Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪

কেন বারবার এই ‘মৃত্যু পরোয়ানা’ নেতাজিকে?

জয়ন্ত চৌধুরি

প্রকাশিত: ১৫:৫০, ৮ জুন ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

কেন বারবার এই ‘মৃত্যু পরোয়ানা’ নেতাজিকে?

তাঁর প্রতি মৃত্যু পরোয়ানা অনেক আগেই জারি করা হয়েছিল। জাতীয় কংগ্রেসের দু’বারের নির্বাচিত সভাপতি, পরাধীন দেশের রাজবিদ্রোহীকে সেদিন ব্রিটিশ তল্পিবাহক কিছু ‘প্রভাবশালী’ জাতীয় নেতৃত্বের অকর্মণ্যতার কারণে জীবন বাজি রেখে তাঁকে অতি গোপনে মাতৃভূমি ত্যাগ করতে হয়েছিল ছদ্মবেশে, ছদ্মনামে। নিরুদ্দেশের পথিক যখন কাবুল কান্দাহার আফগানিস্তানের বন্ধুর পার্বত্যপথ ডিঙিয়ে চলেছেন তখন ব্রিটিশ গোয়েন্দাকুল তীব্র আত্মশ্লাঘায় দহনসিক্ত। প্রকাশ্যে তারা সুভাষ বোসকে ভগৎ সিং কিংবা যতীন দাসের মতো পৃথিবী থেকে চিরদিনের জন্য সরিয়ে দেবার কৌশলে ব্যর্থ হলেও অতি গোপনে এক হিংস্র বর্বর হত্যার ফরমান জারি করে। কুখ্যাত স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের উপর নির্দেশ আসে দেশত্যাগী ইউরোপযাত্রী সুভাষ বোসকে দেখামাত্র গুলি করে মেরে ফেলার। এবারও ব্যর্থ হয়।

জার্মানি থেকে ‘আমি সুভাষ বলছি’ বেতার ভাষণ ভেসে আসা কিংবা ডুবো জাহাজে তিন মাস অভিযাত্রা শেষে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রণাঙ্গন থেকে ভারতের মূল ভূখণ্ডে নেতাজির অভিঘাত, পরিণামে দ্রুত সেইসব ‘অনশন-আন্দোলন ক্লান্ত প্রাসাদ বন্দি’ নেতাদের হাতে চুক্তিভিত্তিক শাসন ক্ষমতা তুলে দিয়ে ভারতভূখণ্ড ত্যাগ। ১৯৪২ এবং ১৯৪৫-এর ফেব্রুয়ারি ও এপ্রিল মাসে নেতাজি সপার্ষদ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন এমন সংবাদ রটনা করা হয়েছিল বিশ্বব্যাপী নেতাজির নানা স্তরে যুক্ত নেটওয়ার্ক ভেঙে দিতে। তীক্ষ্ণ মেধাসম্পন্ন বিপ্লবী সুভাষ বোস সেই অপপ্রচারকে হাতিয়ার করে ১৯৪৫-এর ১৮ আগস্ট ফরমোজার তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় ‘মৃত্যু’র স্রেফ আষাঢ়ে গল্প রটিয়ে রাশিয়ার পথে ‘হারিয়ে’ গেলেন আর নানা অসংগতি সৃষ্টি করে ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন নতুন পথে প্রত্যাবর্তনের।

নেহরু ক্ষমতা ভোগের পথ নিষ্কণ্টক করতে সুভাষের বিমান দুর্ঘটনায় ‘মৃত্যু’কে প্রতিষ্ঠা করতে প্রকাশ্যে আমৃত্যু লড়েছেন এবং সেই ব্যাটন তুলে দিয়ে গিয়েছেন তাঁর অনুগত স্তাবককুলের হাতে। বারংবার ‘মৃত্যু’র আড়ালে হারিয়ে যাওয়া ‘মৃত ভূত’ সুভাষ-আতঙ্কে শুধু ব্রিটিশ নয়, নেহরুর নিদ্রার ব্যাঘাত ঘটেছিল। দ্বিচারী নেহরু প্রকাশ্যে আজাদ হিন্দ যোদ্ধাদের পক্ষ নিতে লালকেল্লার বিচারসভায় যান আর সেই ১৯৪৬-এর ডিসেম্বরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট অ্যাটলিকে চিঠি লিখে জানান আপনাদের যুদ্ধাপরাধী বোসকে রাশিয়া আশ্রয় দিয়ে বিশ্বাসঘাতকতার কাজ করেছে। একদা নেতাজি অনুগত কয়েকজনকে নিজের পক্ষে নিয়ে আজাদ হিন্দ ফান্ড ও ব্যাংকের কোটি কোটি টাকার ধনসম্পদ বাঁটোয়ারা হয়ে যায়। মূলত নেহরু অ্যান্ড কোম্পানির এই কাণ্ডটি গোপনে করার উদ্দেশ্য ছিল পরবর্তী ৩০ বছরের মধ্যে পৃথিবীর যেকোনও প্রান্তে সুভাষচন্দ্র যদি স্বনামে ও স্বপরিচয়ে আত্মপ্রকাশ করার চেষ্টা করেন তাহলে নিয়মানুযায়ী যুদ্ধ অপরাধী ‘ব্রিটিশ সাবজেক্ট’ সুভাষচন্দ্রকে আন্তর্জাতিক বিচারের সামনে দাঁড়াতে হবে এবং ভারতকে সেখানে অংশগ্রহণ করতেই হবে। নেতাজির কোর্ট মার্শাল পর্বে নেহরু থাকলে দেশের তৎকালীন জাগ্রত জনমত বিদ্রোহী হয়ে উঠত ও নেহরু সরকারের মুখ পুড়ত। কৌশলী পথে হাঁটলেন নেহরু। নেতাজি প্রকাশ্যে এলে তাঁকে শনাক্ত করতেন শিশুকন্যা কোলে তাঁর ‘স্ত্রী’। পরিকল্পনা মতো প্রকৃত সুভাষচন্দ্রকে ‘জাল’ সুভাষ ঘোষণা করা হত এবং তাঁর জায়গা হত কারাগারে। সুভাষচন্দ্র স্বাভাবিকভাবেই ‘স্ত্রী কন্যা’র গল্প মেনে নিতে পারতেন না। নেহরুও সেই সময় পর্যন্ত বোসবাড়ির কাউকে কাউকে সম্পূর্ণ বিশ্বাসভাজনের তালিকায় আনতে পারেননি। ‘স্ত্রী’ দ্বারা শনাক্তকৃত প্রকৃত সুভাষচন্দ্র হয়তো কাশ্মীরে বন্দি শ্যামাপ্রসাদের মতোই রহস্যজনকভাবে শেষ হয়ে যেতেন আর বিমান দুর্ঘটনায় ‘মৃত’ সুভাষকে নিয়ে দেশে কোনও ঢেউ ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হত না। আজাদ হিন্দের লুটপাটের টাকা থেকে নয়, ভারত সরকারের টাকা ‘স্ত্রী, কন্যা’র কাছে পাঠানোর অনেক উদ্দেশ্যর মধ্যে একটি ছিল ওই বিদেশিনি যেন ‘স্ত্রী’র মর্যাদা নিতে এদেশে না-আসেন এবং নির্বাচিত সাংবাদিক ছাড়া অন্য কারও সঙ্গে কথা না বলেন। তাতে প্রকৃত সত্য প্রকাশ হওয়ার ভয় ছিল। কথা রেখেছিলেন বিদেশিনি। ‘কন্যা’ও কোনও দিন নেতাজি তদন্ত নিয়ে তেমন আগ্রহ দেখাননি। বরং বিরোধিতাই করেছেন এবং সেই ‘চিতাভস্ম’ ভারতে আনার দাবি জানিয়েছেন। একটি বইতে একই তারিখে ‘স্ত্রী’র তোলা পৃথক পৃথক চেহারার ছবি ছাপা হয়েছে! তবু বুদ্ধিজীবী-পণ্ডিত মহল নীরব। নেহরুর প্রভাব কত গভীর!

যে এগারোটি রাষ্ট্র আজাদ হিন্দ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল তারা আজও নেতাজির ‘মৃত্যুদিন’ ঘোষণা করেনি। গত ৭০ বছরে একমাত্র ব্যতিক্রম ব্রিটিশ কমনওয়েলথ সদস্য ভারত। যাবতীয় নথিপত্র গোপন রেখে ফাটা রেকর্ডের মতোই শুধুমাত্র বিমান দুর্ঘটনা ও পাঁচমেশালি ছাইয়ের গল্প বলেছে এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দিয়ে বলিয়েছে। গোপনে ছাইভস্ম রক্ষার জন্য জাপানে একসময় নিয়মিত টাকাও পাঠানো হ’ত।

ব্রিটিশ-মার্কিন গোয়েন্দারা সুভাষ বোসের জন্য হন্যে হয়ে গিয়েছিল। সে সময় রেনকোজিতে রেখে দেওয়া ভস্ম পরীক্ষা করে তাঁরা সিদ্ধান্তে আসেন ওই ভস্ম আদৌ সুভাষ বোসের নয়। এমনকী আদৌ কোনও মানুষের নাও হতে পারে। মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ১৯৬৪-র ফেব্রুয়ারিতে বোস ভারতে ফিরতে পারেন। অন্যদিকে, ১৯৪৬-এ ব্রিটিশ নথিতে জানা গিয়েছে যুদ্ধাপরাধী বোস ভারতে ফিরলে কী কী ভাবে বিচার হবে। সিদ্ধান্তে আরও লেখা হয়েছে, তিনি যেখানে আছেন সেখানেই থাকুন। তাঁকে আত্মসমর্পণ না করতে বলাই ভালো। প্রকাশিত নতুন নেতাজি ফাইলগুলি ঘেঁটে আরও স্পষ্ট হয়েছে যে সুভাষচন্দ্র রাশিয়া ও চীনে সক্রিয় ছিলেন। একাধিক বেতার ভাষণও দেন। কোথাও কোনও জেলে বন্দি বা হত্যা করা হয়েছে এমন বিশ্বাসযোগ্য সূত্রও মেলেনি। অনেক ফাইল রহস্যমূলকভাবে নিখোঁজ ও অসম্পূর্ণ।

নেহরুর আমলে জনমতের চাপে গঠিত শাহনাওয়াজ কমিটি ও ইন্দিরা আমলের খোসলা কমিশন পরিকল্পনা মতো রায় দেয় তাইহোকুতে নেতাজি মৃত ও চিতাভস্ম নেতাজির। শাহনাওয়াজ কমিটির সদস্য ও নেতাজির সেজদাদা সুরেশচন্দ্র বসু এবং মুখার্জি কমিশনের বক্তব্য ১৯৪৫-এর ১৮ আগস্ট কোনও বিমান দুর্ঘটনাই ঘটেনি। সারা পৃথিবীতেই সেদিন কোনও বেসরকারি বা সামরিক বিমান ভেঙে পড়েনি। খোদ তাইওয়ান সরকার জানায় ওইদিন এবং কাছাকাছি সময় আগে পরে কোনও বিমান ভেঙে পড়েনি।

বিমান দুর্ঘটনা ও চিতাভস্মর গল্প ফেরি করার অনেক বাধ্যবাধকতা ছিল নেহরুর। উত্তরসূরিরাও উপকৃত হবার কারণে তা বইতে বাধ্য। ভারতে বা অন্য কোথাও যদি প্রকৃত সুভাষচন্দ্রকে ধরা যেত তাহলে তাঁকে নিকেশ করে দিলে কেউ জানতেও পারত না সে সত্য। কারণ, তিনি ভারত সরকারের কাছে সরকারিভাবে তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় মৃত। এমনকী এই মতের ভিত্তিতেই সম্প্রতি আরটিআই জবাব ছিল কেন্দ্রের। ২০০৬ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দম্ভভরেই জানান ভারত সরকার আজও শাহনাওয়াজ ও খোসলা কমিশনের রায়কেই চূড়ান্ত বলে মনে করে। মুখার্জি কমিশন বিমান দুর্ঘটনার তত্ত্ব খারিজ করেছিল। সেটা মানে না। ভারতের কাঁধে মিথ্যার ভার কতটা চেপে বসেছে তার এক ঝলক দেখলেই অনুমান করা যায়। সেদিনের তাইহোকুর শ্মশানঘাটের অন্ত্যেষ্টি তালিকায় বাইশ বছরের মৃত সৈনিক ইচিরো আকুরা মারা গিয়েছিলেন হৃদযন্ত্র বিকল হওয়ার কারণে। জাপানি ভাষায় লেখা সেই ডেথ সার্টিফিকেটকে বেমালুম চালিয়ে দিলেন শাহনাওয়াজ থেকে খোসলা, নেহরু থেকে মনমোহন সরকার এমনকী বৃহত্তর বসু পরিবারেরও কেউ কেউ। রেনকোজি সফরে গিয়ে ভিজিটর বুকে নেহরু কিংবা ইন্দিরার মনে নেতাজি নয়, শুধুমাত্র বুদ্ধদেবের বাণীই সঞ্চারিত হয়েছিল। ’৮৯-র সেপ্টেম্বরে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে সংরক্ষিত ওই ছাইভস্মের সঙ্গে রেনকোজি মন্দির ভস্মীভূত হয়। অলৌকিকভাবে নবনির্মিত ওই মন্দিরে নতুন কাঠের আধারে আবির্ভাব ঘটে নতুন ব্রাউন পেপারে মোড়া টুকরো টুকরো কালো কারও অস্থি। আরও বিস্ময়করভাবে ভস্মের পরিবর্তে জায়গা নিয়েছে মাথার খুলির বড় বড় আধপোড়া হাড়গোড়। তিন রকমের মৃত্যু সময়, অন্ত্যেষ্টির সময়, কমপক্ষে তিন ধরনের বিভিন্ন সময়ে প্রকৃত নেতাজির ‘ডেথ সার্টিফিকেট’। শেষটি বানানো হয়েছিল ১৯৮৮ সালে এক প্রভাবশালী ভারতীয়র পরামর্শে। এমনটাই মুখার্জি কমিশনের লিখিত সাক্ষ্যে জানিয়েছিলেন ডাঃ ইয়োমিমি। বিস্ময়কর ব্যাপার হল তিনি সুভাষচন্দ্রকে চিনতেনও না। বিমানে নাকি নেতাজির পাশেই বসেছিলেন তাঁর বিশ্বস্ত সহযোদ্ধা কর্নেল হবিবুর রহমান। তিনি রইলেন অক্ষত। ব্রিটিশ গোয়েন্দাকে বারংবার বিভ্রান্ত করেছেন। পরে জানিয়েছিলেন তিনি সেনানায়কের নির্দেশ পালন করে গেছেন মাত্র। আদৌ কোনও বিমান দুর্ঘটনা ঘটেনি। নেহরু রাজত্বে তাঁর স্থান হয়নি, তিনি পাকিস্তানের নাগরিকত্ব নিতে বাধ্য হন। তবুও আমাদের বিশ্বাস করতে হবে এই মিথ্যাকে দিনের পর দিন শিশুপাঠ্য থেকে উচ্চতর শ্রেণির বইতে। সবজান্তা উইকিপিডিয়ার সাইটেও এই মিথ্যার প্রতিকার হয়নি। যেমনটা হয়নি নেতাজি রিসার্চব্যুরোর কৃপাধন্য কোনও কোনও ঐতিহাসিক গবেষকের নানা প্রকাশনায়। নেতাজি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম প্রত্যাশার পারদ চড়িয়ে দিয়েছিলেন দেশবাসীর হৃদয়ে। মমতার পথে হেঁটেছিলেন প্রধানমন্ত্রীও। ব্যস্ত মমতা জানতেও পারেননি নেতাজি মহানিষ্ক্রমণ সংক্রান্ত ফাইলগুলিসহ আরও অনেক নেতাজি ফাইল প্রকাশিত হয়নি। মাত্র ৬৪টি নয়, মুখার্জি কমিশনের কমপক্ষে ১২টি ফাইল রাজ্য সরকারের হেফাজতে ছিল সেগুলি নেই।

দিল্লির গান্ধী কিংবা নেহরু সংগ্রহশালায় প্রবেশের জন্য টিকিট কাটতে হয় না, কিন্তু নেতাজি মিউজিয়ামে টিকিট লাগে। মমতার সরকার এটি অধিগ্রহণ করলে অনেক সত্য প্রকাশ হয়ে যাবে। গত বছর মাধ্যমিকের নবম-দশম শ্রেণির সিলেবাস থেকে নেতাজি ও আজাদ হিন্দের অবদান বাদ দেওয়া হয়েছে কাদের বদান্যতায়? মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে কি আদৌ জানানো হয়েছিল? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও হয়তো অন্ধকারে আছেন। কারণ, কেন্দ্র কেন মাত্র ৩০৩টি ফাইল প্রকাশ করে ক্ষান্ত দিল? মিলিটারি আর্কাইভে রাখা আইএনএ ফাইল ও ছবিপত্র গেল কোথায়? ১৯৭১-এর ১২ জানুয়ারি ইন্দিরা গান্ধীর আমলে চোদ্দোটি রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রসংঘের যুদ্ধাপরাধ সংক্রান্ত চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে ভারত। সে সময়ে ভারতের তরফে যুদ্ধাপরাধী কে ছিলেন? চুক্তি অনুযায়ী আর তিরিশ বছর নয়, যত বছর বাদেই যিনি ধরা পড়বেন তাঁর বিচার হবে। যত বয়সই হোক ফাঁসি কিংবা গুলিতে তাঁকে প্রাণ হারাতে হবে। উল্লেখ্য ভারতের মতো আরও কয়েকটি রাষ্ট্রে এখনও নানা উপায়ে অপরাধীদের প্রাণদণ্ড দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর আরটিআইয়ের জবাবে নেতাজি যুদ্ধাপরাধী নয় জানালেও জানাতে হবে ১৯৭১-এ কে ছিলেন যুদ্ধপরাধী?

উত্তরপ্রদেশে আদালতের নির্দেশে গঠিত সহায় কমিশন ভগবানজির প্রকৃত পরিচয় নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে। বিব্রত হয়ে পড়েছে ‘এয়ার ক্র্যাশ’ পন্থী রাজনীতিক ও স্তাবকরা। ভগবানজি নেতাজি ছিলেন না, তিনি সম্ভবত নেতাজির পরিচিত কেউ ছিলেন এমন একটা ভাবনা আরোপের কৌশলেই চাপ সৃষ্টি করা হল কমিশনে। দুর্ভাগ্যের বিষয় সহায় কমিশন কলকাতায় এসে ভগবানজির ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সাক্ষ্য গ্রহণের ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত নারাজ। কেন? কীসের প্রভাবে? বারবার কেন নেতাজির মৃত্যু পরোয়ানা শোনানো হচ্ছে, তার নেপথ্য কারণগুলি নিয়ে ‘সিট’ গঠন করা জরুরি। সহায় কমিশনের হাতে অজস্র প্রমাণ এসেছে। সদিচ্ছা ও স্বাধীনতা থাকলে এবং পেলে নেতাজি রহস্য উন্মোচন আদৌ কোনও কঠিন কাজ নয়। তদন্তকে গুলিয়ে দেবার জন্য, দেশবাসীর মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে এবং নেতাজি ও আজাদ হিন্দের প্রতি নানা অবিচার, পাপ থেকে নিষ্কৃতি পেতেই বারংবার বিমান দুর্ঘটনার গল্প চালানো হচ্ছে।

লেখক : নেতাজি গবেষক এবং মুখার্জি কমিশন ও সহায় কমিশনে সাক্ষ্যদাতা

বর্তমান এর সৌজন্যে

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer