বিগত বছরগুলোর তুলনায় ২০১৯ সালে গ্রিনল্যান্ডের বরফ আশঙ্কাজনক হারে গলছে, যা উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য অশনি সংকেত বলে নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার কমিউনিকেশনস আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে গ্রিনল্যান্ডের বরফের আস্তর জুলাই পর্যন্ত ২২৩ বিলিয়ন টন বরফ হারিয়েছে। ঐ বছরজুড়ে প্রায় ৫৩৩ বিলিয়ন টন বরফ গলেছে বলে প্রতিবেদনে এসেছে। এভাবে বরফ গলতে থাকায় সমুদ্রের পৃষ্ঠের উচ্চতাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। ফলে উপকূলীয় বা নিম্নাঞ্চলের মানুষ হারাচ্ছে ভূমি, দেখা দিচ্ছে বন্যা।
মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্র প্রভাবেই গ্রিনল্যান্ডের এমন বেহাল দশা। গ্রিনল্যান্ড হলেও বাস্তবে উত্তর গোলার্ধের এই বিশাল দ্বীপটি ছিলো পুরু স্তরের বরফে ঢাকা- তথা `হোয়াইটল্যান্ড`। এর ৭৯ শতাংশই বরফে ঢাকা।প্রতি বছর গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলে এক মিলিমিটার করে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বাড়ছে। প্রতিবেদনের এক জরিপে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে যে পরিমাণ বরফ হারিয়েছে তা ২০১২ সালের তুলনায় তা ১৫ শতাংশ বেশি।
গত বছর পৃথিবীর তাপমাত্রা সবেচেয়ে বেশি ছিল। জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে, ১২০ বছরের মধ্যে আর্কটিক অঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে ২০১৯ সালের ১৩ জুন গ্রিনল্যান্ডের ৪০ শতাংশের বেশি জায়গায় বরফ গলার দৃশ্য দেখা গেছে। সে বছরই ২ বিলিয়ন টন বরফ হারিয়েছে ডেনমার্কের স্বায়ত্ত্বশাসিত দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড। মধ্য আটলান্টিক মহাসাগরে আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে গ্রিনল্যান্ডের আবহাওয়া উষ্ণ হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে চলা গরম ও শুষ্ক মৌসুমের ছোঁয়ায়, প্রভাব পড়েছে গ্রিনল্যান্ডের আবহাওয়ায়।
এই কারণেই গত দুই দশক থেকে গ্রিনল্যান্ডের অস্বাভাবিক বরফ গলা সারাবিশ্বে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে বাজে ভাবে অবদান রাখছে বলেও জানালেন বিজ্ঞানীরা। অব্যাহত বরফ গলায় আরো ঝুঁকির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশসহ সমুদ্র উপকূলীয় ও দ্বীপ দেশগুলো।
২০১২ সালে গ্রিনল্যান্ডে ৪০ হাজার কোটি টনের বেশি বরফ গলেছে, যা ২০০৩ সালের চেয়ে চার গুণ বেশি। সবচেয়ে বেশি বরফ গলেছে দক্ষিণ গ্রিনল্যান্ড অঞ্চলে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য এতোদিন ওই অঞ্চলকে হুমকি মনে করা হতো না।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাড়ছে পৃথিবীর উষ্ণতা, যদিও এ ঘটনা নতুন কিছু নয়। তবে উষ্ণতা বাড়ার হার কতটা অস্বাভাবিক তা যাচাইয়ের জন্য গবেষণা চালাচ্ছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা- নাসা।
এই বরফ গলা কেবল ৪, ১০ বা শত বছর ধরে চলবে এমন নয়, এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যা দীর্ঘ সময় অব্যাহত থাকবে। আর এর শুরুটা কেবল দেখছে বিশ্ববাসী।