Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৫ ১৪৩১, শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

ইউনিক আইডি তৈরি:দুর্ভোগ ও আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা

নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:৫৬, ২৫ মে ২০২১

প্রিন্ট:

ইউনিক আইডি তৈরি:দুর্ভোগ ও আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা

ছবি- বহুমাত্রিক.কম

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি তৈরী কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অনলাইনে পিতা মাতার জন্মনিবন্ধন করার পর শিক্ষার্থীদেরও জন্মনিবন্ধন করতে হয়। এতে হোল্ডিং ট্যাক্স, জন্মনিবন্ধন ফি, মা-বাবা মারা গেলে মৃত্যুসনদ ফি, রক্ত পরীক্ষার ফি ও অনেক কাঠখড় পোড়াতে দৌড়াচ্ছেন ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে।

মৌলভীবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় ৪ পাতার তথ্য প্রদানে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের জন্মনিবন্ধন তথ্য নিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। একই সাথে ইউনিয়ন সেবা কেন্দ্র সমুহে বাড়তি হারে টাকা আদায় করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি তৈরী কার্যক্রমে ইতিমধ্যেই মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজে তথ্য ফরমসহ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। ৪ পাতার তথ্য ফরমে শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল নম্বরযুক্ত জন্ম নিবন্ধন ফরম, বাবা মা-র ডিজিটাল নম্বরসহ জাতীয় পরিচয়পত্র ও ইউনিয়নের ডিজিটাল নম্বরসহ জন্মনিবন্ধন ফরম আনতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করেও তথ্য প্রদান করতে হচ্ছে।

কমলগঞ্জের অভিভাবক সামসু মিয়া, আলমগীর হোসেন, নুরুল মোহামীন, মরহম আলি, তামান্না ইসলাম, চম্পা রানী নাথ বলেন, অভিভাবকরা নতুন করে জন্ম নিবন্ধন করতে গিয়ে তাদের বাবা- মায়ের জন্ম নিবন্ধনের তথ্য উপস্থাপন করতে হয়। এদের অধিকাংশ এখন মৃত। বেশির ভাগই জন্ম নিবন্ধন কার্ড করেননি। তাই ইউনিয়ন ও পৌরসভায় গিয়ে নতুন জন্ম নিবন্ধন করতে পারছেন না। আবার ইউনিয়ন ও পৌরসভায় জন্ম নিবন্ধন কার্ড করতে গেলে তাদের ইচ্ছেমতো ফি ও সাথে বাসা বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদান করতে হচ্ছে। করোনা সংক্রমণকালে অভাব অনটনের মাঝে তারা হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে পারছেন না। তাছাড়া ডায়গনস্টিক সেন্টারে গিয়ে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে জনপ্রতি দিতে হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা হারে।

জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়ন এর টিলাাগাঁও গ্রাম থেকে আসা অন্তরা হক বলেন, আমি কিছুদিন পূর্বে আমার তিন ছেলে মেয়ের জন্মনিবন্ধন কার্ড সংগ্রহ করতে ৬ শত টাকা খরচ হয়েছে। এখন শুনি জন্মনিবন্ধন কার্ডগুলি অনলাইন হয়নি, তাই আবার নতুন করে আমাকে প্রতিটি কার্ডের জন্য পুনরায় অর্থ খরচ করে নিতে হচ্ছে। আমার একটি জন্ম নিবন্ধন কার্ড এর পিছনে সাড়ে তিনশত টাকা খরচ হচ্ছে, আমরা গরীব মানুষ এত টাকা পাবো কোথায়।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানান, জন্ম নিবন্ধন ফরম থাকলেও অধিকাংশ অভিভাবকের জন্ম নিবন্ধন কার্ড নেই। আবার অনেক অভিভাবকের জন্মনিবন্ধন ডিজিটাল নেই, পুরাতন কার্ডে লেখা জন্মনিবন্ধন কার্ড। এ তথ্য পূরণকালে অভিভাবকদের নতুন করে ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন কার্ড নিতে হচ্ছে। এতে সমস্যা দেখা দিয়েছে জন্ম নিবন্ধন কার্ডের নতুন নিয়ম কানুন। নতুন করে পিতা মাতার জন্মনিবন্ধন করতে হলে শিক্ষার্থীদের দাদা-দাদী ও নানা-নানীর জাতীয় পরিচয়পত্র লাগে। কেউ মারা গেলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মৃত্যসনদ সংগ্রহ করার পর জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করতে হবে। পিতা মাতার জন্মনিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের অনলাইন জন্মনিবন্ধনের আবেদন করতে হচ্ছে। এতে চরম দুর্ভোগ ও বাড়তি খরচে ভোগান্তিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. জুয়েল আহমেদ বলেন, অনেক অভিভাবক জন্ম নিবন্ধন কার্ড করেননি। এখন প্রয়োজনে জন্ম নিবন্ধন কার্ড করতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তাদের বাবা মা মৃত হলে মৃত্যু সনদ প্রদান করা হবে। আর যারা দরিদ্র তাদের হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদানে বিবেচনার দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে।

কমলগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো, খোরশেদ আলী শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি কার্যক্রমের তথ্য প্রদানে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সমস্যার সত্যতা নিশ্চিত করেন। এ নিয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের অবহিত করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। সমাধান আসবে বলেও তিনি মনে করেন। এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফজলুর রহমান বলেন, নতুন চিঠি এসেছে। এতে অভিভাবকদের শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র দিলেই চলবে। এই চিঠি সকল স্কুলে পাঠানো হয়েছে। এতে ভোগান্তি অনেকটা কমবে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer