। রিক্সা লক্ষ মানুষের স্বাধীন পেশার নিশ্চয়তা দিচ্ছে। ‍রিক্সার অর্থনৈতিক অবদান অন্য যেকোন যাতায়াত মাধ্যম থেকে বেশি।


একটি শহরের নীতিনির্ধারকরা কতটা অমানবিক হতে পারে এবং গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিতে পারে তার প্রতিবাদে। আমি আজ সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ১২.৩০ মিনিট পর্যন্ত জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়েছিলাম। আগামী ৭ জুলাই থেকে ঢাকা কয়েকটি বড় রাস্তা থেকে রিক্সা চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই সড়কগুলোতে রিক্সায় চলাচলকারী যাত্রীরা কিসে চলাচল করবে তা বিবেচনা করা হয়নি। রিক্সা চলাচলের জন্য ধারাবাহিক চলাচল জরুরি। বার বার রিক্সা পরিবর্তণ করে গন্তব্যে পৌছানো ব্যয়বহুল এবং সময় সাপেক্ষ।

যদিও যানজটের কারণ দেখিয়ে বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে অতীতেও ঢাকার ভিন্ন সড়ক থেকে রিক্সা বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু রিক্সা বন্ধের পরও সেই সকল সড়কে যানজট কমেনি। বরং যানজট বেড়েছে। কমেছে গাড়ির গতি। কারণ প্রাইভেট কারের নিয়ন্ত্রণহীন বৃদ্ধি।

ঢাকায় ৯ ভাগ যাতায়াত হয় প্রাইভেট কারে। অথচ রাস্তার ৭০ ভাগ প্রাইভেট কারের দখলে। অপর দিকে ৩৮ ভাগ যাতায়াত হয় রিক্সায়। রিক্সা নিয়ে নগরপিতাদের কোন পরিকল্পনা নেই। সুষ্ঠ পরিকল্পনার মাধ্যমে সকল শ্রেনীপেশার মানুষের কাছে সহজলভ্য এই যানটি হতে পারত ঢাকার আদর্শবাহন।

যানজট সৃষ্টিকারী প্রাইভেট করার নিয়ন্ত্রণে আজ পর্যন্ত আমাদের নীতিনিধারকরা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। কিন্তু সারাদুনিয়ায় আজ যানজট দূষণ রুখতে প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

পৃথিবীর বুকে মাথা উচুঁ করে আমরা বলতে পারতাম। প্রতিদিন ১ কোটি ৩৮ লক্ষ বার শুধুমাত্র ঢাকা শহরে যাতায়াত করি শূণ্য কার্বণ উৎপাদন করে। যা অন্যকোন দেশে সম্ভব নয়। রিক্সার নকশা পরিবর্তন করে তা আরো জনবান্ধব করা সম্ভব। ঢাকার নীতিধারকরা প্রাইভেট কার চলাচলের জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে। কিন্তু কোটি মানুষের বাহন রিকশার জন্য তেমন কোন বরাদ্দই রাখে না।

দেশের মোট জনসংখ্যার ১৫ ভাগ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। সেই হিসেবে ঢাকায় আমার মত প্রায় ২০লাখের মত প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বসবাস করে। এইসব ব্যক্তির চলাচলের উপযোগি কোন যাতায়াত মাধ্যম সিটি করপোরেশন নিশ্চিত করতে পারেনি। আমরা বহুলাংশে যাতায়াতের জন্য রিক্সার উপর নির্ভরশীল।

তাই রিক্সার ধারাবাহিক চলাচল নিশ্চিত করতে বড় বড় রাস্তায় রিক্সার জন্য লেন দেওয়ার দাবী জানাই। তারই সাথে রিক্সার মান উন্নয়নে পর্যাপ্ত বরাদ্দের দাবি করছি।

শ্রুতিলেখক : সৈয়দ সাইফুল আলম

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer