ছবি- সংগৃহীত
গাজীপুরের সবচেয়ে নামিদামি ঐতিহ্যবাহী রাণী বিলাসমণি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান হাল দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ছাত্র -শিক্ষক- অভিভাবক -প্রাক্তন ছাত্র- সুশীল সমাজ । সকলের এক প্রশ্ন ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি কোথায় যাচ্ছে !
বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির গণিত বিষয়ের পরীক্ষায় ১৬৮ জনের মধ্যে ১৩৬ জন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়ায় বিদ্যালয়ের পড়াশোনার দৈন্য দশা, শিক্ষকদের মান-আন্তরিকতা-কোচিং প্রবণতা-দলাদলির বিষয়টি সামনে চলে এসেছে।
অথচ এ বিদ্যালয়ে নুরুল ইসলাম ভাওয়ালরত্ন, এ টি এম জালাল উদ্দিন খান বিটি, ইসমাইল হোসেন, জুলফিকার আলী, মুল্লুক হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, অক্ষয় কুমার সাহা, ফজলুল কবির, অশোক কুমার নাথ, শৈলেন মুখার্জি, এ এম মোস্তাইন নুর রহমান, আব্দুর রাজ্জাক স্যারদের মত প্রবাদপ্রতিম বিদ্বজ্জন পাঠদান করেছেন।
আর বিদ্যালয়ের ছাত্ররা সমাজ-রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন-আছেন। বর্তমান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক , ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান, প্রয়াত সাংসদ মোঃ হাবিবুল্যাহ, সড়ক বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম মিলু, রিয়ার এডমিরাল (অব:) আমির আহমদ মোস্তফা, ব্রিগেডিয়ার (অব:) কাজী মাহমুদুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার (অব:) আবু সোহেল, সাবেক সচিব মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত সচিব আমজাদ হোসেন,অতিরিক্ত সচিব আখতার হোসেন খান, যুগ্ম সচিব আবুল কাসেম তালুকদার,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আব্দুল গফুর ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড.আমজাদ হোসেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব আখতার হোসেন, বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত ) আলী হায়দার খান, অধ্যাপক ইয়াকুব আলী সরকার, অধ্যাপক শহীদুল্লাহসহ উজ্জ্বল সব তারকারা এ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন । প্রতিষ্ঠিত-সফল শিক্ষার্থীদের তালিকা করলে তা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে। এ বিদ্যালয়টি কত চিকিৎসক, প্রকৌশলীর জন্ম দিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই।
চৌদ্দ বছর আগে শতবর্ষ উদযাপন করা বিদ্যালয়টির বর্তমান অবস্থা দেখে সঙ্গত কারণেই সমাজের সকল স্তরের মানুষ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। বিদ্যালয়টির শিক্ষার মান ,ছাত্রদের অনিয়ন্ত্রিত আচরণ, মারামারি , কিছু শিক্ষকের মাদক-নারী নির্যাতনের মতো অনৈতিক বিষয়ে জড়িয়ে পড়া - এসব উপসর্গ বেশ কিছুদিন যাবতই আলোচনায় ছিল।
নতুন করে বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর গণিত বিষয়ে গণহারে ছাত্রদের অকৃতকার্য হওয়া সকল উৎকণ্ঠাকে ছাড়িয়ে গেছে। একই সঙ্গে বিদ্যালয়ের নগ্নরূপ বেরিয়ে এসেছে। ভাবা যায়, ১৬৮ জন ছাত্রের মধ্যে ১৩৬ জনই অকৃতকার্য। অবশ্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব ) বলেছেন ফলাফল কেন এরকম হল তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
ফল বিপর্যয়ের পেছনের যে কারণ সংবাদ পত্রে প্রকাশিত হয়েছে তা ভীষণ উদ্বেগজনক। গণিত বিষয়ের প্রশ্ন ও খাতা মূল্যায়ন করেছেন যে শিক্ষক (সাইফুল ইসলাম) তিনি কোচিংয়ে ছাত্র বাড়ানোর অপকৌশল হিসেবে একাজ করেছেন বলে প্রকাশ । ঘটনাটি যদি সত্যি হয় তাহলে প্রথমে যে কথাটি মনে আসে তা হলো , ওই শিক্ষক বা উনার সহকর্মীদের বিদ্যালয়ের ইতিহাস- ঐতিহ্যসম্পর্কে ন্যুনতম ধারণা নাই। অন্য পাঁচটা বিদ্যালয়ের মতো আর স্রেফ সরকারি চাকরি হিসেবে বিবেচনা করা এ ক্ষেত্রে ভুল-ভীষণ ভুল। আরেকটি বিষয়, রাণী বিলাস মনি সরকারি বালক বিদ্যালয়টি চলতি দায়িত্বের প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলতে পারে না। প্রশাসনের দ্রুত বিষয়টি হস্তক্ষেপ করা জরুরি এবং তা অনতিবিলম্বে।
বহুমাত্রিক.কম