Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৫ ১৪৩১, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

আফ্রিকায় দাঁতহীন হাতি

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ১১ নভেম্বর ২০১৮

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

আফ্রিকায় দাঁতহীন হাতি

ঢাকা : হাতির দাঁত বলতে সাধারণত উপরের পাটির দুটি দীর্ঘ ছেদন দন্তকে বোঝানো হয়। এই দাঁত দুটি সাদাটে। হাতির মুখের নিচের দিক থেকে তরবারির মতো বেরিয়ে থাকে এই দাঁত দুটো। আফ্রিকার কোন কোন হাতির দাঁতের দৈর্ঘ্য তিন থেকে সাড়ে তিন মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে।

কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে আফ্রিকায় জন্ম নিচ্ছে দন্তবিহীন হাতির বাচ্চা! হাতির কথা উঠলেই সবার সামনে ভেসে ওঠে হাতির লম্বা শুঁড়, বড় বড় কান আর উপরের পাটির দুটি দীর্ঘ দাঁত। কিন্তু আফ্রিকার কিছু দেশ মোজাম্বিকে এখন জন্ম হচ্ছে দন্তহীন হাতির। মূলত জিনগত পরিবর্তনের কারণেই সেখানে এই ধরনের বিরল ঘটনা ঘটছে।

বিজ্ঞানীরা এর কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখেছেন চোরা শিকারিদের হাতে হাতি মৃত্যুহার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়াতেই এমনটা ঘটছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষেণ আন্দোলনকারীদের দাবি, শুধুমাত্র দাঁতের জন্য প্রতি বছর ৩০ হাজার আফ্রিকান হাতি হত্যা করে চোরা শিকারিরা। ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত মোজাম্বিকে স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং ১৯৭৭ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত গৃহযুদ্ধের কারণে দীর্ঘ সময় অস্থিতিশীলতার মধ্যে দিয়ে গেছে দেশটি।

তবে গৃহযুদ্ধের ১৫ বছরে দেশের অবকাঠামো, অর্থনীতির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির বন্যপ্রাণী, বিশেষ করে হাতি। দেশের মধ্যে চলমান অস্থিরতাকে কাজে লাগিয়ে চোরাশিকারিরা হাতি নিধন করেছে। গৃহযুদ্ধের সময় হাতির দাঁত বিদেশে পাচার করে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে যুদ্ধের অস্ত্র কিনেছে। আর মৃত হাতির মাংস খাওয়ানো হয়েছে যোদ্ধাদের। গৃহযুদ্ধের কারণে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়ে মোজাম্বিকের প্রাচীনতম হাতির বিচরণক্ষেত্র মোজাম্বিক গোরোনগোসা ন্যাশনাল পার্কটি।

আর এভাবে নির্বিচারে চোরা শিকারিদের লোভের লক্ষ্যবস্তু হওয়ার কারণে হাতির জিনগত কিছু পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। ১৯৯২ সালের পর ঐ অঞ্চলে বেশিরভাগ হাতির জন্ম হতে থাকে দন্তহীন অবস্থায়। আফ্রিকান হাতিদের ক্ষেত্রে সাধারণত ২ থেকে ৪ শতাংশ মাদী হাতির লম্বা দাঁত দুটি থাকে না। কিন্তু এখন সেই চিত্র অনেকটাই বদলে গেছে। এখন নারী-পুরুষ সব হাতির ক্ষেত্রেই দাঁত না থাকার আশঙ্কা অনেক বেশি।

হাতির আচরণ বিশেষজ্ঞ জয়ছে পুলে বলেন, কয়েক যুগ আগে এই অঞ্চলে চার হাজারের বেশি হাতির বিচরণ ছিল। কিন্তু গৃহযুদ্ধের পর এই সংখ্যা তিন অঙ্কে নেমে আসে। সর্বশেষ এক গবেষণা অনুযায়ী, এই অঞ্চলে বর্তমানে মাত্র দুইশর মতো মাদী হাতি রয়েছে। এদের মধ্যে গৃহযুদ্ধের পর টিকে থাকা হাতিদের ৫১ শতাংশের দাঁত নেই। আর গৃহযুদ্ধের পর জন্ম নেওয়া ৩২ শতাংশ হাতির দাঁত নেই। মোজাম্বিক ছাড়াও আশেপাশের আফ্রিকান দেশগুলোতেও দন্তবিহীন হাতি জন্মের হার বেড়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার আডডো এলিফ্যান্ট ন্যাশনাল পার্কের ১৭৪টি মাদী হাতির মধ্যে ৯৮ শতাংশেরই এই দাঁত দুটি নেই। সেখানেও দাঁতের জন্য হাতি হত্যা করাটা একটি সাধারণ চিত্র।

দন্তবিহীন হাতি জন্ম নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছু বছর ধরে হাতি বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করছেন। তাদের মতে, চোরাশিকারিদের মতো বিরূপ পরিবেশের কারণে হাতিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অভিযোজন ক্ষমতা। এই ধরনের নানা প্রতিকূল পরিবেশের দ্বারাই হাতিরা নিজেদের বদলে ফেলতে পারে। ধারণা করা যায়, চোরাশিকারিদের এমন নিষ্ঠুরতার কারণেই আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের হাতিরা নিজেদের বদলে ফেলতে বাধ্য হচ্ছে। তবে এতে হাতির মধ্যে যে সকল জিনগত পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে তা ভাবিয়ে তুলছে গবেষকদের। কারণ হাতির জিনগত পরিবর্তন দীর্ঘমেয়াদে ইকোসিস্টেমকে প্রভাবিত করতে পারে।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer