Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৯ ১৪৩১, মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪

কর্মশালা: মারাত্মক অপুষ্টির শিকার সাড়ে চার লাখ শিশু

সৈয়দ মোকছেদুল আলম

প্রকাশিত: ০০:২০, ৫ মার্চ ২০১৯

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

কর্মশালা: মারাত্মক অপুষ্টির শিকার সাড়ে চার লাখ শিশু

ছবি: বহুমাত্রিক.কম

শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ অপুষ্টি। পুষ্টির অভাবে মাতৃগর্ভে শিশুর কাঙ্খিত বৃদ্ধি ঘটে না, শিশুর জন্ম-ওজন কম হয়। খর্বতা, কৃশতা, কম ওজন ও অনুপুষ্টি-কণা ঘাটতি এসব অপুষ্টিরই পরিণতি। কারণ পুষ্টি প্রতিটি মানুষের প্রয়োজনীয় শারীরিক বৃদ্ধি, মানসিক বিকাশ ও অটুট স্বাস্থ্যের গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। অপুষ্টির একটি রূপ পুষ্টিহীনতা, অন্যরূপ- স্থূলতা ও পুষ্টিজনিত অসংক্রামক রোগসমূহ। পুষ্টিহীনতা শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ ব্যহত করে। পুষ্টিহীন শিশু বহুবিধ সীমাবদ্ধতা নিয়ে বেড়ে ওঠে। ফলে পরিণত বয়সে তার পক্ষে সমাজ ও জাতির উন্নতিতে যথাযথ অবদান রাখা সম্ভব হয় না।

পুষ্টি মানুষের মৌলিক অধিকার। পুষ্টিবিধানের সঙ্গে ন্যায্যতা ও সমতার বিষয় জড়িত। মানবিক, সামাজিক ও জাতীয় উন্নয়নের জন্য অপুষ্টি দূর করা জরুরি। দেশব্যাপী শহর ও গ্রামে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের ওজনাধিক্য, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ক্যান্সার ও অস্টিওপোরোসিস (নরম হাড়) বর্তমানে পুষ্টিজনিত সমস্যা হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে। শারীরিক সক্রিয়তার ঘাটতি, কায়িক শ্রমে অনীহা, ত্র“টিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস এবং অলস জীবনযাপন এর জন্য দায়ী। পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ, কৌশলপত্র তৈরি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন- এসবের প্রতিটি ক্ষেত্রে নতুন প্রামাণিক তথ্য রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে ‘বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টিনীতি-২০১৫’ তৈরির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।

বর্তমান সরকার জাতীয় পুষ্টিনীতি-২০১৫ বাস্তবায়ন ও সমন্বয়ের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে। দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন তারই অংশ। দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনায় ২০১৬-২০২৫-এ একটি সমন্বিত ও বহু খাতওয়ারি পুষ্টি কৌশল চিহ্নিত করা হয়; যেখানে ব্যয় সাশ্রয়ী ও প্রমাণনির্ভর কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর ও কর্মক্ষম জীবনযাপন নিশ্চিত করার লক্ষ্য পূরণে ২০১৬-২০২৫ মেয়াদের দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়।

সোমবার গাজীপুর সার্কিট হাউজ সভাকক্ষে দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি পরিকল্পনা বিষয়ক অবহিতকরণ এক কর্মশালা  অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের আয়োজনে এবং গাজীপুর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও বিশ্ব খাদ্য সংস্থার সহায়তায় কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ হাবিবুর রহমান খান।

কর্মশালায় জানানো হয়, বিগত বছরগুলোতে শিশু ও মাতৃ পুষ্টির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির পরও পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে ৫ বছর বয়সী প্রতি ৫ জন শিশুর মধ্যে ২ জন খর্বকায়। এই হার ধনী জনগোষ্ঠীর অপেক্ষা দরিদ্রের মধ্যে দ্বিগুণ। ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল, এই ১০ বছরে খর্বতা হ্রাসের হার বছরে মাত্র ১ দশমিক ৫ শতাংশ। এ হ্রাসের হার বছরে ২ বা ৩ শতাংশ হলে সন্তোষজনক হতো। বাংলাদেশে অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সী শিশুদের শতকরা ১৪ দশমিক ১ ভাগ কৃশকায়। কৃশতার ভীতিকর রূপ হলো মারাত্মক তীব্র অপুষ্টি, যার ব্যাপকতার হার ৩ দশমিক ১ শতাংশ। বলা যায়, অনূর্ধ্ব ৫ বছর বয়সী প্রায় সাড়ে চার লাখ শিশু মারাত্মক তীব্র অপুষ্টির শিকার। এ প্রেক্ষিতে পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর ও কর্মক্ষম জীবনযাপন নিশ্চিত করার লক্ষ্য পূরণে ২০১৬-২০২৫ মেয়াদের জন্য দ্বিতীয় জাতীয় পুষ্টি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।

কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন ডা. সৈয়দ মোঃ মনজুরুল হক। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের মহাপরিচালক ডা. মোঃ শাহ্ নেওয়াজ, বিশ্ব খাদ্য সংস্থার পুষ্টি বিভাগের প্রধান মোনিক বেন (Monique Beun), শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. আমীর হোসাইন রাহাত, অতিঃ পুলিশ সুপার গোলাম সবুর, অধ্যাপক মুকুল কুমার মল্লিক, দিলরুবা ফাইজিয়া, মোঃ মাহবুবুর রহমান, ডা. নাজমুল সালেহীন, ডা. ফাতেমা আক্তার প্রমূখ।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer