ইংরেজিতে একটি প্রবাদ রয়েছে- Misfortune never comes alone. অর্থাৎ দুর্ভাগ্য কখনো একা আসে না। আজ বাস্তবেও হচ্ছে তাই। সর্বনাসী-রাক্ষসী করোনা একদিকে যেমন জীবন গিটারের সকল সুরের তারগুলো ছিঁড়ে দিয়ে জীবনকে করেছে সুরহীন; ছন্দহীন অন্যদিকে তারপরে আম্ফান নামক ঘূর্ণিঝড়ের উতাল পাতাল ঢেউ উপকূলে আছড়ে পড়ে এদেশের অনেক মানুষের জীবনে বয়ে এনেছে দূর্বিষহ দুর্যোগের কালো রাতের অন্ধকার। তারপরেও মানুষ বাঁচার জন্য অবিরাম সংগ্রাম করে যাচ্ছে একটি স্বস্তিকর, নিরাপদ ও সুখী পৃথিবী দেখার আশায়।
ইতোমধ্যে আমাদের অনেকেই করোনায় ও আম্ফানে আপনজনকে হারিয়ে শোকের বিলাপ করছি। সেই শোকের আগুন চোখের জলে নিভে যেতে না যেতে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা যেন এসে জেঁকে বসেছে। বানভাসী মানুষগুলো পানিতে ভাসছে আর অসহায় হয়ে স্রষ্টার কৃপার দিকে তাঁকিয়ে রয়েছে। প্রকৃতি কি বিরুপ! আসলে আমাদের মত নিন্মমধ্য আয়ের মানুষের পক্ষে এতোগুলো দুর্যোগ মোকাবেলা করা খুবই কঠিন। এই দুর্যোগ গুলোর মধ্যে দুটো পবিত্র ঈদ যে কিভাবে কাটালাম কিছুই বোঝা গেল না। যেন ঘরই ছিল মসজিদ আর ঈদ্গাহ।
অনেককেই দেখেছি সব কিছুকে অবজ্ঞা করে বেড়িয়েছে জীবন জীবিকার খোঁজে। তারা আবার অনেকে আক্রান্ত হননি বটে। কারণ খেটে খাওয়া মানুষের ইমিউনিটি (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা) অনেক বেশি। তাই হয়তো তারা এ যাত্রায় বেঁচে যাচ্ছেন। কিন্তু আমাদের কারো কারো মনে এ আশঙ্কা সর্বদা জেগেছে, যদি আমাদের কিছু একটা হয়ে যায়।
দীর্ঘ সময় ধরে ঘরবন্দি, কর্মহীন হয়ে রুটি-রুজিহীন হয়ে থাকার কারনে মনের ভিতরে হতাশার এক সুদীর্ঘ এবং সুদৃঢ় প্রাচীর তৈরি হচ্ছে। যার ফলে মনের ভিতর এক দীর্ঘস্থায়ী অস্থিরতার সৃষ্টি হচ্ছে। এ সময়ে ডেল কার্নেগির বাণীটি সত্যিই অনুভূত হচ্ছে। তিনি বলেছিলেন, ‘কর্মহীন জীবন যেন হতাশার কাফন জড়ানো একটি লাশ।‘ আমরা যারা একটি নির্দিষ্ট কর্ম করে খেয়ে বেঁচে থাকি কিন্তু ঘরবন্দি থাকায় আজ আমরা সত্যিই হতাশার কাফন জড়ানো লাশে পরিণত হয়েছি। কারণ হাতে কোনো রুটি নেই; রুজি নেই।
অন্য সময় আমরা অথবা আমাদের দেশ কোনো দুর্যোগে পড়লে ধনী রাষ্ট্রগুলো ত্রাণ অথবা ঔষধ নিয়ে আমাদের পাশে এসে দাঁড়াত। কিন্তু হায়! আজ সবাই পুড়ছে; সবাই মরছে। আমরা উন্নত দেশগুলোর লোকদেরকে কত সুখী ভাবতাম! কিন্তু আজ মনে পড়ছে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণকারী প্রয়াত ব্যান্ড শিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর গানের লাইন কয়টি-
সুখেরি পৃথিবী!
সুখেরি অভিনয়,
যতই আড়ালে রাখো;
আসলে, কেউ সুখী নয়।
লেখক: সিনিয়র শিক্ষক, ইংরেজি বিভাগ, লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ; সৈয়দপুর-নীলফামারী।
বহুমাত্রিক.কম