ঢাকার ক্লাব ক্রিকেট ইতিহাসের কিংবদন্তি ক্রিকেটার দেশের প্রথম বাঁহাতি স্পিনার রাম চাঁদ গোয়ালা আর নেই। শুক্রবার সকালে ময়মনসিংহের ব্রাপল্লী নিজ বাসভবনে পরলোকগমন করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
গত ৯ জুন তিনি স্ট্রোক করলে ময়মনসিংহের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুইদিন আগে বাসায় নেয়ার পর শুক্রবার আবারো স্ট্রোক করলে মারা যান তিনি। কিংবদন্তী এই ক্রিকেটারকে নগরীর কেওয়াটখালি মহাস্মশানে সৎকার করা হয়। তিনি ছিলেন চির কুমার। ক্রিকেটের সঙ্গেই জীবন বেঁধেছিলেন রাম চাঁদ গোয়ালা । খেলা ছাড়ার পর কিছুদিন কোচিংয়ের সঙ্গে ছিলেন রামচাঁদ। জাতীয় দলের ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ তাঁর ছাত্র।
স্কুল ক্রিকেট দিয়ে শুরু রাম চাঁদ গোয়ালার। সেসময় ময়মনসিংহ শহরের মত্যুঞ্জয় স্কুলের ক্রিকেট ও ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন বাঁহাতি এই স্পিনার। ক্লাব ক্রিকেটের হাতেখরি নগরীর পন্ডিতপাড়া ক্লাবের হয়ে। সে সময়ই ঢাকার ক্রিকেটে রামচাঁদ গোয়ালা খেলা শুরু করেন। সড়কপথ ভালো না থাকায় প্রতিদিনই সকালে ট্রেনে ঢাকায় চলে যেতেন আবার খেলা শেষে ফিরে আসতেন। তিনি ময়মনসিংহ আবাহনী ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম।
ঢাকা লিগে ১৯৬২ সালে ভিক্টোরিয়া ক্লাবে স্পিনার হিসেবে অভিষেক হয়। সেখানে ভালো করায় তাকে টেনে নেন ঢাকা মোহামেডান ক্লাবে। সেখানে ৩/৪ বছর খেলার পর টানা ১৫ বছর খেলেছেন ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে আবাহনীর হয়ে। এই ক্লাবে খেলেই তার জশখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা শেখ কামালের অনুরোধে এই ক্লাবটিতে তখন নাম লেখান।
তাকে সবাই আবাহনী গোয়ালা নামে চিনতেন সবাই। ছয় মৌসুম হয়েছেন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি। তার ঘুর্ণির মায়াজালে বধ হয়েছেন রাণাতুঙ্গা ও অরবিন্দ ডিসিলভার মতো তারকা ক্রিকেটাররা। জাতীয় দলের হয়ে ম্যাচ খেলার খুব একটা সুযোগ পাননি। তবে ক্যারিয়ার শেষ করেছেন গ্রেটার ময়মনসিংহের ক্রিকেট ক্লাব টিএমসিসি’র হয়ে।
এই কীর্তিমান ক্রিকেটার ৫৩ বছর বয়সেও প্রতিযোগিতামুলক ক্রিকেট খেলেছিলেন। ময়মনসিংহে ক্রিকেট শুরু হলেও সত্তর ও আশির দশকে রাম চাঁদ গোয়ালা ছিলেন ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগের নিয়মিত পারফরর্মার।
ক্রীড়া লেখক সমিতির তিনবারের সেরা খোলোয়ার বাঁহাতি স্পিনার রাম চাঁদ গোয়ালা। তিনি ছিলেন চির কুমার। ক্রিকেটের সঙ্গেই জীবন বেঁধেছিলেন তিনি। জীবন শায়াহ্নে তিনি সাকিব আল হাসানের মাঝে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখেছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন নিজ বাসায় নীরব জীবন যাপন করেন। ক্রীড়াপ্রেমী ও ক্রীড়া সংগঠকদের মুখে মুখে ছিল ‘গোয়ালাদা’ বলে ডাক। তার বড় ভাইয়ের নাতি প্রাঞ্জল গোয়ালা জানান, শুক্রবার সকালে ঘুমের মধ্যেই পরলোকে গমন করেন তিনি।
বহুমাত্রিক.কম