Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৫ ১৪৩১, শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

ইউক্যালিপটাস গাছ ও পরিবেশ

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

প্রকাশিত: ১১:১৮, ৮ জুলাই ২০১৯

প্রিন্ট:

ইউক্যালিপটাস গাছ ও পরিবেশ

ঢাকা : ইউক্যালিপটাস একটি বিদেশী গাছ। এ গাছটির আট শতাধিক প্রজাতি রয়েছে। এটি অস্ট্রেলিয়া মহাদেশে সবচেয়ে বেশি জন্মে থাকে। তবে তার আশেপাশে নিউজিল্যান্ড, নিউগিনি, ইন্দোনেশিয়া, এমনকি এশিয়ার ফিলিপাইনেও কিছু জন্মে থাকে।

এর বৈজ্ঞানিক নাম Eucalyptus obliqua। স্বাধীনতার পর সীমিত আকারে এটি বাংলাদেশেও বিস্তার লাভ করতে শুরু করেছে। সারাদেশেই এখন ইউক্যালিপটাস গাছটি রোপণ করা হচ্ছে। তা অনেকদূর এগিয়েও গেছে। তবে মাটির গুণাগুণের কারণে এটি বর্তমানে দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল এবং দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে বেশি রোপণ করতে দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া এসব অঞ্চলে ব্যাপক আকারে এ গাছ লাগানো হচ্ছে। শুধু যে বসতবাড়ি কিংবা পতিত জায়গাতেই তা লাগানো হচ্ছে তাই নয় বিভিন্ন ফসলী জমিতে কিংবা তার পাশের রাস্তার আইলও বাদ যচ্ছে না।

আমরা জানি গাছ মানেই পরিবেশ। অধিক গাছ অধিক পরিবেশ রক্ষা। কিন্তু ইউক্যালিপটাস গাছের ক্ষেত্রে এ সত্যটি একেবারেই ফিকে হয়ে যেতে বসেছে। এর অনেক বৈজ্ঞানিক কারণ ও ব্যাখ্যা রয়েছে। ইউক্যালিপটাস গাছটি অনেক লম্বা হয়। উপযুক্ত পরিবেশ পেলে ১০-১২ তলা দালানের সমান লম্বা হয়ে যায় গাছটি। কিন্তু এ গাছে তেমন কোন ডাল-পালা থাকেনা। তাছাড়া পাতাও হয় খুব কম পরিমাণে। আর যেগুলো পাতা থাকে সেগুলো খুবই চিকন ধরনের যা রোদে ছায়া সৃষ্টি করতে পারেনা। কারণ আমরা সাধারণভাবে জানি যেখানে গাছ থাকবে সেখানে গাছের নিচে ছায়া সৃষ্টি হবে এবং সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ ঠা-া ও আরামদায়ক হবে।

কিন্তু ইউক্যালিপটাস গাছের ক্ষেত্রে পুরো বিষয়টিই যেন উল্টো। গবেষণা ও পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে ইউক্যালিপটাস গাছ যতটুকু উঁচু হয় তার শিকড়গুলো মাটিতে ততদূরে চতুর্দিকে ছড়িয়ে যায়। আর শিকড়ের গভীরতা যায় অনেক নীচ পর্যন্ত। সেজন্য যতদূর শিকড় যায় সেসব স্থান থেকে পানি ও পুষ্টি শোষণ করে নেয়। সেজন্য যেসব স্থানে ইউক্যালিপটাস গাছ থাকে সেসব স্থানে কিংবা তার আশেপাশে কোন ফসল ভালো হয়না। কারণ পসল ফলানোর যা পুষ্টি সারের মাধ্যমে দেওয়া হয় তার পুরোটাই এ গাছ নিয়ে নেয়। তাছাড়া উক্ত গাছের শিকড় থেকে পরিবেশ বিপর্যয়কারী মিথেন গ্যাসসহ অন্যান্য আরো কিছু ক্ষতিকর রাসায়নিক বিমুক্ত হয়। পুকুরের ধারে হলে সেখানে মাছেরও ক্ষতি হয়।

ইউক্যালিপটাস গাছের ফুল ও ফল ঝরে পড়লে সেখান থেকেও পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দেয় বলে কিছু কিছু পর্যবেক্ষণে উঠে এসছে। যেসব এলাকায় ইউক্যালিপটাস গাছ বেশি সেসব এলাকার মানুষের শ^াসকষ্টজনিত রোগ বেশি বলে জানা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে এ গাছের ফুল এবং এর পাপড়িগুলো বাতাসে ছড়িয়ে পড়লে নাকি মানুষের শ্বাসনালীতে গিয়ে ঢুকে এবং দীর্ঘদিন এ প্রক্রিয়া চলতে থাকলে নাকি শ্বাসকষ্ট এবং হার্টের অসুখও হতে দেখা গেছে।

তাহলে ইউক্যালিপটাস গাছ নিয়ে এখন কী করা যায়- এ প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট সকলের। যেহেতু এ গাছটি বিদেশি এবং এখনও রোপণ করা হচ্ছে। আর যেহেতু উদ্ভিদ ও পরিবেশ বিজ্ঞানীরা এসব গাছকে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কাজেই এ গাছের বিস্তার রোধ করা প্রয়োজন। তাই নতুনভাবে যাতে আর এ গাছ সৃজন না হয় তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। লাগানো গাছগুলোকে প্রতিস্থাপন করে দেশিজাতের পরিবেশবান্ধব গাছ লাগানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সেজন্য ইউক্যালিপটাস গছের চারা উৎপাদনের নার্সারি বন্ধ করতে হবে। তাছাড়া নার্সারিতে যাতে এ গাছের চারা উৎপাদন না করে তার ব্যবস্থা করতে হবে।

আর যদি ইউক্যালিপটাস গাছ লাগাতেই হয় তবে বিরান বনভূমিকে বেছে নিতে হবে। বাংলাদেশে অনেক বন-জঙ্গল, পাহাড়-পর্বত রয়েছে যেখানে লোকালয় নেই, ফসলী জমি নেই। সরকারি বনবিভাগও ইচ্ছা করলে তাদের এস্টেটে এ গাছ লাড়াতে পারে, তাতে মানুষের কিংবা ফসলের কোন ক্ষতি হবে না। এ গাছটির একটি সুবিধা রয়েছে যেজন্য মানুষ তা রোপণ করতে আগ্রহী হয়। আর সেটি হলো এর দ্রুত বর্ধণশীলতা।

তাছাড়া খুব তাড়াতাড়ি গাছটি সারি (ম্যাচুর) গাছে পরিণত হয় যা দিয়ে সহজেই অর্থকরী কাজে লাগানো যায়। কিন্তু আমাদের দেশেই এখন অনেক দ্রুতবর্ধনশীল ও দ্রুত কাষ্ঠল গুণাগুণসম্পন্ন হয়ে ওঠে এমন অনেক জাতের গাছ রয়েছে। কাজেই সেসব গাছ দিয়েই ইউক্যালিপটাসকে প্রতিস্থাপন করতে হবে। তাতে পরিবেশও রক্ষা পাবে এবং কৃষকও লাভবান হবেন।

লেখক: কৃষিবিদ ও রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
email: [email protected]

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer