Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪

আমৃত্যু নিরবচ্ছিন্ন রোগী সেবায় নিয়োজিত মানবিক চিকিৎসক হরিশংকর দাস

মো. নজরুল ইসলাম,ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: ১১:৩৫, ২০ জুন ২০২০

প্রিন্ট:

আমৃত্যু নিরবচ্ছিন্ন রোগী সেবায় নিয়োজিত মানবিক চিকিৎসক হরিশংকর দাস

ছবি- বহুমাত্রিক.কম

‘জ্ঞানার্জনে এসো সেবার্থে যাও’ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ গেইটে লেখা মেডিকেল শিক্ষার এই মন্ত্রবাণী। সেবাই পরম ধর্ম, এই দীক্ষায় ব্রত হয়ে শতভাগ বাস্তবায়ন করে চলেছেন আর্তমানবতার সেবায় সদা নিয়োজিত সত্তরোর্ধ বয়সী মানবিক চিকিৎসক সমাজসেবক সাদামনের মানুষ বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ হরিশংকর দাস।

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সারাদেশ যখন লকডাউন। দেশের সকল বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল ও কনসালটেশনে চিকিৎসকরা রোগী দেখা বন্ধ করে বাসায় আবদ্ধ রেখে নিজেকে সুরক্ষিত রাখছেন । ঠিক সেই মূতুর্তেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারসোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) পড়ে চেম্বারে রোগী দেখছেন। করোনায় লকডাউন সত্ত্বেও তিনি এক দিনের জন্যেও রোগী দেখা বন্ধ করেননি। প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন রোগী দেখছেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে রোগীরা আসছেন তাকে দেখাতে।

ময়মনসিংহ শহরের চরপাড়ায় ডাঃ হরি শংকর পারমিতা চক্ষু হাসপাতালের (প্রাইভেট) সত্ত্বাধিকারী ডাঃ হরিশংকর দাস বলেন চিকিৎকরা নিজের সুবিধার জন্য লেখাপাড়া শিখেন না। জ্ঞানার্জন করেন অসহায় রোগীদের চিকিৎসাসেবা করার জন্যেই মেডিকেল শিক্ষা। তাই তার কাছে এসে যেন কোনো রোগী বিনা চিকিৎসায় ফেরত না যায়, এটাই তার মূল লক্ষ্য। রোগীর কাছে চিকিৎসক পরামর্শ ফি থাকুক আর নাই থাকুন সকল রোগীই যাতে চিকিৎসা নিয়ে খুশির সাথে ঘরে ফিরে যেতে পারেন, তাতেই তার আনন্দ। ১৯৭৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত গত ৪২ বছরে ৪ লক্ষাধিক রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন ডাঃ হরিশংকর দাস। সুস্থ্য শরীরে আজীবন রোগীরসেবায় নিজেকে নিয়োজিত থাকার তার ইচ্ছা।

পারমিতা চক্ষু হাসপাতালের উপ-পরিচালক ফাতেমা বেগম জানান, খ্যাতিমান অভিজ্ঞ চক্ষু বিশেষজ্ঞ
ডাঃ হরিশংকর দাস ৪০ বছর ধরে মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও পরিচিতজন ও তাদের পরিবারের সদস্যসহ গরীর অসহায়, দুঃস্থ্য রোগীদের কোনো পরামর্শ ফি ছাড়াই চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। অনেক গরীব রোগীকে পকেটের পয়সা খরচ ওষুধপত্রও কিনে দেন।

ফাতেমা বেগম আরো জানান, করোনা দুর্যোগের এই সময়ে শহরের বেশিরভাগ বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিক বন্ধ এবং অনেকে চাকরি চলে গেছে। এই হাসপাতালে ৫২ জন কর্মী রয়েছেন। ইদানিং হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, সেইসাথে আয়ও হ্রাস পেলেও পারমিতা চক্ষু হাসপাতালের কেউ চাকরি হারাবেনা বলে নিশ্চিয়তা দিয়েছেন হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী। ভর্তুকি দিয়ে এই দুঃসময়ে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ অন্যান্য কর্মীদের বেতন দিয়ে যাচ্ছেন।

ডঃ হরি শংকর দাস সেলফোনেও তার সেবা সরবরাহ করে চলেছেন। রোগীরা তাকে পরামর্শের জন্য প্রতিদিন কল করেন এবং ডাক্তারের ফেসবুক পেজে নম্বরটি পাওয়া যায়। হাসপাতালে জরুরি অপারেশনও করা হচ্ছে।

১৯৫০ সালে টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরের নিকলা দাস বারে প্রয়াত ইন্দুভূষণ দাস ও রেণুকা প্রভা দাসের জন্ম, ডাঃ হরি শংকর ১৯৭৪ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) থেকে এমবিবিএস পাস করেন এবং এরপর মমেক-এ সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। পরে তিনি ১৯৮৩ সালে চক্ষু চিকিৎসায় উন্নত ডিগ্রীর জন্য অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় যান। সেখানে ডিও, এবং এম.এ. এম. এস. ডিগ্রী লাভ করে দেশে চলে আসেন। ১৯৮৪ সালে পারমিতা চক্ষু হাসপাতাল নামে একটি বেসরকারি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। পেশাগত জীবনের শুরু থেকেই প্রতিদিন এক ঘন্টা ফ্রি রোগী দেখেন এবং প্রতি বছর গ্রামের বাড়িতেও ফ্রি রোগী দেখেন।

দেশের বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ কে জামানের নেতৃত্বে আমরা ১৯৭৭ সাল থেকে বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রতিটি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে শত শত বিনামূল্যে চক্ষু শিবিরের আয়োজন করেন এবং তিনি দলের প্রধান সার্জনের দায়িত্ব পালন করেন।

ডঃ হরি শঙ্কর নিজেই ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের রোগী এবং মহামারীতে তিনি ক্লিনিকটি পরিচালনা করার ঝুঁকি সম্পর্কে ভালভাবেই অবহিত হয়েছিলেন। ‘সংক্রামিত হলে আমার উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। তবে যে কোনও সংকটের মধ্যে যারা আমার সেবা গ্রহণ করছেন তাদের আমি ছাড়তে পারিনি। পেশাদার চিকিৎসরা এই সঙ্কটের সময়েও সেবা দিচ্ছেন এবং এটি আমার পেশাগত কর্তব্য, বলে জানান প্রবীণ এই চিকিৎসক।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) ময়মনসিংহ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডাঃ হোসেন আহমেদ গোলন্দাজ তারা বলেছেন, সত্তর বছর বয়সী কাউকে যুদ্ধে যেতে দেখেছেন ? দেখেছেন নিজের জীবনকে বিপন্ন করে অন্যের সেবায় জীবনকে উৎসর্গ করতে ??
তিনি আর কেউ নন.... তিনি আমার বড় ভাই ময়মনসিংহের বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. হরি শংকর দাশ স্যার । একজন সাদা মনের মানুষ। আমি যতবার সাবধান হতে বলি উনার উত্তর একটাই..... মানুষের সেবা দিতে গিয়ে যদি মৃত্যুবরণ করি তাতে আমার কোন আক্ষেপ নেই। উল্টো আমাকে বারবার সাবধানে চলাফেরা করতে বলেন। এটাই বোধহয় ভালোবাসা !! দেশে এমন বিরল উদাহরণ যে এইরকম সঙ্কটকালীন সময়েও ডাক্তার তার একদিনের জন্যও তার চেম্বার বন্ধ করেনি। ডাঃ হরি শংকর পেশায় এবং রোগীদের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা ও প্রতিশ্রুতি থাকার জন্য আমরা গর্বিত।

গুণী মানবিক চিসিৎমক বিশিষ্ট চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. হরি শংকর দাশ ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশেন ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি, বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল প্রেকট্রিস ওনার্স এসোসিয়েশন ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি ময়মনসিংহ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক, সম্পৃতি সংস্থার সভাপতি, লায়ন্সক্লাবের পরিচালক, স্বাধীনতা সাহিত্য পরিষদ ও লোকনাট্য দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত।

ডা. হরি শংকর দাশ ২০০৪ সালে ময়মনসিংহ সেবা নিকেতন থেকে ‘সেবারতœ’ উপাধিতে ভূষিত হন, ২০০৯ সালে সেরা করদাতার সন্মাননা লাভ করেন। চক্ষু চিকিৎসায় অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ অপথামোলোজি সোসাইটি কর্তৃক আজীবন সন্মাননা মহামান্য রাষ্ট্রপতির হাত থেকে গ্রহন করেন। কমিউনিটি অপথামোলোজি-তে অসামান্য অবদানের জন্য পর পর দুইবার পুরষ্কৃত হন যা মহামান্য রাষ্ট্রপতির হাত থেকে গ্রহন করেন। দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির বিশেষ অবদান রাখার জন্য সারাদেশে তিনবার প্রথম স্থান অধিকার করেন। এছাড়াও তিনি মাদার তেরেসা গোল্ড মেডেল, ভারত থেকে আলিম মেমোরিয়াল এওয়ার্ড পুরষ্কারে ভূষিত হন।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer