Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৯ ১৪৩১, বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪

ক্লাসের দরজায় শিক্ষার্থীর লাথি : সরগরম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:১৪, ৬ এপ্রিল ২০১৯

প্রিন্ট:

ক্লাসের দরজায় শিক্ষার্থীর লাথি : সরগরম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

মৌলভীবাজার :ক্লাসের দরজায় লাথি মারার ঘটনাকে কেন্দ্র করে শমশেরনগর সুজা মেমোরিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকের সাথে একাদশ শ্রেণির ব্যবসায় শিক্ষা শাখার এক শিক্ষার্থীর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে গত কয়েকদিন যাবত সরগরম হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

এ ঘটনায় অধ্যক্ষ ও ছাত্রীর কথোপকথন নিয়ে রয়েছে দু’পক্ষের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য। ছাত্রীর পক্ষ থেকে ৫ এপ্রিল কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ অপরদিকে সুজা মেমোরিয়াল কলেজ গভর্ণিং বডির উদ্যোগে শনিবার দুপুরে জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩১ মার্চ রবিবার সকাল সাড়ে ৯টায় কলেজের নতুন ভবনের ক্লাসরুমে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রোববার সকালে ঝড় ও বজ্রপাত শুরু হলে কলেজের নতুন ভবনের ক্লাসরুমে দরজায় কয়েক দফা প্রচন্ড শব্দ হয়। দরজার শব্দ কলেজের দপ্তরির নজরে আসলে বিষয়টি অধ্যক্ষকে অবহিত করেন। খবর শুনে ক্লাসের শিক্ষক মাসুদুর রহমানকে নিয়ে অধ্যক্ষ ক্লাসে গিয়ে ছাত্রদের উদ্দেশ্য করে দরজায় লাথি মারার বিষয়টি জানতে চাইলে একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাজেদা আক্তার দাঁড়িয়ে নিজে লাথি মারার কথা স্বীকার করে ভুল হয়েছে দাবি করে।

পরে অধ্যক্ষ ক্ষোভের সঙ্গে ছাত্রীর এহেন আচরন সঠিক নয় এবং তাকে সংযত হয়ে পড়ালেখা করতে বলেন। এ সময়ে কলেজ শিক্ষক মাসুদুর রহমানের ইঙ্গিতে সাজেদা আক্তার ক্ষমা চাওয়ার জন্য এগিয়ে আসলে অধ্যক্ষ মোর্শেদুর রহমান ছাত্রীকে থামিয়ে তার বাবাকে কলেজে পাঠাতে বলে ক্লাসরুম ত্যাগ করেন। এরপর যথারীতি ক্লাস শেষ করে কলেজ ছুটি হলে সাজেদা নিজ বাড়িতে চলে যায়।

তবে কমলগঞ্জ ইউএনও’র কাছে সাজেদার বাবা কুতুব আলীর দেয়া অভিযোগে বলা হয়, ঝড় ও বজ্রপাতের সময়ে তার মেয়ে বারান্দা থেকে হলের ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে দরজা ঝড়ো বাতাসে আটকে যায়। মেয়েটি দরজায় জোরে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময়ে কলেজ শিক্ষক মাসুদুর রহমান ও অধ্যক্ষ ক্লাসে এসে সাজেদাকে তার সহপাঠী ও শিক্ষার্থীদের সম্মুখে দাঁড় করিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। মেয়েটি ক্ষমা চাইলেও অধ্যক্ষ তাতে কর্ণপাত করেননি। পরে ক্লাস শেষ করে মেয়েটি দুপুরে বাড়ি ফিরে ঘটনাবলী খোলে বলে। সন্ধ্যার পর মেয়েটি অসুস্থ হলে স্থানীয় চিকিৎসকের শরনাপন্ন হন। পরে ১ এপ্রিল রাত পৌণে ৯ টায় সাজেদাকে মৌলভীবাজারের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং দু’দিন পর মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। বিষয়টি ফোনে কলেজের অধ্যক্ষকে অবহিত করলে সন্তোষজনক কোন জবাব দেননি বলে তিনি দাবি করেন।

অভিযোগ বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ ম. মুর্শেদুর রহমান বলেন, বৃষ্টির সময়ে ক্লাসরুমে বারবার দরজার শব্দ শুনে কলেজের দপ্তরী বিষয়টি জানালে ক্লাসের শিক্ষক মাসুদুর রহমানকে নিয়ে ক্লাসে যাই। সেখানে ছাত্রদের উদ্দেশ্যে করে দরজায় লাথি মারার কথা জানতে চাইলে সাজেদা আক্তার হাত তুলে এগিয়ে এসে লাথি মারার কথা স্বীকার করে এবং বলে মিসটেক হয়েছে। পরে বজ্রপাত ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিষয়ে তাদের সতর্ক করে মেয়েটির বাড়ির খোঁজ জানতে চাইলে মাপ চাওয়ার জন্য এগিয়ে আসে তখন তার বাবাকে কলেজে আসার কথা বলে চলে আসি। তিনি আরও বলেন, ৩১ মার্চ বিকালেই কুতুব মিয়া ফোনে তার মেয়ের আচরনে দু:খ প্রকাশ করে ২ এপ্রিল কলেজে আসার কথা বলেন। পরদিন আবার ফোন করে সাজেদার অসুস্থ্যতার জন্য আমাকে দায়ী করেন। অধ্যক্ষ বলেন, সাজেদার চিকিৎসার কাগজপত্র পর্যালোচনা করলেই বুঝা যাবে সে মানসিক অসুস্থ। তার অসুস্থতার খবর শুনে হাসপাতালেও আমরা দেখতে যাই।

অথচ এখানে একটি কুচক্রি মহল বিষয়টিকে ভিন্নভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে বিভ্রান্ত ও কলেজের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করছে।

বিষয়টি নিয়ে ছাত্রীর বাবা মো. কুতুব আলী শুক্রবার কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগে বিচার দাবি করেছেন। অপরদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হওয়ার ঘটনায় শনিবার দুপুরে সুজা মেমোরিয়াল কলেজ গভর্ণিং বডির জরুরী সভায় ঘটনা তদন্তে শমশেরনগর ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি ও রবিবার কলেজে সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করেছে।

এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষের সাথে কথা হয়েছে এবং উপজেলা চেয়ারম্যান সাহেবসহ দু’পক্ষকে নিয়ে শীঘ্রই বৈঠকে বসা হবে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer