ছবি : বহুমাত্রিক.কম
মৌলভীবাজার: ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের পুরাতন ভাঙ্গন দিয়ে পানি বেরিয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। বন্যার পানিতে পানিবন্দি হয়েছেন অর্ধশতাধিক পরিবার ও হুমকির মুখে রয়েছে বিশটি ঘর। কমলগঞ্জ উপজেলার ধলাইনদীর আদমপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ঘোড়ামারা গ্রামে কয়েক বছর ধরে বাঁধ ভাঙ্গা থাকার কারণে এই অবস্থা দেখা দিয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ মেরামতে স্থানীয়দের অসহযোগীতাকে দায়ী করছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, শুক্রবার দুপুর থেকে ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঘোড়ামারা গ্রাম এলাকায় বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিকালে নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের পুরাতন বিশাল একটি ভাঙ্গন দিয়ে পানি উপচে প্লাবিত হচ্ছে গ্রাম। তবে বিকাল পর্যন্ত ঘোড়ামারা ও নাজাতকোনা গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দুইদিনের বৃষ্টিপাতে ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ধলাই নদী কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠছে। ফলে গ্রামের আব্দুল ওয়াহিদ, নুরুজ্জামান মিয়া, তমিজ উদ্দীন, রমিজ উদ্দীন, মন্নাফ মিয়া, জমশেদ মিয়া, মর্জিনা বিবি, আবেদা বেগম, আব্দুল গফুর, সমেদ মিয়া, ওয়েছ মিয়া, হেলাল উদ্দীন, সাজেদা বেগম, মাজিদা বেগমের ঘরগুলো নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে।
উপজেলার পশ্চিম ঘোড়ামারা গ্রামের হোসেন আলীর মেয়ে কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী রওশন আরা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ধলাই নদীর ভাঙ্গনে আমরা গ্রামের পনের পরিবার নি:স্ব হয়ে গেছি। নদীর বাঁধ মেরামত না হওয়ায় ¯্রােতের পানি থাকার একমাত্র ঘরটি নদী গিলে নিচে। এখন আমাদের থাকার মতো স্থায়ী জায়গা নেই। আমাদের অসহায়ত্ব দেখার মতোও কেউ নেই। কোথায় যাবো, কোথায় থাকবো, কি খাবো কেউ খবর নেয় না।”
পশ্চিম ঘোড়ামারা গ্রামে নদীর গ্রাস হওয়া বাড়িঘর ঘুরে দেখা যায়, নদীর ¯্রােতে হোসেন আলী সহ গ্রামের পনেরটি ঘর নদীভাঙ্গনের কবলে পড়ে। আরও পাঁচটি রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ। হোসেন আলীর পাকা ঘরের অর্ধেক অংশ নদীতে চলে গেছে। ঘরের অবশিষ্ট অংশে বাঁশের বেড়া দিয়ে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
ঘোড়ামারা গ্রামের মজিদা বেগম, নুরুজ্জামান, সাজেদা বেগম ও আব্দুল গফুর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বন্যার পূর্বে যদি আমাদের এলাকায় নদীর বাঁধ মেরামত করা হতো তাহলে আর আমাদের এই ক্ষতি হতো না। কিছুদিন পূর্বে নদীর ¯্রােতে আমাদের ঘরগুলো নদীতে চলে গেছে। এখন আমাদের থাকার জায়গা নেই। আমরা এতোটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখন পর্যন্ত কোন সহযোগিতা পাইনি।
আদমপুর ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দীন বলেন, আসলে এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড গত বছর কাজে আসলেও কিছু মানুষের আপত্তির কারণে কাজ করা সম্ভব হয়নি।
কমলগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, সরেজমিনে ঘুরে দেখবেন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছি। এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, বিগত ২০১৭ সনে বাঁধ মেরামতের জন্য জন্য যে প্রকল্প নেয়া হয় সেখানে স্থানীয়দের আপত্তির কারণে ঠিকাদার কাজ করতে পারেনি। পরে বাধ্য হয়ে ঠিকাদার চলে আসেন। বর্তমানেও যদি জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয়দের সহযোগিতা পাওয়া যায় এবং ঘরগুলো সরানো হয় তাহলে কাজ করা সম্ভব হবে।
বহুমাত্রিক.কম