ছবি- বহুমাত্রিক.কম
মৌলভীবাজার: গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কমলগঞ্জ উপজেলার ডিলারদের দোকানে ইউরিয়া, নন ইউরিয়ার সংকট দেখা দিয়েছে। কৃষকরা কয়েকদিনে দোকানে দোকানে ঘুরেও সার না পেয়ে উপজেলা কৃষি অফিসে গিয়ে সার সংকটের কথা জানাতে গিয়ে লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন কৃষক। বুধবার সন্ধ্যার পর ও গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত উপজেলার ডিলারদের দোকান ঘুরে এচিত্র পাওয়া গেছে।
কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে উপজেলার বিভিন্ন সারের ডিলারদের দোকানে গিয়ে ইউরিয়া ও নন ইউরিয়া হিসাবে বিওপি, টিএসপি, পটাস সার পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে কৃষি কর্মকর্তারা বাজারে সার রয়েছে বলে দাবি করছেন। তবে সারের ডিলাররা দু’একদিনের মধ্যেই সার পাওয়া যাবে বলে কৃষকদের বলছেন। এতে কৃষকরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। গত বুধবার সার সংকটের বিষয়টি জানাতে গিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসে লাঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ করেন এক কৃষক। গত বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি কমলগঞ্জ ইউনিটের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন কৃষক ইজ্জাদুর রহমান।
লিখিত বক্তব্যে ইজ্জাদুর রহমান বলেন, আমি একজন সাধারণ কৃষক এবং আমার কৃষি কার্ডও রয়েছে। তাছাড়া গোবিন্দপুর সি.আই.জি (ফসল) সমবায় সমিতি লি: এর সাধারণ সম্পাদক। আমরা বিএডিসি’র চুক্তিবদ্ধ বীজ উৎপাদনকারী কৃষক। এজন্য আমাদের বেশি সারের প্রয়োজন। আমাদের সমিতির কৃষকদের চাষাবাদের জন্য কয়েকদিন ধরে বাজারে ডিলারদের দোকানে গিয়ে ইউরিয়া, নন ইউরিয়া সার পাওয়া যায়নি। বিষয়টি বুধবার কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসে গিয়ে সিনিয়র কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দীনকে জানাই।
তিনি আমাকে নানাভাবে প্রশ্ন করে শমশেরনগর সারের ডিলার জয়নাল আবেদীনের সাথে মোবাইলে কথা বলে আমাকে হুমকি প্রদান করে বলেন, আমি সার পাচারকারী। এরপর কৃষি অফিসের অন্যান্য কর্মচারীদের মাধ্যমে আমাকে প্রায় ৩০ মিনিট আটকে রেখে পুলিশে তুলে দেয়ার হুমকি দেন ও নানাভাবে নাজেহাল করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল হাসান, মো. নজরুল ইসলাম, মো. শাহ আলম, আব্দুর রহমান, রনি মিয়া, দেলোয়ার হোসেন, মোশারফ হোসেন বলেন, সার পাওয়া না গেলেও কৃষি অফিসে সার আছে বলে আমাদের বাজারে পাঠানো হয়। বাজারে এসেও আমরা সার পাইনি।
এ ব্যাপারে শমশেরনগর হাসান এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী জয়নাল আবেদীনের কাছে সার সংকটের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বলেন সার আছে। পরে তার দোকানে গিয়ে দেখা যায় সার নেই। জানতে চাইলে জয়নাল আবেদীন বলেন, অনুমোদন হয়ে গেছে। দু’একদিনের মধ্যে সার পাওয়া যাবে। বুধবার দুপুরে হাসান এন্টারপ্রাইজে গিয়ে দেখা যায় দোকান তালাবদ্ধ। ভানুগাছের সার ডিলার জননী এন্টারপ্রাইজের অসীম দেব, মুন্সীবাজারের চৌধুরী এন্টারপ্রাইজের পাপ্পু চৌধুরী মোবাইল ফোনে জানান, বরাদ্ধ কম থাকায় সার দ্রুত শেষ হয়ে গেছে। তবে কারো কারো কিছুটা ইউরিয়া রয়েছে। সপ্তাহের মধ্যেই সার পাওয়া যাবে।
তবে অভিযোগ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা সিনিয়র কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দীন বলেন, বাজারে সারের কোন সংকট নেই। বুধবার ইজ্জাদুর রহমান এসে বাজারে সার পাচ্ছেন না এবং ৩০ বস্তা সার দাবি করলে কি প্রয়োজনে এতো সার দরকার সে বিষয়ে জানতে চাই। তখন তিনি আমার সাথে উত্তেজনা সৃষ্টি করেন। তারপরও আমি শমশেরনগরে সারের ডিলারের সাথে কথা তাকে সার দিতে বলেছি। তাকে লাঞ্চিত করা কিংবা পুলিশে দেয়ার কোন প্রশ্নই আসে না।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, সার সংকট নেই। ডিলারদের দোকানে গেলে সার পাওয়া যাবে। পরে ডিলারদের দোকানে গিয়ে সার না পেয়ে ও দোকান বন্ধ দেখে ইউএনওকে ফোন দিলে তিনি বলেন, ওই ডিলার সার আনতে গেছেন। বিকালে সার পাওয়া যাবে।
বহুমাত্রিক.কম