আজ আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। বিশ্ব জুড়ে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধিতার শিকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও সুরক্ষার অঙ্গীকার নিয়ে উদযাপন হতে যাচ্ছে ৩০তম আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। বাংলাদেশ এবছর ২৩তম জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস উদযাপন করছে।
সারা বিশ্বে প্রায় দুই বছর ধরে বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ মানব জীবনে যেসব নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে স্বভাবতঃই প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনকেও তা প্রভাবিত করেছে। কোভিড-১৯ মহামারির বিষয়টি বিবেচনা করে এবছর প্রতিবন্ধী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী দিবসের এবছরের প্রতিপাদ্য ‘কোভিড-১৯ পরবর্তী অন্তর্ভূক্তিমূলক বিশ্ব গড়তে প্রয়োজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণ।’
সমাজসেবা অধিদপ্তরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী নারী, পুরুষ ও হিজড়াসহ বাংলাদেশে মোট প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা ২৪ লাখ ২৯ হাজার ৮৫৮ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১১ সালের জুন মাসে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রতিবন্ধীতার হার ১৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস (বিবিএস) পরিচালিত এক হাউজ হোল্ড জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে এই প্রতিবন্ধীতার হার ৯.০৭ শতাংশ। ধরন অনুযায়ী মানুষের মধ্যে প্রায় ১২ ধরনের প্রতিবন্ধিতা শনাক্ত করা হয়েছে। এগুলো হলো, অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারস, শারীরিক, মানসিক অসুস্থতাজনিত, দৃষ্টি, বাক প্রতিবন্ধীতা, বুদ্ধি, এবং শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা, সেরিব্রাল পালসি, ডাউন সিনড্রোম, বহুমাত্রিক এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধিতা।
প্রতিবন্ধী দিবসকে সামনে রেখে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ পৃথক বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ তাঁর বাণীতে বলেন, সকল প্রকার শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা মানব বৈচিত্রেরই অংশ। তাই, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে তাদের উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করা খুবই জরুরি। সমাজের অবিচ্ছেদ্য এ অংশকে সকল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ ও তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। তবেই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখতে সক্ষম হবেন।
প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে দিবসটি উপলক্ষে বিশ্বের সকল প্রতিবন্ধী মানুষকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ১৯ (১) নম্বর অনুচ্ছেদে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ এদেশের সকল নাগরিকের সুযোগের সমতা নিশ্চিত করা হয়েছে। তাই, দেশের প্রতিবন্ধী জনগণের সর্বিক উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরের জনগণ, সংশ্লিষ্ট সকল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও দেশি-বিদেশি সংস্থাগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
এ দিবস উপলক্ষে প্রতিবছর সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সভা, সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। তবে, কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের কারণে গতবছর দিবসটি ব্যাপকভাবে উদযাপনের সুযোগ হয়নি। এবছরও বাংলাদেশ সীমিত আকারে দিবসটি উদযাপন করছে।
সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মো. আশরাফুল আলী খান খসরু বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের সমান অধিকারের সুযোগ রয়েছে। সমাজের প্রতিবন্ধী মানুষেরা যাতে সব ধরনের নাগরিক সুবিধা ভোগ করতে পারেন, সেজন্য সরকারি চাকুরিতেও তাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা বরাদ্দ করা হয়েছে। তাদের চলাচলের সুবিধার জন্য মেট্রোপলিটন সিটিগুলোতে স্কুল, কলেজ, অফিস, রাস্তাঘাটসহ প্রতিটি জায়গায় প্রতিবন্ধী বান্ধব অবকাঠামো নির্মাণের ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশে কোভিড সংক্রমণ পুনরায় বেড়ে যাওয়ায় সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে সরাসরি সভা, সমাবেশ ও শোভাযাত্রার আয়োজন থেকে বিরত থাকছে। তবে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও এর অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানসমূহ সীমিত আয়োজনের মধ্যে দিয়ে দিবসটি উদযাপন করবে।
সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। তাই, এবছরও সীমিত আকারে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে। অনলাইনে সেমিনার ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও সংবাদপত্রে দিবসটি উপলক্ষে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। টেলিভিশনে আলোচনা ও টকশো প্রচারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার ও সুরক্ষা সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে লিফলেট, ফেস্টুন ও ব্যানার প্রকাশ ও প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ডিজ্যাবিলিটি এলায়েন্স অন এসডিজিস বাংলাদেশ এবং ইউএনডিপি ‘প্রতিবন্ধী দিবস ২০২১’ উদযাপন উপলক্ষে ‘কোভিড-১৯ পরবর্তী অন্তর্ভূক্তিমূলক বিশ্ব গড়তে প্রয়োজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণ’ শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করেছে। আগামী ৪ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
এসব অনুষ্ঠানে উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, সরকারের মন্ত্রী, সচিবসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতিনিধি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট দেশি-বিদেশী সংস্থার প্রতিনিধিসহ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন।