Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪

খিদির খালের কান্না

প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী

প্রকাশিত: ১৯:০৮, ২৫ মে ২০২০

প্রিন্ট:

খিদির খালের কান্না

ছবি: লেখক

কাক কালো কোকিল কালো
কালো মাথার কেশ
এর চেয়ে অধিক কালো
খিদির খালের স্ল্যাশ।

উত্তরার খিদির খাল কালো কুচকুচে স্ল্যাশ (slush) বুকে ধারণ করে তার অস্তিত্ব জাহির করছে। খালে প্রবাহিত কোন পানি নেই, আছে তাবৎ ময়লা, দু্র্গন্ধময় আবর্জনা, কোথাও ঠাসা কচুরিপানা। আদিকালের কহরদরিয়া বর্তমানে তুরাগনদী হতে খিদির খাল যাত্রা শুরু করেছে আব্দুল্লাহপুরের স্লুইসগেইট এলাকা থেকে। খালের দু`পাড়ে পরিকল্পিত শহর উত্তরার সেক্টর ১০,১১ ও ১২ এবং অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠা ফুলবাড়িয়া, নলভোগ, ডিয়াবাড়ী খালপাড় ও চন্ডালভোগ এলাকা। চন্ডালভোগের পাকাব্রিজ পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার খালের অবয়ব ধরা যায়, এরপর কচুরিপানা সমৃদ্ধ বিশাল জলাভুমি। স্থানীয় বাসিন্দারা খিদির খাল বলে সম্বোধন করলেও সরকারি খাতায় এর কেতাবি নাম আব্দুল্লাহপুর খাল।

আট-নয় বছর আগে ধাতবদাঁত বিশিষ্ট হাতির শুঁড়ের ন্যায় যন্ত্রদানব এসে খিদির খালের স্ল্যাশ অপসারণ শুরু করেছিল। আমজনতা খুশিতে টগবগ, কল্পনার সুখ-স্বপ্নে বিভোর। আবার টলটলে পানিতে ভরে যাবে খিদির খাল, নৌকায় ঘুরে বেড়াবে খালে। না তেমন কিছুই হয়নি, সবই হা হতোস্মি। দু`পাড়ে কংক্রিটের স্ল্যাব বসানো হয়েছিল, যার কিছু কিছু নজির এখনো রয়েছে। কিন্তু যেই লাউ সেই কদু। লোকেরা বলাবলি করছিল ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ সার্কেলের কয়েক কোটি টাকার প্রকল্প মাঠে মারা গেল।

খালের উত্তর পাড়ের কেউ কেউ আবার খালকে অতি আপন ভেবে ওর উপর টিনের ঘর তৈরি করে ফেলেছে। ব্যবহৃত হচ্ছে রিক্সা গ্যারেজ, দোকানপাট অথবা বসতবাড়ি হিসেবেও। কোথাও বহুতল ভবনের ভিত্তি স্থাপন করে পাকা ভবন নির্মাণ করছে `ওয়াসা` লিখিত বাউন্ডারি পিলার ঘেঁষে। দক্ষিণ পাড়ের সেক্টর গুলো হতে অসংখ্য সবুজ ফ্লেক্সিবল পানির পাইপ সাপের ন্যায় এঁকে বেঁকে উত্তরপাড়ের সাথে সেতুবন্ধন রচনা করেছে।

এহেন খিদির খালে উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে লক্ষ কোটি মশক কুল বসবাস করছে মনের আনন্দে। আর হবেই না কেন, গতবার তো এডিস মশা বিতারিত রোহিঙ্গাদের সাথে তুলনামূলক বিবেচনায় প্রজননে দক্ষতা অর্জন করে বিশেষজ্ঞ প্রদত্ত সার্টিফিকেট অর্জন করেছে। সনদপ্রাপ্তির উল্লাসে প্রতিনিয়তই তাদের বংশবৃদ্ধি পাচ্ছে। কথায় বলে না

চিত্ত সুখে গীত্য গায়
মনের সুখে নিদ্রা যায়।

মশককুল চিত্ত সুখে মানবকুলের কর্নকুহরে দিবানিশী গীত্য গেয়েই চলছে। এমন বেসুর গীত্য শ্রবণে মানবজাতি মনের সুখে নিদ্রা যাওয়া তো দুরের কথা, জীবনই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

এখনই এডিস মশার বংশবৃদ্ধি রোধ করতে হবে, নির্মূল করতে হবে মশা, যদি ডেঙ্গু হতে বাঁচতে চাই। ডেঙ্গুর মৌসুম চলে এসেছে। করোনা ভাইরাসের প্রকোপে ভুলে গেছে সবাই ডেঙ্গুকে। অচিরেই খিদির খালের মশকনিধন ও সংস্কার প্রয়োজন। নয়তোবা ডেঙ্গু অতিক্রম করবে করোনার বিস্তারকে।

করোনা আর ডেঙ্গু মিলে বেচঈন (উৎকষ্ঠিত) করে দিবে সমাজ ব্যবস্থাকে। কিন্তু কে ধরবে হাল, বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে? খালের ওয়ারিশ ঢাকা ওয়াসা? নাকি নগর রক্ষক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। পরিবেশ অধিদপ্তর অথবা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও বিষয়টি আমলে নিতে পারে জনস্বার্থে। গরম তাজা চা পান করতে করতে আসুন এবার স্থিরচিত্রে খিদির খালের বায়স্কোপ দেখি, সঠিক সিদ্ধান্ত বেরিয়েও আসতে পারে।

লেখক: রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রাক্তন কর্মকর্তা ও বর্তমানে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের পরামর্শক।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer