ছবি- বহুমাত্রিক.কম
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নে কুরমা সীমান্তে (বর্ডার) ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ধলই জেলার কমলপুরে বর্ডার হাটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুন্সী এম.পি ও ভারতের ত্রিপুরা সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী বলেন, সীমান্ত হাট স্থাপনের মধ্যে দিয়ে দু’দেশের মানুষের মধ্যে মেলবন্ধন সৃষ্টি হবে। এই বর্ডার হাট স্থাপনের কারণে সীমান্তে চোরাচালান বন্ধ হয়ে যাবে এবং উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ হবে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সীমান্তবর্তী মানুষ হাতের নাগালে পাবে। স্থানীয়রা নানা পণ্য হাট থেকে কিনতে পারবে। এতে দু’দেশের মধ্যে ভ্রাতৃত্বও বাড়বে। এছাড়া পর্যটনের ক্ষেত্রেও প্রসারতা লাভ করবে।
ভারতের ত্রিপুরা সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মাতৃতুল্য আখ্যায়িত করে বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকার ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকে দুই মহান ব্যক্তির মাধ্যমে দু’দেশের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়েছে। উনাদের মাধ্যমে লাগাতারভাবে দেশ এগিয়ে চলেছে। দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন তরাম্বিত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ত্রিপুরা রাজ্যের ৮টি স্থানে বর্ডার হাট স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এটি নিয়ে ৩টি বর্ডার হাট চালু হতে যাচ্ছে। এই বর্ডার হাট স্থাপনের মধ্যদিয়ে দু’দেশের মানুষ পণ্য কেনাবেচা করতে পারবেন।
ত্রিপুরা সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে ট্রেন যাচ্ছে, ট্রেন আসবে। দু’দেশের ট্রেন যাতায়াত করছে। বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে জলপথ খুলে গেছে। ভারতের মধ্যদিয়ে নেপাল বাংলাদেশ থেকে ট্রান্সপোর্টেশন করছে। আমরা পারবো না কেন? ইউরোপিয়ান কান্ট্রিগুলো একসঙ্গে উঠতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারবো না? মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা একত্রিত হয়ে এগিয়ে যাওয়ার যে মন্ত্র দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী যে দায় করেছেন সেটা আজকের এই পদক্ষেপে অনেক শক্তিশালী হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ত্রিপুরা সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি আসার পর ত্রিপুরা থেকে ২৭ লক্ষ টাকা এক্সপোর্ট হতো, এখন ১৩৪ কোটি টাকা ত্রিপুরা দিয়ে এক্সপোর্ট হয় বাংলাদেশ থেকে। এক সময় সেটি বেনাপোল দিয়ে হতো। বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী ব্রিজ ইতিমধ্যে কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আমার খুবই খুশি লাগে যখন মানুষ এই ব্রিজে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিচ্ছে তাতেই প্রতীয়মান যে দু’দেশের মধ্যে মধুর সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার কুরমাঘাট এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ধলই জেলার কমলপুর মোড়াছড়া সীমান্ত হাট এলাকায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত হাটের আনুষ্ঠানিক ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভারতের ত্রিপুরা সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের মন্ত্রী মনোজ কুমার দেব, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী, ভারতীয় দুতাবাসের সহকারী হাই কমিশনার নিরাজ কুমার জয়সওয়ালসহ ত্রিপুরা রাজ্যের উর্দ্বতন কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এম.পি, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট রুমানা ইয়াসমিন, মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশেকুল হক, সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোমাইয়া আক্তার, ইসলামপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. সোলেমান মিয়া প্রমুখ।
কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে দুই দেশের নোম্যান্স ল্যান্ডে ২ একর ভুমিতে কুরমাঘাট-কমলপুর মোড়াছড়া বর্ডার হাট নির্মাণ করা হচ্ছে। ভারত সরকারের অর্থায়নে ৫ কোটি ৩০ লাখ রূপী ব্যয়ে এই বর্ডার হাটের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, কমলগঞ্জের ইসলামপুর কুরমা সীমান্তের ১৯০৩/৩৩ এস পিলারের কাছে এবং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ধলই জেলার কমলপুর মোড়াছড়া এলাকার নোম্যান্স ল্যান্ড উভয় দেশের সমপরিমাণ ২ দশমিক ৭২ একর ভূমিতে বর্ডার হাট নির্মাণ করা হচ্ছে। হাটের বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে এবং ভারতের দিকে আরেকটি ফটক থাকবে।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে মুল অনুষ্ঠানটি ভারতের ত্রিপুরার কমলপুর মোড়াছড়া এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়। সপ্তাহে দুই দিন মঙ্গলবার ও শুক্রবার এই হাট বসবে। তবে স্থানীয়দের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় একাধিক দিনও হাট বসার সিদ্ধান্ত নিতে পারবে হাট ব্যবস্থাপনা কমিটি। সকাল সাড়ে ১১টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত হাটে বেচাকেনা করা যাবে। তৈরি পোশাক, বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য, শাকসবজি, ফলমূল, মাছ, মুরগি, শুঁটকি, সুপারি প্রভৃতি পণ্য বেচাকেনা চলবে বর্ডার হাটে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন ও সীমান্ত এলাকায় বৈধ বাণিজ্য নিশ্চিতে ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করেছিল সীমান্ত হাট কার্যক্রম। সীমান্ত হাটের প্রথম যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালের জুলাই মাসে কুড়িগ্রাম জেলার বালিয়ামারি সীমান্তে সোনাভরি নদের তীরে। উদ্দেশ্য ছিল সীমান্তের দুই পাড়ের মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকা-কে চাঙ্গা করে একদিকে তাদের জীবিকার সংস্থান করা এবং অন্যদিকে তাদের জীবন যাত্রার মানের উন্নয়ন।
বহুমাত্রিক.কম