Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪

করোনাকালের প্রাকৃতিক পরিবেশ

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

প্রকাশিত: ২৩:১৯, ১৮ আগস্ট ২০২০

প্রিন্ট:

করোনাকালের প্রাকৃতিক পরিবেশ

এমনিতে সারাদেশের স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় করোনাকালে প্রাকৃতিক পরিবেশের উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞগণের ধারণামতে সবকিছুরই একটি পজিটিভ এবং একটি নেগেিেটভ দিক পরিলক্ষিত হয়। যেমন বন্যা একটি প্রকৃতিক দুর্যোগ হলেও তার মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্ত পানির স্তর উপরে উঠানোর জন্য প্রতিবছর না হলেও ২-৫ বছর পর পর হাল্কা, মাঝারি ধরনের বন্যার হওয়া প্রয়োজন পড়ে। ঠিক তেমনি এবারের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট ক্ষতিকর মহামারি করোনাকালেও কোন কোন বিষয়ে পজিটিভ অনেক কিছু দেখতে পাচ্ছেন। তারমধ্যে মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন করা, মানুষে মানুষে মমত্ববোধ জাগ্রত হওয়া, আবার অনেক ধন-সম্পতি থাকলেও সেগুলোর আসলে কোন মূল্য নেই, যদিনা তা মানুষের কল্যাণে না আসে।

তাই এবারের করোনাকালে অন্যতম শিক্ষা হলো যার যা আছে তা থেকে কিছুটা হলেও মানবকল্যাণে ব্যয় করা। যাহোক, বলছিলাম করোনাকালের প্রাকৃতিক পরিবেশের কথা। এসময়ে বিশ্বময় সবচেয়ে বেশি স্বস্তিতে রয়েছে সেই প্রাকৃতিক পরিবেশ। বাংলাদেশের কথা ধরি তাহলে সেটি নিয়েই আজকের এ নিবন্ধ। আমরা জানি বাংলাদেশে এবছর ৮ মার্চ ২০২০ তারিখে প্রথম করোনা রোগী শণাক্ত হয়েছিল। তখন থেকে অদ্যোবধি প্রায় ৫ মাসাধিককাল ধরে দেশে মানুষের চলাচলকে সীমিত করা হয়েছে। সেইসাথে অনেকদিন বন্ধ ছিল কলকারখানা, গাড়ি, যানবাহন, রেল, প্লেন ইত্যাদি। এখন সীমিত আকারে সেগুলো চালু হলেও পুরোদমে তা শুরু করেনি। এর সুফল হিসেবেই আমরা এখন একটি নির্মল প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখতে পাই চারিদিকে।

আমরা জানি এবং সবসময় বলেও থাকি যে, বাংলাদেশের গ্রামীণ পরিবেশ খুব সুন্দর। আসলেও তাই। কারণ সেখানে নেই কোন গাড়ি, নেই কোন শব্দ দুষণ, কলকারখানা নেই, সেজন্য নেই কোন বর্জ্য। আর তাই সেখানকার নির্মল আকাশ বাতাস সবই আমাদের চিরচেনা। তেমনি একটি প্রাকৃতিক পরিবেশ এখন বিরাজ করছে। করছে বাংলাদেশের চিরচেনা জনপদ শহরাঞ্চলেও। কারণ প্রায় ৫ মাসাধিককাল সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ তেমনভাবে নষ্ট হয়নি সেজন্য শহরেই এখন গ্রামীণ আমেজ পাওয়া যাচ্ছে। আর এটি যে শুধু দেশের ছোট বা প্রান্তিক শহর তাই নয়. তা খোদ রাজধানী ঢাকা শহরের চিত্রও তাই।

এখন তো আর করোনার জন্য আমরাও আগের মতো বাইরেও বের হচ্ছিনা। তাই শুধুমাত্র টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও দেখে প্রাণ ও মনটা জুড়িয়ে যায়। এমনকি রাজধানীর রাজপথের ডিভাইডারে আগে যেসব পাতাবাহারি গাছ দেখে চেনার উপায় ছিলনা যে সেটা জীবন্ত না মৃত। অথচ সেসব গাছ এখন দেখতে কত সতেজ কত সবুজ মনে হয়। এ যেন সত্যি সত্যিই অন্যরকম রাস্তা, অন্যরকম বাগান। আসলে শহরের ভিতর রাস্তাঘাটে এবং শহরের বাইরে রাস্তার ডিভাইডার কিংবা রাস্তার দুধারে এমন দৃষ্টি নন্দন গাছ লাগানোই হয় একদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যবর্ধন করা এবং অন্যদিকে পরিবেশ রক্ষা করা। অথচ যানবাহনের কালো ধোঁয়া এবং কলকারখানার অপসারিত বর্জ্য এসব উদ্যোগকে একেবারে শেষ করে দেয়।

রাস্তার ধার, সড়ক মহাসড়কের ডিভাইডার, পুকুরের পাড়, নদীর ধার, খেলার মাঠ, স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খোলা ময়দান ও মাঠ, স্টেডিয়াম, ঈদগাহ মাঠ ইত্যাদি প্রত্যেকটি প্রাঙ্গন এখন যেন প্রাকৃতিকে আলিঙ্গন করছে। সবুজে সবুজে ছেয়ে গেছে গাছের পাতা। সাদা যেমন আরো সাদা হলে ভালো লাগে, কালো যখন খুব কালোই ভালো, লাল যখন আরো লালেই ভালো তখন সবুজ তো সবুজেই ভালো লাগবে। কিন্তু এ করোনাকালে যেন আমাদের প্রকৃতির সবুজাভ বর্ণ যেন সকলের মন মাটিতে তুলছে।

তবে এটি করোকালের একটি অন্যতম শিক্ষা। কারণ আজ হোক কাল হোক সৃষ্টিকর্তার কৃপায় অবশ্যই করোনাকাল কেটে যাবে কিন্তু এর মাধ্যমে আমরা চারিদিকে যে সৌন্দর্যের প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখলাম। তা কি আর স্বাভাবিক অবস্থায় দেখা যাবে! কিন্তু আমরা এখন পরিবেশেই সবসময় দেখতে চাই। তাই করোনাকাল চলে গেলেও আমাদের এ প্রাকৃতিক পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য কাজ করার সুযোগ রয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত পরিষ্কার। যেসব কাজ করলে প্রাকৃতিক এসব পরিবেশ ঠিক থাকে আমাদের যেকোন মূল্যে সেকাজগুলোই করতে হবে। প্রাকৃতিক পরিবেশ বলতে শুধু গাছ গাছরাই বোঝানো হয় এমনটি নয়। আমাদেও চারপাশে সামাজিক ও নোংড়া দুষণ বন্ধ করতে পারলেও প্রাকৃতিক পরিবেশ সবসময় এভাবেই রাখা সম্ভব। আমরা যেন এ করোনাকালে সেই শিক্ষাই গ্রহণ করি।

লেখক: কৃষিবিদ ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

email: [email protected]

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer