Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৪ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪

খাবারের সন্ধানে সুন্দরবন ছেড়ে ফের লোকালয়ে বাঘ

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:২৩, ১৮ জানুয়ারি ২০১৯

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

খাবারের সন্ধানে সুন্দরবন ছেড়ে ফের লোকালয়ে বাঘ

ছবি: ইউএনবি

ঢাকা: সুন্দরবন ছেড়ে আবারও রয়েল বেঙ্গল টাইগার লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। বাঘের গর্জন আর পায়ের ছাপ দেখে বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার সুন্দরবনসংলগ্ন দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে বাঘ আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রামবাসী জানান, বুধবার দিবাগত রাত ১টা টার দিকে তারা বাঘের গর্জন শুনতে পায়। সেই থেকে তাদের মধ্যে ভীতি কাজ করছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতে পায় শরণখোলা উপজেলার সোনাতলা এবং দক্ষিণ সোনাতলা গ্রামের মাঠে, রাস্তা এবং খালের চড়সহ বিভিন্ন এলাকায় বাঘের অসংখ্য পায়ের ছাপ পড়ে আছে। এর পর থেকে গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে বাঘ খুঁজতে শুরু করে।

বুধবার রাতে পানিশূন্য ভোলা নদী পার হয়ে বগী-শরণখোলা ভারানী এলাকার পানিরঘাট এলাকা দিয়ে বাঘ লোকালয়ে ঢুকে পড়ে বলে গ্রামবাসী জানান। এই নিয়ে ১১ বছরে সুন্দরবন ছেড়ে ১৩৩ বার বাঘ লোকালয়ে ঢুকেছে।

খবর পেয়ে সুন্দরবন বিভাগ,ওয়াইল্ড টিম, টাইগার টিম (ভিটিআরটি), কমিউনিটি পেট্রোলিং (সিপিজি) গ্রুপের সদস্যরা ছুটে যায় ওই দুই গ্রামে। শতশত গ্রামবাসী যুক্ত হয় তাদের সাথে। চলতে থাকে বাঘের সন্ধান। হ্যান্ডমাইক ও মসজিদের মাইক থেকে এলাকাবাসীকে সতর্ক করা এবং সাবধানে চলাফেরা করার জন্য বলা হয়।

বন বিভাগের তথ্য মতে, ২০০৮ সাল থেকে ২০১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ১১ বছরে ১৩৩ বার সুন্দরবন ছেড়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে বাঘ। এই সময়ে বাঘের হামলায় জেলে, বাওয়ালী, মৌয়াল এবং গ্রামবাসী মিলে ১৮৪ জন মারা গেছে। লোকালয়ে ঢুকে বাঘে ৩৫৮টি গবাদী পশু খেয়ে ফেলেছে। ১১ বছরে সুন্দরবন এবং লোকালয় থেকে মৃত অবস্থায় নয়টি বাঘ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ।

বন বিভাগের হিসেব মতে, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের অধীনে গত ২০০৮ সালে একটি, ২০০৯ সালে দু’টি, ২০১০ সালে দু’টি, ২০১১ সালে একটি, ২০১২ সালে দু’টি এবং ২০১৮ সালে একটি বাঘ মারা গেছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারি রাতে সুন্দরবন থেকে একটি বাঘ লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। পরের দিন ২৩ জানুয়ারি সকালে সুন্দরবনসংলগ্ন বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের মধ্যে গুলিসাখালী গ্রামের ধানক্ষেতে বাঘটিকে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তার আগে বাঘের আক্রমণে ছয়জন গ্রামবাসী আহত হন। সেই থেকে গ্রামবাসীর মধ্যে বাঘ আতঙ্ক বেড়ে গেছে। গত বুধবার রাতে পানিশূন্য ভোলা নদী পার হয়ে বগী-শরণখোলা ভারানী এলাকার পানিরঘাট এলাকা দিয়ে বাঘ লোকালয়ে ঢুকে পড়ায়। এতে গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে।

স্থানীয়দের মতে, সুন্দরবন ঘেষা ভোলা নদী ভরাট হয়ে পানি শূন্য হয়ে পড়ায় প্রায়াই বাঘ সুন্দরবন ছেড়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। বাঘ লোকালয়ে ঢুকে পড়লে বাঘে-মানুষে লড়াইয়ের ঘটনা ঘটে। কখনো বা বাঘ আবার কখনো বা মানুষ প্রাণ হারায়। বাঘ যাতে বন ছেড়ে গ্রামে প্রবেশ করতে না পারে এজন্য দ্রুত ভোলা নদী খননের দাবি জানান গ্রামবাসী।

ওয়াইল্ড টিমের শরণখোলার মাঠ কর্মকর্তা মো. আলম হাওলাদার বলেন, আমি নিজে দক্ষিণ সোনাতলা এবং সোনাতলা গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বাঘের পায়ের শতাধিক চিহৃ দেখতে পেয়েছি। বাঘ রাতভর ওই দু’টি গ্রাম ঘুরে বেড়িয়েছে। বাঘের গর্জন শুনতে পেয়েছে গ্রামবাসী। ওই রাতে বাঘের ভয়ে ঘর থেকে কেউ বাইরে বের হয়নি। সকালে অনেকের বাড়ির সামনে বাঘের পায়ের ছাপ দেখা গেছে।

তিনি আরও বলেন, বন বিভাগ, গ্রামবাসী, ওয়াইল্ড টিম এবং টাইগার টিমের সদস্যরা বাঘের সন্ধানে বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি করেছে। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা বাঘ খুঁজে পাননি। ধারণা করা হচ্ছে, বাঘ পুনরায় ভোলা নদী পার হয়ে সুন্দরবনে ফিরে গেছে। মাঠ কর্মকর্তা মো. আলম হাওলাদারের দেয়া তথ্য মতে, তিনি ১২ বছর ধরে ওই টিমের সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। এই সময়ে সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে ঢুকে পড়া ১৬টি বাঘকে বনে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য কাজ করেছেন।

পূর্ব সন্দরবনের শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) মো. শামসুল হক বলেন, দুই গ্রামের বিভিন্ন এলাকায় বাঘের পায়ের ছাপ পড়ে আছে। প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা নিয়ে বাঘ বিচারণ করেছে। বাঘের সন্ধানে গ্রামের বনজঙ্গল তল্লাশি করা হয়েছে। কোথাও বাঘ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তিনিও মনে করছেন বাঘ পুনরায় সুন্দরবনে ফিরে গেছে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান জানান, সুন্দরবন ছেড়ে বাঘ বন সংলগ্ন লোকালয়ে ঢুকে পড়ার ঘটনা সত্য। বনসংলগ্ন দু’টি গ্রামের বিভিন্ন এলাকা বাঘের বিচরণ করার সত্যতা মিলেছে। বাঘের পায়ের ছাপ দেখে এমনটি মনে হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, বন বিভাগের সদস্যরা ওই গ্রামে টহলে রয়েছে। ওয়াইল্ড টিম, ভিটিআরটি ও সিপিজি সদস্যরাও সেখানে কাজ করছে। যেহেতু গ্রামবাসীর মধ্যে বাঘ আতঙ্ক বিরাজ করছে; একারণে বৃহস্পতিবার রাতভর বনসংলগ্ন ওই গ্রামে বন বিভাগের সদস্যরা টহলে থাকবে।

ডিএফও মো. মাহমুদুল হাসানের তথ্য মতে, সুন্দরবন ছেড়ে বাঘ যাতে লোকালয়ে ঢুকতে না পারে এজন্য তারা বাউন্ডারি ফেনন্সিং ওয়ালের প্রকল্প প্রস্তুত করেছে। প্লাস্টিকের আবারণ দেয়া তার দিয়ে ওই বাউন্ডারি দেয়া হবে। ওই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে সাত কোটি টাকা। প্রকল্পটির অনুমোদনের জন্য বন অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে বাউন্ডারি দেয়া গেলে বাঘ আর লোকালয়ে ঢুকতে পারবে না।

প্রতিবেদন: ইউএনবি

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer