Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৪ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এবং আমাদের কৃষি

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

প্রকাশিত: ১৪:৫৭, ২৮ নভেম্বর ২০২০

প্রিন্ট:

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এবং আমাদের কৃষি

গতবছর অর্থাৎ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়ে তা এখন ‘কোভিড-১৯’। এরইমধ্যে ২০২০ সালের ডিসেম্বর সমাগত। সেই হিসাবে কোভিড-১৯ এর রাজত্বের প্রায় একবছর হতে চলেছে।

বিগত এক বছরের দাপট দেখিয়ে সকল পূর্বাভাস, পরিকল্পনা ও ধারণা মিথ্যে প্রমাণীত করে দিয়ে আবারো বেড়ে চলেছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা। বিশেষজ্ঞগণ এটিকেই সেকেন্ড ওয়েব বা দ্বিতীয় ঢেউ বলে বেশ আগে থেকেই আশঙ্কা করে আসছিলেন।

সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে প্রথম আক্রমণে সারাবিশ্বে আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড গড়েছে সবক্ষেত্রেই। বর্তমানে সারাবিশ্বে এ পর্যন্ত আক্রান্ত প্রায় সাড়েপাঁচ কোটি এবং মৃত্যুবরণ করেছে প্রায় সাড়ে তেরো লক্ষ মানুষ। বাংলাদেশও এর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তবে করোনা শুধু যে আমাদের জন্য ক্ষতিই এনেছে তা নয়, এ থেকে আমরা নতুন অনেক কিছু শিখতেও পেরেছি। সেটাওতো কম কথা নয়। করোনাকালে বাংলাদেশের কৃষির অভিযোজন শিক্ষা অন্যতম প্রাপ্তি।

করোনার প্রথম ওয়েবে সারাবিশ্ব এবং বিশ্বের সকল কিছুই যখন টালমাটাল। তখন বাংলাদেশের কৃষি দেখিয়েছে এক অভূতপূর্ব সাফল্য। কৃষির উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ সচল রেখে এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই করোনার আক্রমণ যত তীব্রই হোক না কেন বাংলাদেশের কৃষিকে এভাবেই সমুন্নত রেখে চালিয়ে নিতে হবে।

যেহেতু বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিষয়টি এখন অনেকটাই দৃশ্যমান। সেজন্য আগে থেকেই কৃষি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। কারণ আগে ধারণা না থাকার পরেও যেহেতু গতবছর কৃষি উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা মোটামোটি স্বাভাবিক রাখা গেছে। কাজেই এবছরও গতবছর থেকে শিক্ষা নিয়ে সেই ব্যবস্থাটিকে আরো গতিশীল ও কার্যকরের মাধ্যমে সফলকাম করা যাবে।

আমাদের দেশের কৃষিতে গতবছর বিশেষ কিছু কার্যক্রম গ্রহণ করার ফলে সেখানে সফলতা এসেছে। সেই ধারা অব্যাহত রাখলে এবং গতবছরের অভিজ্ঞতার আলোকে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৃষিবান্ধব পদক্ষেপ নিলে এবারো সফলতা আসবে। করোনা শুরু হওয়ার সাথে সাথে যেসকল সেক্টর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রণোদনা ঘোষণা করেছিলেন।

সেই প্রণোদনা কৃষি ক্ষেত্রে পূনর্বাসন ও পূনর্গঠনে বিরাট ভূমিকা পালন করেছে। ভালো মানসম্পন্ন বীজ আমদানী, উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিতরণে প্রণোদনা, ধান চাষ ও মাড়াই, বৃক্ষরোপন, মাছ চাষ, গবাদিপশু, হাঁসমুরগি ইত্যাদি প্রতিপালনের জন্য প্রণোদনা, কৃষি যান্ত্রিকীকরণের জন্য প্রণোদনা, সারে প্রণোদনা ইত্যাদি ছিল গতবছরের কৃষিক্ষেত্রে সাফল্যের অন্যতম ভিত্তি।

কৃষি বাজারব্যবস্থা ও সরবরাহ চেইন উন্নতকরণের মাধ্যমে সকলের মাঝে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা মিটিয়ে ভোক্তার দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়ে বাজারমূল্য সকলের নাগালের মধ্যে রাখতে সহযোগিতা করেছে। তখন লকডাউন পরিস্থিতিতে এসব কাজগুলো করা অতটা সহজ ছিলনা। সেজন্য সরকারের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর, অধিদপ্তর, সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের অশেষ পরিশ্রম ও মেধার সমন্বয় ঘটানো হয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কৃষি উন্নয়ন স্বাভাবিক রাখতে মন্ত্রী, সচিব, ডিজি মহোদয়গণসহ মাঠ পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আবার কেউ কেউ জীবনও দিয়েছেন। এগুলোর মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়, যোগাযোগ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অগ্রগণ্য। সেসময় চালু রাখতে হয়েছে পরিবহন ব্যবস্থা, কাজ করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, কাজ করেছেন কোটি কোটি বাংলার আপামর কৃষককুল, হাজার হাজার কৃষিবিদ ও কৃষিকর্মীবৃন্দ।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে যদি আবারো এ শীতকালে বাংলাদেশ নিমজ্জিত হয় তবে পূর্বে সকল কাজের পুনরাবৃত্তি করতে হবে। পাশাপাশি নতুন নতুন আরো উন্নত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে সামনে এগোতে হবে। আমাদের দেশের আবহাওয়ায় শীতকালটা কৃষির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ মৌসুমের দুটি বড় ধান ফসল হয়ে থাকে। তার একটি আমন যা অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই মাড়াই করা হবে। আরেকটি বোরো যা ডিসেম্বর থেকে আবাদ শুরু হবে। তাছাড়া আলু, পিঁয়াজ, রসুনসহ অনেক মজাদার, পুষ্টিকর, গুরুত্বপূর্ণ ও সাশ্রয়ী শীতকালীন ফসল এবং শাকসবজি উৎপাদন হয়ে থাকে।

অপরদিকে ডিম উৎপাদন, মাছ উপাদন, মাংসের জন্য গবাদিপশু ও হাঁসমুরগি উৎপাদনের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ সময় এ শুষ্ক মৌসুম। অপরদিকে উৎপাদিত এসব কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ, রপ্তানি ও পরিবহনের উপযুক্ত সময়ও শীতকাল। সেজন্য করোনা প্রাদুর্ভাবের দ্বিতীয় ঢেউকে মোকাবিলা করার জন্য সেসব বিষয় মাথায় নিয়েই ব্যবস্থা নিতে হবে। তাতে খাদ্য ঘাটতিজনিত মন্বন্তর হওয়ার কোন সম্ভাবনা তো নেই-ই উপরন্তু আমরা খাদ্য উদ্বৃত্ব দেশ হিসেবে বিদেশে রপ্তানি করে শুধু আয় করা নয় করোনাকালে মানবিক সাহায্যের হাত বাড়াতে পারি।

লেখক: কৃষিবিদ ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

email: [email protected]

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer