ঢাকা: বেশ কিছুদিন ধরে শতভাগ মজুরি ও বোনাস এবং বকেয়া মজুরির দাবিতে বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা আন্দোলন করছেন। শ্রমিকদের এসব আন্দোলনের মধ্যে বেশ কিছু কারখানায় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। দুটি কারখানার মালিক লাঞ্ছিত হয়েছেন। পরিস্থিতি চলমান থাকলে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না বলে মন্তব্য করেছে পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ।
বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক এবং বিকেএমইএর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান বুধবার এক যৌথ বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।
গেল মঙ্গলবার পর্যন্ত ডিবিএল, ওপেক্স, মেডলার, ইমপ্রেস, ভিশন, ডিজাইনটেক্স, সেনটেক্স, সিভিক অ্যাপারেলস, ফকির নিটওয়্যারসহ বেশ কিছু কারখানা ভাংচুর করেছে শ্রমিকরা।
বিষয়টি নিয়ে বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর সভাপতি বলেন, গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে, ছোট ও মাঝারি কারখানার পাশাপাশি উন্নত কর্মপরিবেশ আছে ও বেতন-ভাতা নিয়মিত পরিশোধ করা হয়, এমন বড় বড় কমপ্লায়েন্ট কারখানায়ও আন্দোলনের নামে ভাঙচুর হচ্ছে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে। অরাজক পরিস্থিতি ও ভাঙচুরের কারণে কারখানা বা ব্যবসা বন্ধ হলে মালিক-শ্রমিক উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এতে সার্বিকভাবে অর্থনীতি পিছিয়ে পড়বে। সেই সঙ্গে সামাজিক ভারসাম্যও বিনষ্ট হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি নড়ে গেছে। যার প্রত্যক্ষ প্রভাবে দেশের শীর্ষ রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্প বিপর্যস্ত। বিদেশি ক্রেতারা একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল করছে। এমনকি অনেক ক্রেতা দেউলিয়াও হয়ে যাচ্ছে। এমন স্পর্শকাতর সময়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল শ্রমিকদের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের ব্যবহার করে পোশাকশিল্পে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টায় জড়িয়েছে। আন্দোলনে অনুপ্রবেশকারীরাও রয়েছে, যারা প্রকৃত শ্রমিক নয়।
বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ মনে করে, বর্তমান সংকটময় সময়ে মজুরি ও বোনাসের ইস্যুতে কারখানা ভাঙচুর করার যৌক্তিকতা নেই। কারণ সরকার, মালিক ও শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কারখানাগুলো মজুরি ও বোনাস পরিশোধের আপ্রাণ চেষ্টা করছে। আবার ত্রিপক্ষীয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মজুরি ও বোনাস পরিশোধ করা সত্ত্বেও অনেক কারখানায় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে, যা রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য অশনিসংকেত।
বিবৃতিতে বলা হয়, রপ্তানি খাতের প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত সহজ শর্তে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। তবে অনেক উদ্যোক্তা আবেদন করেও এই ঋণ পাননি। ঋণ আবেদনের জন্য গতকাল পর্যন্ত বিজিএমইএর সনদ নিয়েছে ১ হাজার ৩৭৭টি কারখানা। আর বিকেএমইএর সনদ নিয়েছে ৫১৯টি কারখানা।
পোশাক খাতে অরাজকতা সৃষ্টিকারী দুষ্কৃতকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএ।