ছবি- বহুমাত্রিক.কম। এম্বুলেন্সে করে এভাবেই যাত্রী নেওয়া হচ্ছে;আরিচা মহাসড়কের সাভার সিটি সেন্টারের সামনে থেকে তোলা।
বাবা খুব অসুস্থ। আমি ছাড়া তাকে হাসপাতালে নেওয়ার মত কেউ নেই। তাই বাড়িতে যাওয়াটা আমার জন্য খুব জরুরী। সেটা হোক বাস, ট্রাক কিংবা হোক এম্বুলেন্স। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন সাভার থেকে খুলনায় গ্রামের বাড়িতে রওনা হওয়া পোশাক শ্রমিক মঞ্জু।
শুধু মঞ্জু নয়। এর মত আরো বেশ কয়েকজন বাড়িতে যাওয়ার জন্য বেছে নিয়েছেন রোগী আনা নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত যান এম্বুলেন্স।
করোনা ভাইরাসের কারণে অঘোষিত লকডাউনে সারাদেশের গণপরিবহনসহ সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যখন বন্ধ থাকলেও এর আওতামুক্ত রয়েছে জরুরি সেবাসমূহ। কিন্তু জরুরীসেবা এম্বুলেন্স যেন মহাসড়কে যাত্রীবাহী পরিবহনে রুপ নিয়েছ।
রোববার সরকার এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানিয়েছেন, রাজধানী ঢাকার ভেতরে কোনো যানবাহন প্রবেশ কিংবা বাহির হতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
কিন্তু সড়ক-মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে প্রশাসনের জোরালো নজরদারির কারণে কোনো যাত্রীবাহী পরিবহন না যেতে পারলেও সাধারণ মানুষ এখন জরুরীসেবার মাধ্যমে নিজ নিজ গন্তব্যে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার সিটি সেন্টারের সামনে দেখা যায়, পাটুরিয়াগামী একটি এম্বুলেন্সে যাত্রী তোলা হচ্ছে। যেখানে এম্বুলেন্স শুধু মাত্র রোগী আনা নেওয়া কাজে ব্যবহার করা হয়। সেখানে ১০-১৫ জন মানুষ নিয়ে যাত্রা করেছে।
এম্বুলেন্সের কাছে গিয়ে কথা হয় মঞ্জু নামের এক পোশাক শ্রমিকের সাথে। তিনি যাবেন খুলনা। বাড়িতে বাবা খুব অসুন্থ বিধায় সাভার ছেড়ে যাচ্ছেন তিনি। সুযোগ বুঝে ৮০০ টাকা ভাড়ায় এ্যম্বুলেন্সটিতে উঠে গেলেন মন্জু। তিনি জানান, সকাল ১০টার দিকে সাভার স্ট্যান্ডে এসে দাড়িয়ে আছি। কিন্তু কোনো গাড়ি নেই। রিকশায় যে ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাবো তারও উপায় নেই। বাবা খুব অসুস্থ, বাবাকে হাসাপাতালে নেওয়ার মত আমি ছাড়া বাড়িতে কেউ নেই। তাই বাড়িতে যাওয়াটা আমার জন্য খুব জরুরী। তাই বাধ্য হয়ে এম্বুলেন্সে উঠে পড়েছি।
মন্জুর সঙ্গে কথা বলতেই এম্বুলেন্সটির ড্রাইভার এসে বলেন ভাই কোথায় যাবেন। গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় দিতেই তোরজোর করে এম্বুলেন্সে উঠে দ্রুতগতীতে চলে গেলেন।
মহাসড়টিতে সাভার সিটি সেন্টার থেকে ১ কিলোমিটার দুরে রেডিওকলোনী এলাকার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সামাজিক দুরত্ব তৈরি করতে বিভিন্ন পরিবহনের উপর ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করছেন সাভার রাজস্ব সার্কেলের সহকারি কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহ আল মাহফুজ।
বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাভার একটি জনবহুল এলাকা। এখানের মানুষজনকে সচেতন করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে৷ আমরা সড়কে মানুষের সামাজিক দুরুত্ব বাড়াতে মোটরসাইকেলে যারা তিনজন করে উঠতেছে এছাড়া যারা ভ্যানে ও অথবা পণ্যবাহী ভ্যানে করে গাদাগাদি হয়ে যাচ্ছে তাদের থামিয়ে সচেতন করছি ও জরিমানা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ঢাকায় প্রবেশের একটি উল্লেখযোগ্য পথ। এই প্রবেশ পথে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন স্থানে টহলের ব্যবস্থা করছেন৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে চেকপোস্টের আগে যাত্রীরা গাড়ি থেকে নেমে যাচ্ছে আবার চেকপোস্টের পরে আবার গাড়িতে উঠছে। আসলে মানুষের মাঝে যদি নিজ থেকে সচেতনতা না আসে তাহলে যত আইন করা হোক না কেন, এটার বিপরীতে মানুষ নিজস্ব একটি পদ্ধতি বের করে নিয়ে আইন লঙ্ঘনের চেষ্টা করে৷
বহুমাত্রিক.কম