ছবি- বহুমাত্রিক.কম
কুষ্টিয়া: সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি বলেছেন, সংস্কৃতি চর্চা বেগবান হলেই কেবল এই শিল্পকলা একাডেমির নির্মাণ করা স্বার্থক হবে। সোমবার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমির নতুন ভবন প্রাপ্তি উপলক্ষে আনন্দ উৎসবের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, শিল্প-সংস্কৃতির আলোয় আলোকিত হলে মানুষ উন্নত মানসিকতা সম্পন্ন হবে। সংস্কৃতির সুষ্ঠু চর্চা ও বিকাশ হলে উগ্রতা ও জঙ্গিবাদ থেকে তরুণ প্রজন্ম দূরে থাকবে। দেশবাসী সবাই শিল্প-সংস্কৃতিমনা হোক, সেটাই চাই।
তিনি আরও বলেন, আমি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করেছি, তবে মূলত আমার ভূমিকা ছিল সংগঠকের। তখন অভিনয় করার দিকে মন ছিল না, অন্যদিকে ছিল। ওই সময়টা আমাকে তৈরি করে দিয়েছে।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, স্বাধীনতার আগে শোষক গোষ্ঠীদের মাঝেও সাংস্কৃতিক কর্মীদের ভূমিকা ছিলো চোখে পড়ার মতো।সংস্কৃতিবান মানুষরা তখন তাদের বাড়ীতে বিষাধ সিন্ধু এবং সঞ্চয়িতার মতো বই রাখতো। কিন্তু বাড়ীতে বাড়ীতে এখন আর তেমন চর্চা নেই। আগামী তে নতুন প্রজন্মকে এই সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত করার আহবান জানান তিনি।
কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ, কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. আ.ক.ম সরওয়ার জাহান বাদশা, তারিক হাসান এসোসিয়েটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক হাসান, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের প্রশাসক হাজী রবিউল ইসলাম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান যে কুষ্টিয়াতে অত্যাধুনিক মানের শিল্পকলা একাডেমি ভবন নির্মিত হচ্ছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পর কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমিকে ধরা হয়েছে দ্বিতীয় বৃহত্তম একাডেমি ভবন। এটি নির্মাণের ফলে জেলার সাংস্কৃতিক চর্চা বিশ্ব দরবারে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। জেলার কৃষ্টি-কালচারকে দেশ তথা বিশ্ব দরবারে পরিচিত করতে কুষ্টিয়া শিল্পকলা একাডেমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
কুষ্টিয়ায় এই দৃষ্টিনন্দন শিল্পকলা একাডেমি আমাদের জন্য অবিশ্বাস্য ছিলো উল্লেখ করে এমপি হানিফ বলেন, দেশের সব জেলায় একই রকমের করে থাকে। কিন্তু আমি চেষ্টা করেছিলাম এবং আসাদুজ্জামান নূর কে অনুরোধ করে ছিলাম ব্যতিক্রম কিছু হোক। অবশ্য ভালো কিছু হোক এটাও চেয়েছিলেন নূর সাহেব। ঢাকার পরেই কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমি। স্থাপত্যশৈলীর জন্য তারিক হাসান কে ধন্যবাদ জানান এবং তৎকালীন মন্ত্রীকেও ধন্যবাদ জানান তিনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে তিনি বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য শেখ হাসিনা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দেশ পরিচালনা করে আসছে। ২০৩১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যাবে। গোটা জেলার উন্নয়ন হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কারণে।
তিনি আরও বলেন, ‘সংস্কৃতিবান্ধব সরকারের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুষ্টিয়াবাসীকে উপহার হিসেবে আধুনিক শিল্পকলা একাডেমি নির্মাণ করে দিয়েছেন। এটি সংস্কৃতি প্রেমীদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পূরণ হলো বলেও যোগ করেন তিনি।
স্বাগত বক্তব্যে কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম বলেন, যেখানে মুল্যবোধ ও দেশাত্মবোধ হারিয়ে যাচ্ছে, সেখানে সংস্কৃতি চর্চাকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আজকের এই দিনটির জন্য আমাদের ৫০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। দীর্ঘদিন পর এই শিল্পকলা একাডেমির স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তিনি বলেন এই শিল্পকলার জন্য অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা রয়েছে এর মধ্যে। তিনি ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের (সদর) সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফকে।
কুষ্টিয়ার উন্নয়নের রুপকার এমপি হানিফের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে তিনি বলেন, হানিফ সাহেবের মতো নেতা এবং অভিভাবক পেয়েছি বলেই আমরা এখানে গড়াই নদীর উপর শেখ রাসেল সেতু পেয়েছি, মেডিকেল কলেজ পেয়েছি, আমরা এখানে এসেছি আমরা অত্যাধুনিক সংস্কৃতিক কমপ্লেক্স পেয়েছি। স্টেডিয়ামে পেতে যাচ্ছি। এটা কেবল সম্ভব হয়েছে এমপি হানিফ এর কারনে।
এরআগে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে তিনদিনব্যাপী এ উৎসবের উদ্বোধন করেন অতিথিবৃন্দ। পরে লাঠিখেলার আয়োজন ছিলো মনোমগ্ধকর। আলোচনা সভা শেষে জেলাশিল্পকলা একাডেমীর শিল্পীসসহ বিভিন্ন শিল্পীগোষ্ঠীদের সমন্বয়ে সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়। এসময় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপি দুইটি কবিতা আবৃত্ত করে শোনান।
প্রসঙ্গত, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ শিল্পকলা একাডেমী ২০১৭ সালের জুলাই মাসে তৎকালীন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ঢাকার পরেই কুষ্টিয়া জেলা শিল্পকলা একাডেমির অবস্থান হবে।
যেখান রয়েছে ৩টি অত্যাধুনিক অডিটোরিয়াম। এর মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক ফিক্স অডিটোরিয়াম, মাল্টিপারপাস অডিটোরিয়াম এবং এরিনা মঞ্চ। এক একর জায়গার ওপর নির্মাণ করা হয়েছে এই কমপ্লেক্স ভবন। বাংলাদেশের মধ্যে এটিই সেরা অত্যাধুনিক কমপ্লেক্স শিল্পকলা একাডেমী ভবন।
বহুমাত্রিক.কম