Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৪ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

প্রান্তজনের প্রত্যাশা

আমলারা নন, দেশ চালাবেন রাজনীতিকবিদরাই

সেলিম রেজা

প্রকাশিত: ১২:৫২, ৫ জুলাই ২০২১

আপডেট: ১২:৫৩, ৫ জুলাই ২০২১

প্রিন্ট:

আমলারা নন, দেশ চালাবেন রাজনীতিকবিদরাই

-লেখক

মানুষের জন্য কাজ করার প্রেরণা থেকে রাজনীতি। নম্র, ভদ্র, বিনয়ী, মার্জিত, শিক্ষিত মানুষগুলো সমাজের জন্য, পরিবেশের জন্য, গ্রামের জন্য, নগরের জন্য বিশেষ করে দেশের মানুষের জন্য কিছু কাজ করার উদ্দেশ্য নিয়ে রাজনীতি করতেন। আমাদের দেশে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টের পর থেকে রাজনীতি আর সেই সম্মানের জায়গায় নেই। নিজের স্বার্থ, ব্যক্তিস্বার্থ, নিজেদের স্বার্থের জন্য একেকজন এখন রাজনীতি করেন। রাজনীতির দলগুলোর ইতিহাস, বাংলাদেশের ইতিহাস নেতাদের প্রেরণামূলক ইতিহাস খুবই গুরত্বপূর্ণ। বর্তমান সময় তরুণ প্রজন্ম কাকে অনুসরণ করে বড় হবে, পথ চলবে, কাজ করবে? মানবতাবোধ নীতি-নৈতিকতা সবকিছুই বিসর্জন দেয় হয়েছে। বাংলাদেশের যে অবস্থা বিরাজ করছে ব্যক্তিগতভাবে সবাই একা। কেউ কারোর নয়। নিজের স্বার্থ হাসিল করার জন্য সবাই ব্যস্থ। সবাই টাকার পেছনে ছুটছে। একসঙ্গে বসে একটু গল্প করবে, তরুণদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করবে তা কিন্তু করছে না। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা পার্টি অফিসে আসেন মাঝে মাঝে হাজিরা দিতে। কে কে আসছে তা দেখতে। মুখ চাওয়া-চাওয়ির রাজনীতি চালু হয়েছে। জনগণ থেকে আজ নেতারা বিচ্ছিন্ন। টাকা দিয়ে লোক ভাড়া করে রাজনৈতিক প্রোগ্রামে নেয়া হয়। দলের কর্মীদের মূল্যায়ন করা হয় না। তাদের কথা কেউ শুনছেন না, অথবা বুঝতে চাইছেন না।

প্রত্যেক রাজনৈতিক নেতা উদ্দেশ্য নিয়ে চলাফেরা করেন। মাস্তান, বখাটে, ধান্ধাবাজ, অভদ্র, কুরুচিপূর্ণ লোকজন দলে গুরুত্ব পায় বা পাচ্ছে। দলের প্রকৃত খাঁটি কর্মীদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। রাজনীতিতে যারা নেতা হতে চান তাদের শিক্ষিত, গ্রহণযোগ্য, মানবিক হতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে রাজনীতির নামে যেটা চালু আছে সেটা খুবই ভয়ঙ্কর। কেউ কোনো ভালো কাজ করলে অন্যের ভালো লাগছে না বা সহ্য হচ্ছে না। তাকে রাজনীতিতে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হচ্ছে। তার নামে নানারকম দুর্নাম মিথ্যা অপবাদ দেয়া হচ্ছে। রাজনীতিতে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। নিজের দলের কেউ প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারে তার মধ্যে সম্ভাবনা দেখা দিলে তাকে শুধু হেয়প্রতিপন্ন না, সেই সঙ্গে পরপারে পাঠানোর ব্যবস্থাও করা হয়। রাজনীতি করতে হলে শুধু শিক্ষিত হলেই চলবে না, মননশীলতা থাকতে হবে। সুষ্ঠু রাজনীতির সংস্কৃতি বাংলাদেশে কবে চালু হবে সেটা নিয়ে ভাবতে হবে।

আগে বিভিন্ন পেশার সুনামের অধিকারী মানুষ রাজনীতিতে আসতেন। এখন ধান্ধাবাজ, সুবিধাবাদী, ভূমিদস্যু, টেন্ডারবাজ, অস্ত্র ও মাদক ব্যবসায়ী সহজে টাকা দিয়ে রাজনীতির মধ্যে ঢুকে পড়ছে এবং রাজনীতিকে কলুষিত করছে। দলের নমিনেশন বিক্রি হয় টাকার বিনিময়ে। যে মানবপাচার, কালোবাজারি করে টাকা কামায় দলের টিকেট তার কাছে। এ কারণে রাজনীতির কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৫০ বছর আগে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের কথা ভেবেছেন। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। ভালো মানুষদের রাজনীতিতে আসতে হবে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, `আমার চারপাশে চাটার দল`, আর বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরতœ শেখ হাসিনা বলেছেন, `আমাকে ছাড়া আওয়ামী লীগের সবাইকে কেনা যায়` ফেসবুকসহ গণমাধ্যমে দেখা যায় এখন দলীয় এক নেতার সঙ্গে অন্য এক দলীয় নেতার তুলনা করা হয়। আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন করেছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে।

আমাদের গর্ব আমাদের ভাষা। আমারা বাঙালি জাতি, আমাদের নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য আছে। কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ইতিহাস ঐতিহ্যে আমরা একটি সমৃদ্ধ জাতি। আমরা অল্প সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃতি পেতে চাই। এর জন্য মানবতা, শৃঙ্খলা, নৈতিকতা, দেশপ্রেম আমাদের খুবই প্রয়োজন। যারা রাজনীতি করতে চায় তাদের আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সম্মন্ধে সম্যক জ্ঞান থাকা দরকার। নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস চালু করার দরকার। খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চা খুবই প্রয়োজন। আপনজনের সঙ্গে সব সময় থাকার অঙ্গীকার করা উচিত। গ্রামের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ রাখা এবং প্রতিবেশীর খোঁজখবর রাখা উচিত। আত্মঅহমিকা পরিহার করে খাঁটি প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে হবে। আমাদের এমন নেতা হয়ে উঠতে হবে যারা জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত। জনবিচ্ছিন্ন নেতা সমাজের উপকারে আসে না। যারা সত্যি সত্যি সেবার রাজনীতিতে আসতে চায় তাদের সুযোগ দিতে হবে। ব্রত নিয়ে শিক্ষিত, ভদ্র, সর্বজন গ্রহণযোগ্য নেতা আমাদের বাংলাদেশে এখন খুবই প্রয়োজন।

সরকারি সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তা, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কর্তা ব্যক্তিদের স্বাধীন বাংলাদেশে এখনো স্যার বলতে হয়! না বলেল, উচ্চ পর্যায়ের অফিসাররা রাগ করেন এবং বলবার জন্য বাধ্য করেন। কেন তারা নাখোশ হবেন? এসবের কারণটা কি? এটা করে তারা কি বুঝাতে চান? বঙ্গবন্ধু বলেছেন- “আমলা নয় মানুষ হও তোমরা। এদেশের কৃষক, শ্রমিক, দিন-মজুর সহ সকল শ্রেণীর লোকেদের সম্মান দিয়ে কথা বলতে বলেছেন।” এসবের কিছু প্রতিপালন হচ্ছে কি ? আমরা আমলা নির্ভর হয়ে পরেছি অনেকখানি। এর খেসারত আমাদের দিতে হচ্ছে এবং অদূর ভবিষ্যতেও দিতে হবে। সরকারি  অফিস ও ব্যাংক গুলোতে সেবা নিতে গেলে দেখা যায় যে সেবা তো দূরে থাক ভালো ব্যবহারও করছে না। তাদের দেখলে মনে হয় প্রত্যেকে এক এক জন রাজা-বাদশা যা অনাকাঙ্খিত। সরকারি কিছু কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারির অদক্ষতা-অসততা কারনে জনসাধারণ মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাংলাদেশের সংবিধানে জনগনকে বানানো হয়েছে রাষ্ট্রের মালিক। তাদের আর্থসামাজিক মুক্তির সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এই সংবিধানে। বঙ্গবন্ধু আমলাদের উদ্দেশ্যে আরও বলেছেন তোমরা আদর্শবান হও, সৎ পথে থেকো। মনে রাখবা- তোমাদের দেশটাকে ভালোবাসতে হবে, মানুষকে ভালোবাসতে হবে। মানুষ্য শক্তি নিয়েই বাংলাদেশকে নতুন ভাবে গড়ে তুলতে চাই।

সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে করোনা অতিমারির কারণে জেলাওয়ারি স্বাস্থ্যসেবা ও সরকারি কার্যক্রম সমন্বয় করতে সচিবদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। গত ২৮ জুন ২০২১ ইং জাতীয় সংসদ অধিবেশন চলাকালীন প্রবীণ রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহম্মেদ বলেন - জেলায় জেলায় সচিবদের দায়িত্ব দেয়ায় রাজনীতিবিদের কর্তৃত্ব ম্লান হয়েছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সরকার। যার নির্বাচিত প্রতিনিধি তাদের জন্য নির্ধারিত স্থান যেখানে আছে সেখানে থাকা উচিত।  

দেশ চালাচ্ছেন আমলারা। আমরা রাজনীতিবিদেরা এখন তৃতীয় লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। এই হচ্ছে আমাদের দুর্ভাগ্য। অথচ এই দেশ স্বাধীন করেছেন রাজনীতিবিদেরা।" সংসদে বাজেট বক্তৃতায় জাপা এমপি কাজী ফিরোজ রশীদ একথা বলেন। প্রায় একই সুরে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ।  ক্ষোভ থাকতেই পারে তবে বাস্তবাতায় যৌক্তিকতা আছে। আসলেই দেশ কি রাজনীতিকরা চালাচ্ছেন? রাজনীতিকরা তো আর রাজনীতিক নাই। চারিত্রিক পরিবর্তন তো অনেক আগেই হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা হয়েছে রাজনীতিক আর রাজনীতিকদের পেশা এখন ব্যবসা।সব কিছুতেই দুই গোষ্ঠীই খোঁজেন ব্যবসা। বেনিয়াদের হাতেই তো রাজনীতি। রাজনীতিকদের গদি অর্জন আর তা নিরাপদ রাখতে আমলাদের সহযোগিতাই তো বড় সহায়ক। সর্বোপরি রাজনীতিক আর জনপ্রতিনিধীদের কার্যকলাপ যে কতটা জনবান্ধব তাও প্রনিধানযোগ্য। জনসেবায় নিয়োজিত সামর্থ আর সম্পদের ব্যবহার/অপব্যবহারে মাত্রা কোথায় গিয়েছে তা তো আজ প্রতিদিন সর্বজনবিদিত। আজ অর্থ আর পেশীশক্তি হচ্ছে রাজনীতিকের নিয়ামক। রাজনীতিকরাই হারিয়েছে তাদের জনপ্রিয়তা। হারিয়েছে জনগণের আস্থা। যা হবার তাই হয়েছে। বিকল্প হিসাবে তাই আমলাদের পদচারনা। রাজনীতিকরা আজ আছে কাল নেই।আমলারা অব্যয় অক্ষয়। একের দূর্বলতা অন্যের উন্মেষ!

রাজনৈতিক নেতা, এমপি-মন্ত্রী যখন আপন কর্ম ও আচরণে জনগণের আস্থা ও সমর্থন হারিয়ে ফেলে এবং তা উপলব্ধি করতে পারে, তখন নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন করতে এবং আপন স্বার্থসিদ্ধির জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে অনেক ক্ষেত্রেই অনৈতিকভাবে ব্যবহার করে। আর প্রশাসনও সেই সুযোগটা বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগায়। সরকারের ভুল-ভ্রান্তি থাকতে পারে এবং সংশোধন করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। কোন কারণে যেন থেমে না যায় সে ব্যাপারে সবার সজাগ দৃষ্টি থাকা অত্যাবশক। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে সংগঠিত করতে এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার সাহসের সঙ্গে কাজ করছে। রাজনীতিতে স্বচছতা, জবাবদিহিতা, গণতান্ত্রিক ধারা প্রর্বতন করা, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা কুসংস্কার এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা বর্তমান সরকারের লক্ষ্য। সামগ্রিক অর্থবহ উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে।

লেখক: সভাপতি, দেশপ্রেম সোসাইটি

[email protected]

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer