ছবি : বহুমাত্রিক.কম
মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারের চা বাগান সমুহে উৎপদান নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বহুজাতিক কোম্পানি ডানকান ব্রাদার্স সহ বিভিন্ন বাগান থেকে কেটে ট্রাকযোগে প্রতি রাতে শত শত কেজি কাঁচা চা পাতা চুরি হচ্ছে। চা গাছে লাল মাকড়সা চায়ের উৎপাদনে প্রভাব ফেলছে। সেকশন থেকে চায়ের কঁচি পাতি উত্তোলন বা চয়নে হাতের বদলে যন্ত্র ‘কাঁচি’ ব্যবহারের ফলে দ্রুত গজাচ্ছে না নতুন পাতি। বাগান কর্তৃপক্ষ পুলিশ প্রশাসনকে অভিযোগ দিয়েও কোন কাজে আসছে না। ফলে চা বাগানে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন ও উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা বোধ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলার শমশেরনগর, আলীনগর ও চাতলাপুর ও এর ফাঁড়িসহ বিভিন্ন চা বাগানের সেকশন সমুহ থেকে দুষ্কৃতিকারী সংঘবদ্ধ চক্র প্রতি রাতে ট্রাক যোগে কাঁচা চা পাতা পাচার করছে। সন্ধ্যার পর থেকেই এই গ্রুপে গ্রুপে ভাগ হয়ে বাগানের সেকশন সমুহে ছড়িয়ে পড়ে। সিন্ডিকেট ঐ চক্রটি লোহা জাতীয় দা, কাঁচি নিয়ে বাগানের সেকশনে প্রবেশ করে কাঁচা চা পাতা কেটে এক থেকে দেড় হাজার কেজি কাঁচা চা পাতা ট্রাক বোঝাই করে নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। চা বাগানের পাহারাদাররা প্রতিরোধের চেষ্টা করলে দুষ্কৃতিকারীরা তাদের ধাওয়া করে ও মারপিট করে। বিভিন্ন সময়ে মামলা মোকদ্দমা দিয়েও কর্তৃপক্ষ কোন মতেই তাদের রোধ করতে পারছে না। বিষয়টি বাগান কর্তৃপক্ষ শমশেরনগর পুলিশ প্রশাসনকে মৌখিকভাবে অবহিত করলেও তাতে কোন কাজে আসেনি।
শমশেরনগর চা বাগান ব্যবস্থাপক মো. জাকির হোসেন গত ২১ জুলাই কমলগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে পতনঊষার ইউনিয়নের গুঞ্জরকান্দি গ্রামের আরজত আলী ও তাহের আলীকে দুষ্কৃতিকারী দলের সদস্য হিসাবে উল্লেখ করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে চা পাতা চুরির ঘটনায় ইতিপূর্বে আরও অভিযোগ রয়েছে। তবে চা পাতা কেটে ট্রাকযোগে পাচারের এই ঘটনায় বাগানের কতিপয় পাহারাদারাও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। আবহাওয়ার তারতম্য জনিত কারনে চা গাছে রেডস্পাইডার বা লাল মাকড়সা এর আক্রমনে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে চা বাগান সংশ্লিষ্টরা মত ব্যক্ত করেছেন।
এদিকে চা পাতা চয়নে বর্তমানে নারী শ্রমিকরা লোহার কাঁচি দিয়ে বিভিন্ন বাগান থেকে চয়ন করছেন। চায়ের ইতিহাসে পাতি চয়নে শ্রমিকরা হাত দিয়ে গাছের কঁচি চা চয়ন করতেন। এতে গাছে গাছে দ্রুত চা পাতা গজাতো। তবে লোহা জাতীয় যন্ত্রাংশ দিয়ে পাতি চয়নে এক মাস পর্যন্ত নতুন পাতি গজাতে পারে না বলে সংশ্লিষ্টরা মত ব্যক্ত করেন।
জেলার শমশেরনগর সহ কয়েকটি চা বাগান ঘুরে দেখা যায়, বাগানের সমতল কিংবা উঁচু নিচু টিলা, সেকশন সমুহে নারী শ্রমিকদের প্রত্যেকেই কাঁচি দিয়ে গাছের ডগার কঁচি পাতি কেটে দ্রুত ব্যাগে ভর্তি করছেন। কাঁচি দিয়ে পাতি উত্তোলন বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্মরত একজন শ্রমিক সর্দার বলেন, নারী শ্রমিকদের দায়িত্ব হলো হাতের আঙ্গুল দিয়ে পাতি উত্তোলন করা। এভাবে কষ্ট হওয়ায় এবং নিরিখ পুরো করতে সময় লাগায় ম্যানেজমেন্টের কাছ থেকে লুকিয়ে তারা কাঁচি দিয়ে দ্রুত পাতি উত্তোলন করেন। তিনি আরও বলেন, লোহা জাতীয় কাঁচি দিয়ে গাছের ডগা কাটলে পাতি গজাতে দেরী হয়।
চা বাগানে পাতি উত্তোলনে কাঁচি ব্যবহার বিষয়ে মৌলভীবাজারের একটি প্রাইভেট চা বাগানের মালিক এম.এ.কাইয়ুম বলেন, চা বাগান থেকে কাঁচি দিয়ে কেটে কাচা পাতা চুরি, হাতের বদলে কাঁচি দিয়ে নারী পাতি উত্তোলনের ফলে অদূর ভবিষ্যতে চা বাগান আর থাকবে বলে মনে হয় না। ফলে গাছে নতুন কঁচি পাতি গজাতে বেশ সময় লাগে ও চাহিদা মতো নির্ধারিত হারে উৎপাদন সম্ভব হবে না। তিনি আরও বলেন, বাগান থেকে মূল্যবান গাছগাছালিও চুরি হচ্ছে। সেডট্রি উজার হচ্ছে। এভাবে চা বাগান টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
ডানকান ব্রাদার্স শমশেরনগর চা বাগান ব্যবস্থাপক মোঃ জাকির হোসেন এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বাইরের একটি চক্র চা পাতা কেটে চুরি করে নিয়ে যায়। তাদের প্রতিরোধের চেষ্টা চলছে। এ বিষয়ে কমলগঞ্জ থানায়ও অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া কাঁচি দিয়ে পাতি উত্তোলন করাটা চা গাছের জন্য ক্ষতিকর। তবে নারী শ্রমিকরা কাঁচি দিয়ে কোথাও পাতি উত্তোলন করছেন বলে জানা নেই।
কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আরিফুর রহমান বলেন, সদ্য এই থানায় যোগদান করেছি। বিষয়টি জানা নেই খোঁজ নিয়ে দেখবো।
বহুমাত্রিক.কম