ছবি: বহুমাত্রিক.কম
কুষ্টিয়া : আক্কাস আলী শেখ। মিরপুর উপজেলা গৌড়দহ এলাকার বাসিন্দা। নিজের কোন জায়গা জমি না থাকলেও অন্যের জমিতে মাথাগোজার একটি কোন রকমে টিনের ছাপড়া ঘরের মধ্যেই কষ্ট করে থাকতে হয় তাকে।
বয়স আনুমানিক ৮০ বছর । তবে দেশ স্বাধীনের আগেই তার স্ত্রী মারা যায়। মাঠে কৃষি কাজের পাশাপাশি নাপিতের (নরসুন্দর) কাজ করতেন। কিন্তু বৃদ্ধ হওয়ায় আর পেরে ওঠেন না। তাই অনেকটাই বাধ্য হয়েই ভিক্ষা করতে হয়।
অন্যের কাছ হাত পেতে ভিক্ষাবৃত্তি করতেও লজ্জাবোধ করেন তিনি। তবুও জীবিকার তাগিদে তাকে এই ভিক্ষাবৃত্তি করা লাগে। তিনি জানান, সারাদিন পায়ে হেটে হেটে মানুষের বাড়ীতে বাড়ীতে গিয়ে একমুঠো করে চাল নিয়ে সারাদিন শেষে মাত্র কয়েক কেজি চাল পায়। তা দিয়ে কোন রকমে চলে যায়।
আক্কাস আলী শেখ বলেন, সরকারি লোকেরা আমার নামের তালিকা নিয়ে গেছেন। শুনেছি সরকার নাকি ভিক্ষা করা বন্ধ করে দেবে। সাথে একলাখ টাকা দেবে। টাকা পেলে তো আর ভিক্ষা করা লাগবে না।
কুষ্টিয়া জেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে কুষ্টিয়া জেলা থেকে ভিক্ষাবৃত্তি দূর করতে জেলা প্রশাসন ‘ভিক্ষুকমুক্তকরণ, ভিক্ষুকদের কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসন কর্মসূচি’ হাতে নিয়েছে।
এ নিয়ে বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে বিষয়টি নিয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় জানানো হয়, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের অধীন সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী জেলায় বর্তমানে ভিক্ষুকের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. জহির রায়হান। সভায় বিভাগীয় কমিশনার মহোদয়ের নির্দেশনা মোতাবেক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কুষ্টিয়া জেলাকে ভিক্ষুক মুক্ত করার লক্ষ্যে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় বলে জানান জেলা প্রশাসক।
তিনি আরও জানান, জেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় সব ধরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে। ভিক্ষুকের হাতকে কর্মীর হাতে পরিণত করতে বিভিন্ন আয়বর্ধক খাতে সম্পৃক্ত করা হবে। ছোটখাটো ব্যবসা করতে সহায়তা দেওয়া হবে। এরপর যদি কেউ ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত থাকেন, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক, শিক্ষা ও আই,সি,টি) মোঃ মুজিব-উল-ফেরদৌসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক আনার কলি মাহবুব, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ হাবীববুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবু হেনা মোঃ মুস্তাফা কামাল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরপ্রধানগণ ও এনজিও প্রতিনিধি ও ইউপি চেয়ারম্যানগণ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, ২৪ আগস্টের মধ্যে ভিক্ষুক জরিপ প্রক্রিয়া শেষ হবে। এখানে আনুমানিক ২৫০ ভিক্ষুকের বসবাস বলে তিনি উল্লেখ করেন। ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিতে উদ্বুদ্ধ করার পর পুনর্বাসনের লক্ষ্যে কর্মক্ষমদের প্রশিক্ষণ এবং বয়স্ক ও বিধবাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।
একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় খুলনা বিভাগীয় কমিশনারের সার্বিক তত্বাবধায়নে সেখানে আনন্দ নিকেতনের কাজ শেষ হলে বিভাগের সব ভিক্ষুককে সেখানে পুনর্বাসিত করা হবে। সেখানে তাদের বিভিন্ন কুটির শিল্প, কারিগরি, কৃষি ও রান্নাসহ বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
ভিক্ষুকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হবে। এছাড়াও থাকবে খেলাধুলার ব্যবস্থা। ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন ও তাদের প্রতিপালন করার জন্য একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। এ তহবিলে রোটারি ক্লাব, জেলা পরিষদ, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, বিত্তশালী ব্যক্তি ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হবে।
তবে এখন পর্যন্ত কেন্দ্র নির্মাণের জমি বাছাইয়ের কাজ চলছে। প্রাথমিকভাবে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলায় এ পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কেন্দ্রের জন্য ১৫ একর জমি প্রয়োজন। চলতি বছরের মধ্যেই এ কেন্দ্র নির্মাণ করে ভিক্ষুকদের পুনর্বাসনের কাজ সম্পন্ন করতে চায় বিভাগীয় প্রশাসন।
বহুমাত্রিক.কম