ছবি: বহুমাত্রিক.কম
সাভার ও আশুলিয়া দেশের অর্থনীতি খাতের পাশাপাশি নানান অপরাধমুলক ঘটনার হটস্পট হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে অনেক আগেই। বিগত দিনে দুর্ধর্ষ ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা এখানেই, যেখানে নিমর্মভাবে হত্যা করা হয় ব্যাংকের ম্যানেজারসহ ৯ জনকে। সেই রক্তমাখা স্মৃতি এখনও বিজরিত। এখানেই শেষ নয়, আশুলিয়ার মহাসড়কে দিন-দুপুরে ছুড়িকাঘাত করে পুলিশ সদস্যকে হত্যা করার নজিরও রয়েছে এখানেই।
এমন একটি জোনে নিরাপত্তাহীনতা জেনেও ঝুঁকি নিয়ে এদেশের অর্থনীতি বিশ্ব দুয়ারে তুলে ধরছেন এখানকার সাহসী সাংবাদিকরা। তবে এই ঝুঁকির বাস্তবতা আজ ফুটে উঠেছে আশুলিয়া প্রেসক্লাবে ককটেল বিষ্ফোরণের মধ্য দিয়ে।
রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, পুলিশ প্রশাসন সুশিল সমাজ ও গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন ছুটে এসেছেন ঘটনার সাথে সাথেই। সমবেদনাও জানাচ্ছেন অনেকেই। তবে কতটুকু সাংবাদিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে সেই প্রশ্ন রয়ে গেলো।
রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টা বেজে ১০ মিনিট। এই সময় সারাদিন সংবাদ সংগ্রহ শেষে যে যার মত প্রেস ক্লাবে সময় কাটাচ্ছেন সাংবাদিকরা। কেউ কেরাম খেলছেন, কেউ আড্ডা দিচ্ছেন, কেউবা চায়ের কাপে দিচ্ছেন চুমুক, আবার কেউবা শহীদ মিনার চত্তরে বসে নিচ্ছেন বিশ্রাম। ঠিক এসময় প্রেস ক্লাব চত্তরে পর পর দুই বার বিকট আওয়াজে নিমিষেই সাদা ধোয়ায় আচ্ছাদিত হয় পুরো প্রেস ক্লাব চত্তর।
ভীতিকর এক ইতিহাসের সাক্ষী হলো আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকরা। এসময় কোনমতে জীবন রক্ষা পেয়েছেন আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সময় টেলিভিশনের ঢাকা জেলা সাব ব্যুরো প্রতিনিধি মোজাফফর হোসাইন জয়, এটিএন নিউজের ঢাকা জেলা (সাভার) প্রতিনিধি জাহিদ হাসান সাকিল, যমুনা টিভির ঢাকা জেলা (সাভার) প্রতিনিধি মাহফুজুর রহমান নিপু, দেশ টিভির ঢাকা জেলা (সাভার) প্রতিনিধি শাহিনুর রহমান শাহিন, মোহনা টিভির আশুলিয়া প্রতিনিধি লাইজু আহমেদ।
প্রেস ক্লাব চত্তরে সাংবাদিকদের বেশ কয়েকটি প্রাইভেটকার ছিল। তার পাশেই দাড়িয়ে ছিলেন তারা। এসময় হঠাৎ বিকট আওয়াজ। সাথে সাথেই ধোয়ায় আচ্ছাদিত হয়ে যায় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গন। এসময় ককটেলের স্প্রিন্টার এসে গাড়িতে লাগলে অক্ষত থাকেন তারা।
প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মোজাফফর হোসাইন জয় বলেন, আমরা ৫ জন শহীদ মিনারের পিছন দিক থেকে হাঁটতে হাঁটতে প্রেস ক্লাবের হলরুমে যাচ্ছিলাম। এসময় সামনে একটা আওয়াজ হয়। ঘটনা বুঝতে সামনে এগিয়ে যাই আমরা। সেখানে দেখতে পাই পুরোনো সংবাদের কাগজে কালো স্কস টেপ দিয়ে পেঁচানো ককটেল সাদৃশ্য বস্তু। এসময় গাড়ির আড়াল থেকে বিকট আওয়াজে আরেকটি বিস্ফোরণ ঘটে। নিমিষেই ধোঁয়ায় আচ্ছাদিত হয় পুরো ক্লাব প্রাঙ্গণ। এসময় প্রানে বাঁচতে দৌড় দিয়ে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এটিএন নিউজের ঢাকা জেলা (সাভার) প্রতিনিধি জাহিদ হাসান সাকিল জানান, আমরা প্রানে বেঁচে গেছি। প্রেস ক্লাবের সিসিটিভির ক্যামেরা গুলো আকাশের দিকে ছিল। যাতে আমরা আঁচ করতে পারছি যে ঘটনাটি পরিকল্পিত।
আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের আহবায়ক ও মোহনা টিভির আশুলিয়া প্রতিনিধি লাইজু আহমেদ জানান, এই মহর্তে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এই ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি। ঘটনাটির সাথে যারাই জড়িত রয়েছে প্রশাসন যেন ক্ষতিয়ে দেখে তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করেন।
এব্যাপারে আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়াউল ইসলাম বলেন, প্রেস ক্লাবে দুটি ককটেল সাদৃশ্য বস্তু বিস্ফোরণ হয়েছে। পরপর দুটি বিকট শব্দ হয়েছে। তদন্ত ছাড়া কিছুই বলা যাচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, ২৩ সেপ্টেম্বর সাংবাদিক মোজাফফর হোসেন জয়কে হুমকি প্রদান করে মানিক নামের এক ব্যক্তি। পরে এদিন আশুলিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন সময় টেলিভিশনের ঢাকা জেলা সাব-ব্যুরো প্রতিনিধি মোজাফফর হোসাইন জয়। হুমকির ৪ দিনের মাথায় দুঃসহ ঘটনার সাক্ষী হলেন আশুলিয়া প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা।
বহুমাত্রিক.কম