Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪

রাকিবের মায়ের আর্তি

`আমরা এই রায় দ্রুত কার্যকর দেখতি চাই`

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫:৩৪, ৮ নভেম্বর ২০১৫

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

`আমরা এই রায় দ্রুত কার্যকর দেখতি চাই`

ছবি-বহুমাত্রিক.কম

খুলনাঃ ওরা আমার রাকিবরে পেটে বাতাস ঢুকিয়ে মাইরা ফালাইছে, আর ওগো শ্বাস বন্ধ কইরা মারার আদেশ হইছে। ওদের ফাসির আদেশ দিছে জজ ম্যাডাম। আমরা দ্রুত এই আদেশ দ্রুত কার্যকর দেখতি চাই। তা না হলে আমার রাকিব শান্তি পাইবো না।”

রাকিব হত্যা মামলার রায় ঘোষনার পর রােেয় দুই আসামী শরিফ ও মিন্টুর ফাসির দণ্ড দেয়ায় আদালত প্রাঙ্গণের সিড়িতে বসে চিৎকার কওে এমন বিলাপ করেন, রাকিবের মা শাহানাজ পারভীন লাকি। রবিবার খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক দিলরুবা সুলতানা চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। মাত্র ৩ মাস ৫ দিনের মাথায় ১০ কার্যদিবসে মামলাটির রায় ঘোষনা করা হয়।
 

ফাসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন ওমর শরীফ ও মিন্টু খান। এ মামলার অন্য আসামি শরীফের মা বিউটি বেগমকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

গত ৩ আগষ্ট নগরীর টুুপাড়া কবরখানা মোড়ের অদূরে মোটর সাইকেল গ্যারেজ শ্রমিক শিশু রাকিবকে পায়ূপথে কম্প্রেসার মেশিন (হাওয়া দেয়া যন্ত্র) দিয়ে পেটে হাওয়া ঢুকিয়ে হত্যা করা হয়। শিশু রাকিব হত্যাকান্ডের ঘটনায় তার বাবা নুরুল আলম গত ৪ আগস্ট মোঃ শরীফ (৩০), মোঃ মিন্টু খান (৩৫) ও শরীফের মা বিউটি বেগম (৪৮) কে আসামী করে খুলনা থানায় মামলা দায়ের করেন।

রায় শোনার পর রাকিবের মা শাহানাজ পারভীন হাউ মাউ করে কেঁদে ওঠেন। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ’তিনডে মাস খেয়ে না খেয়ে দিন কেটেছে। আজকের এই দিনটির অপেক্ষায়।’ তিনি এই রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানিয়ে বলেন, আসামীরা যেন উচ্চ আদালত থেকে খালাস বা জামিন না পেয়ে যায়, এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি দেয়ার দাবি জানান।

রাকিবের খালা নাসরিন আক্তার (৩০) রাকিব আমাদের সন্তান ছিল না ; সে ছিল আমাদের বাবার মত। সেই বাচ্চা বয়সে( শিশু বয়সে) আমাদেরকে আয় করিয়ে খাইয়েছে। পান কিনে দিত জর্দ্দা কিনে দিত। সেই রাকিব আর নেই ভাবতে গেলেই কান্না পায়।

রাকিবের ছোট্ট বোন রিমি আক্তার বলে, আমার ভাইয়া খুব ভাল ছিল। সে কাজ করতে যাওয়ার আগে আমাকে পড়তে বলতো। স্কুলে যেতে বলতো। সে বলতো আমাকে অনেক লেখাপড়া শেখাবে। মানুষের মত মানুষ করবে। আমার সেই ভাইয়া আজ নেই। আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের ফাসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। এতে আমার ভাইয়ের আত্মা শান্তি পাবে।

এদিকে মামলার রায়ে রাকিবের বাবা বলেন, আজ আমার মত হতদরিদ্র ব্যক্তি যার নুন আনতে পানতা ফুরায় তার সন্তান হত্যাকারীরা শাস্তি পাবে। তিনি দ্রুত তার ছেলে হত্যার রায়ে সন্তাষ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশ, সাংবাদিক এলাকার সাধারণ মানুষ আমার সাথে ছিল তাই আমি সন্তান হারানোর বিচার পেলাম। তিনি রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানান।

বাদী পক্ষের আইনজীবী বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার সমন্বয়কারী মোমিনুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বল্প সময় মাত্র ৩ মাস ৫দিনের মধ্যে শিশু রাকিব হত্যা মামলার রায় একটি নতুন ঘটনা। এর মধ্যে আদালতে মাত্র ১০কার্য দিবসে বিচার কাজ শেষ করেছে। তিনি বলেন, রায়ে আমরা সন্তুষ্ট এবার দরকার রায়ের দ্রুত বাস্তবায়ন।

সরকার পক্ষের কৌশলী অ্যাডভোকেট সুলতানা রহমান শিল্পী  রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, এ সরকার বিচার ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের ন্যায় বিচার পাওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছে। তারই উৎকৃষ্ট প্রমান শিশু রাকিব হত্যার রায়। তিনি বলেন, রাষ্ট্র এই মামলাটিতে আসামীদের বিরুদ্ধে অপরাধ সংশ্লিষ্টতা প্রমান করতে সক্ষম হয়েছে।  

অপরদিকে আসামী পক্ষের আইনজীবী তৌহিদুর রহমান তুষার দাবি করেন, আদালত আবেগ তাড়িত হয়ে দুই আসামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পাওয়ার পর উচ্চ আদালতে যাব।  রাষ্ট্রপক্ষ মামলার অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি শিশু রাকিব হত্যার ঘটনাটিকে ৩০৪ ধারায় অর্থাৎ খুন করার উদ্দেশ্যে রাকিবের ওপর নির্যাতন চালানো হয়নি বলে দাবি করেন।

এদিকে রায় ঘোষনার খবর জানতে পেরে রোাববার সকাল থেকে খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে সাধারণ মারুষের ভীড় বাড়তে থাকে। রাবিকের প্রতিবেশী, নারী, পুরুষ, শিশুসহ শত শত মানুষের পাশাপাশি সংবাদ কর্মীদেরর উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য।
সকালে খুলনা জেলা কারাগার থেকে আসামীদেও আদালতের হাজতখানায় এনে রাখা হয়। সেখান থেকে কড়া পুলিশ প্রহরায় বেলা ১১-৫০ মিনিটে তাদেরকে আদালতে নেয়া হয়।

এ সময়ে উপস্থিত এলাকাবাসী তাদেও ফাসির দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে শ্লোগান দিতে থাকে। রাকিবের মা বিউটি বেগমের উদ্দেশ্যে বলেন, তুই আমাকে ছেলেহারা করেছিস। তুইও ছেলে হারা হবি। ফাসির দড়িতে ঝুলবি। এ সময়ে এক হৃদয় বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

এরপর দুপুর ১২ টা ২ মিনিটে আদালতে প্রবেশ করেন, এই আদালতের সরকার পক্ষের কৌশলী অ্যাডভোকেট সুলতানা রহমান শিল্পী।

দুপুর ১২ টা ৫মিনিটে কালো রঙের একটি প্রাইভেট কার ( ঢাকা মেট্রো-গ ৩৭- ৩০২০) আদালতের সিড়ির সামনে এসে দাড়ায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বাঁশি ফুকিয়ে সকলকে সরিয়ে দেন। এরপর ধীরে ধীরে প্রাইভেট কার থেকে মহানগর দায়রা জজ দিলরুবা সুলতানা নেমে দ্রুততার সাথে হেটে তার খাস কামরায় প্রবেশ করেন। পরে তিনি সেখান থেকে এজলাসে উঠেন। দুপুর ১২ টা ৪৫ মিনিটে তিনি চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer