Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪

করোনাভাইরাসের ভয়াবহ ঝুঁকিতে দুই কোরিয়া

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:১৪, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০

প্রিন্ট:

করোনাভাইরাসের ভয়াবহ ঝুঁকিতে দুই কোরিয়া

চীনের দুই প্রতিবেশী দেশ উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া। প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস বা কভিড-১৯ রোগের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় ভয়ংকর ঝুঁকিতে পড়েছে এই দেশ দুটি। দক্ষিণ কোরিয়ায় ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই।

উত্তর কোরিয়ার অভ্যন্তরীণ তথ্য খুব বেশি জানতে পারে না বহির্বিশ্ব। দেশটিতে ভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত নয়। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, উত্তর কোরিয়ার স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সূচক দুর্বল হওয়ায় দেশটির জন্য করোনাভাইরাস মোকাবিলা করা বেশ কঠিন হবে।

করোনাভাইরাসে চীনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৩৬ জনে। আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৭৫ হাজার। গতকাল দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন করে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১০০ জন। যাদের সবাই দায়েগু শহরের বাসিন্দা। দেশটির প্রধানমন্ত্রী চুং সিয়ে-কুন এ তথ্য দিয়ে বলেছেন, দেশের পরিস্থিতি এখন জরুরি অবস্থার মতো। একদিন আগে বৃহস্পতিবার নতুন করে আক্রান্ত হয়েছিলেন আরও ৫৩ জন। সব মিলিয়ে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০৪ জনে। গত সপ্তাহে চেয়ংদো শহরে করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এটিই দেশটির প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র মৃত্যুর ঘটনা।

দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় দুই শহর দায়েগু ও চেয়ংদোর রাস্তাগুলো জনশূন্য হয়ে পড়েছে। এই দুই শহরকেই `বিশেষ এলাকা` হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। তিন সেনা সদস্য ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সব সেনানিবাস কার্যত অবরুদ্ধ রাখা হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার চতুর্থ বৃহৎ শহর দায়েগুতে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের বসবাস। শহরটির মেয়র বাসিন্দাদের ঘর থেকে বের না হতে অনুরোধ করেছেন। গতকাল অল্পকিছু মানুষ রাস্তায় বের হয়েছিলেন এবং তাদের প্রত্যেককে মাস্ক পরে থাকতে দেখা গেছে।

একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রায় ৯ হাজার সদস্যকে দুই সপ্তাহের জন্য কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে। এই গোষ্ঠীর বহু সদস্য ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ১২০ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন ইতোমধ্যে। আরও অন্তত চারশ` জনের উপসর্গ দেখা দিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া কর্তৃপক্ষের সন্দেহ, দায়েগুতে এক খ্রিষ্টান যাজকের শেষকৃত্যে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্য থেকেই এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। শিনচেয়নজি গির্জার এক যাজক মারা গেলে গত ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তার হাজার হাজার অনুসারী শেষকৃত্যে অংশ নেন।

প্রধানমন্ত্রী চুং বলেছেন, স্থানীয় পর্যায়ে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সরকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী পার্ক নিয়াং-হু বলেছেন, `আক্রান্তদের হাসপাতালের আইসোলেশন বিভাগে রাখা হচ্ছে, যাতে সুস্থদের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ না ছড়াতে পারে। দায়েগুতে নিউমোনিয়া আক্রান্তদের গভীর পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।` দক্ষিণ কোরিয়া এসব পদক্ষেপ নিলেও উত্তর কোরিয়ার প্রকৃত চিত্র কী তা জানা কঠিন। দেশটি বলেছে, এখন পর্যন্ত কোনো নাগরিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়নি।

চীনে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রথম যে দেশগুলো চীনের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় তার মধ্যে উত্তর কোরিয়া অন্যতম। বিদেশফেরতদের ৩০ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখতে শুরু করে দেশটি। গতকাল উত্তর কোরিয়ার সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, `সৌভাগ্যবশত দেশে এখনও করোনাভাইরাস প্রবেশ করেনি।` তবে অবরোধে জর্জরিত উত্তর কোরিয়ার স্বাস্থ্য খাতের চিত্র খুবই নাজুক। এমনকি হাসপাতালগুলোতে পানি ও বিদ্যুতের সরবরাহও যথেষ্ট নয়। ওষুধ ও চিকিৎসক সংকট তো রয়েছেই।

চই জুং-হুন নামে উত্তর কোরিয়ার সাবেক এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, `দেশটিতে যদি ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে তাহলে সেটি ভয়ংকর আকার ধারণ করবে। এমনকি তা নিয়ন্ত্রণের বাইরেও চলে যেতে পারে।` জাতিসংঘের উত্তর কোরিয়ার মানবিক সহায়তা সম্পর্কিত কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, প্রয়োজনীয় ওষুধ, গবেষণাগার ও ডায়াগনসিস যন্ত্রপাতির ব্যাপক সংকট রয়েছে দেশটিতে। জরুরি স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার সক্ষমতাও কম।

২০১৯ সালে জনস হপকিন্স সেন্টার প্রকাশিত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সূচকে উত্তর কোরিয়ার অবস্থান ১৯৫ দেশের মধ্যে ছিল ১৯৩ নম্বরে। অর্থাৎ আফ্রিকার দুই দারিদ্র্যপীড়িত দেশ সোমালিয়া ও ইকুয়াটোরিয়াল গায়েনার ওপরে রয়েছে উত্তর কোরিয়া। সূত্র :বিবিসি ও এএফপি।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer