আগামী এক বছরের মধ্যে ইথিওপিয়ার টাইগ্রে অঞ্চলের এক লাখের বেশি শিশু ক্ষুধার কারণে মারা যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। খাদ্যাভাব আর পুষ্টিহীনতায় যুদ্ধবিধ্বস্ত ইথিওপিয়ায় এই আশঙ্কা করা হচ্ছে। খবর ভয়েস অব আমেরিকার।
টাইগ্রে এলাকায় প্রতি দুইজন গর্ভবতী মায়ের মধ্যে একজনই মারাত্মক অপুষ্টির শিকার। এর প্রভাব পড়ছে তার সন্তানের ওপর। জাতিসংঘের গবেষণায় জানা যায়, ওই অঞ্চলের শিশুদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে এক তৃতীয়াংশ কম।
ইউনিসেফের মুখপাত্র মারিজিয়ে মারকাদো বলেছেন, টাইগ্রে অঞ্চল থেকে অন্তত ১০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেখানে খাদ্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। সঙ্কট মোকাবিলা না করলে খুব শিগগিরই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেবে।
এরইমধ্যে দাতা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, দেশটিতে প্রতিমাসে মারাত্মক অপুষ্টিতে আক্রান্ত চার হাজার শিশুকে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী শেষ হয়ে আসছে। পরিস্থিতি এতোটাই ভয়াবহ যে সেখানে মানবাধিকার কর্মীরা দুস্থদের সহায়তায় হিমশিম খাচ্ছেন।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মুখপাত্র টমসন ফিরি বলেন, দুই সপ্তাহ আগেই টাইগ্রে অঞ্চলে দুইশোর বেশি ট্রাক বোঝাই ত্রাণ সহায়তা পাঠানো হয়েছে। তবে সেখানকার চাহিদার তুলনায় এটি খুবই সামান্য। সঙ্কট কাটাতে প্রতিদিন সেখানে কমপক্ষে ১০০ ট্রাক ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো দরকার।
এদিকে, ইথিওপিয়ায় চলমান সংঘাত ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট মানবিক সঙ্কট নিরসনে জরুরি সাহায্য তহবিল গঠনের তাগিদ দিয়েছেন জাতিসংঘের মানবিক সাহায্য বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা। বর্তমানে দেশটির ৯০ ভাগ অর্থাৎ প্রায় ৫২ লাখ মানুষের জরুরি মানবিক সহায়তা প্রয়োজন।
এর আগে ২৮ জুন ইথিওপিয়ার সংঘাতপ্রবণ টাইগ্রে অঞ্চলে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা করা হয়। টাইগ্রে অঞ্চলটির রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ নিয়েই মূলত সংঘাত। টাইগ্রে পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট বা টিপিএলএফের হাতে আবারও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ চলে যাওয়ার পর যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আসে।
সংগঠনটি ১৯৯১ সালে সামরিক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে। কিন্তু ২০২০ সালে ইথিওপিয়ার সেনাবাহিনী ও টিপিএলএফের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। নভেম্বর থেকে চলা সংঘর্ষের জেরেই অঞ্চলটিতে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট; যাতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছেন। জাতিসংঘের একটি অভ্যন্তরীণ নথিতে উঠে এসেছে এমন তথ্য।
টাইগ্রে অঞ্চলের খাদ্যসংকটের বিষয়টি এখন পৃথিবীর যে কোনো অঞ্চল থেকে প্রকট। এমনকি ২০১১ সালে সোমালিয়া দুর্ভিক্ষের পর এটি হচ্ছে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ।