এসেছে বরষা, এসেছে নবীনা বরষা। মঙ্গলবার ১ আষাঢ়, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ। আষাঢ়ের প্রথম দিবস থেকে আনুষ্ঠানিক সূচনা হলো প্রিয় ঋতু বর্ষার। বাংলা সাহিত্যে বর্ষা কখনো প্রেমের ঋতু, আবার কখনো বা বিরহের। বর্ষার রিমঝিম শব্দে কখনো আবার মনের মধ্যে ওঠে বিদ্রোহের ঝড়। মেঘাচ্ছন্ন আকাশ আর প্রিয় মানুষের হাতের একগুচ্ছ কদমফুল জানিয়ে দেয় বর্ষার আগমন বার্তা।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘আষাঢ়‘ কবিতায় বলেছেন, ‘বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর, আউশের ক্ষেত জলে ভরভর, কালি-মাখা মেঘে ও পারে আঁধার ঘনিছে দেখ চাহি রে। ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।’
গ্রীষ্মের খরতাপে অতিষ্ঠ প্রাণকে শীতলতা দানে জুড়ি নেই বর্ষাকালের। প্রকৃতি প্রেমিক মানুষের কাছে তাই বর্ষা নিয়ে আসে অভিনব ব্যঞ্জনা। আর কবিদের ক্ষেত্রে তো কথাই নেই। গানে-কবিতায় বাংলার কবিরা করেছেন বর্ষা-বন্দনা। তাই ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’ দিয়ে প্রণয় নিবেদন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের কাছে বর্ষাকে মনে হয়েছে ‘বাদলের পরী’। তিনি লিখেছেন: রিমঝিম রিমঝিম ঘন দেয়া বরষে/কাজরি নাচিয়া চল, পুর-নারী হরষে…।
আষাঢ় বাংলা সনের তৃতীয় মাস। আষাঢ় নামটি এসেছে পূর্বাষাঢ়া ও উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থান থেকে। এমাসে প্রচুর বৃষ্টি হয়। গ্রীষ্মের দাবদাহ শেষে আষাঢ়ে বৃষ্টির ছোঁয়ায় বাংলার প্রকৃতি যেন প্রাণ ফিরে পায়। নতুন আনন্দে জেগে উঠে প্রকৃতি। গ্রীষ্মের রুদ্র প্রকৃতির গ্লানি আর জরাকে ধুয়ে মুছে প্রশান্তি স্নিগ্ধতা আর সবুজে ভরে তোলে বর্ষা।
বর্ষা যেমন বাঙালির জীবনে আশির্বাদ বয়ে আনে তেমনি অতিবৃষ্টিতে দুঃখের কারণও হয়ে ওঠে। বর্ষার অকৃত্রিম দান কৃষকের সেচের খরচ বাঁচিয়ে দেয়। তবে বর্ষায় অতিবৃষ্টি বন্যাও নিয়ে আসে। তাই বর্ষার সঙ্গে মিশে আছে আমাদের আনন্দ-বেদনার কাব্য। বর্ষার আগমন সবার জীবনে বয়ে আনুক সুখ ও সমৃদ্ধি।
প্রতি বছরের মতো এবারও বর্ষাবরণে নানা প্রস্তুতি নিয়েছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন। সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতেও থাকছে নানা আয়োজন।
দেশের নৃতাত্বিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বর্ষাকে নিয়ে নানা উপকথা প্রচলিত। কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায় বর্ষাবরণের জন্য সমুদ্র সৈকতে মাসব্যাপী উৎসবের আয়োজন করে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকেরা এ উৎসবে যোগ দেন।
হঠাৎ বর্ষা নাগরিক মনে আনন্দের বার্তা এনে দিলেও অতিবর্ষণ ডেকে আনে বিপদ। বাস্তুহারা মানুষের বিপদ আরো বেশি। তবুও বর্ষা বাঙালির জীবনে অবিচ্ছেদ্য অংশ। সবুজের সমারোহ, মাটিতে নতুন পলির আস্তরণ গায় নবজীবনের জয়গান। সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামলা বাঙলা মায়ের নবজন্ম এই বর্ষাতেই। সারা বছরের খাদ্য-শস্য-বীজের উন্মেষ তো ঘটবে বর্ষার ফেলে যাওয়া অফুরন্ত সম্ভাবনার পলিমাটি থেকে।
আষাঢ়ের প্রথমদিনে ভোর ৬টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে। তারপর থেকে আকাশ মেঘে ঢেকে আছে।
আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান খান বলেন, ‘ঢাকায় ভোর ৬টা পর্যন্ত ৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। তারপর আরো কিছু সময় বৃষ্টি হয়েছে। সেই বৃষ্টির পরিমাণ এখনও রেকর্ড হয়নি।’
বাংলা বর্ষপঞ্জিকা অনুযায়ী আজ বর্ষাকালের আগমন ঘটলেও আবহাওয়াবিদদের রীতি অনুযায়ী জুন মাসকেই তারা বর্ষাকাল বলে থাকে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বর্ষাকালের বৃষ্টি হয়। তাই যখনই এই মৌসুমী বায়ুর আগমন ঘটে তখন থেকেই বর্ষাকাল শুরু। এই মৌষুমী বায়ুর আগমন ঘটে সাধারণত জুন মাসে। এবার এর আগমন ঘটেছে ৭ জুন।
এ বিষয়ে আবদুর রহমান খান বলেন, ‘আমাদের আবহাওয়ার রীতিতে বর্ষাকাল হলো জুন মাস থেকে। এবার দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তার করে জুনের প্রথম সপ্তাহে। তারপর থেকেই বর্ষাকাল শুরু হয়েছে।’
আজকের পূর্বাভাসে তিনি বলেন, ‘আজ আরো বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। হয়তো দেখা গেল, একটু বৃষ্টি হলো তারপর অনেকক্ষণ হলো না, এভাবে বৃষ্টি হতে পারে। ঢাকাসহ সারাদেশে এভাবে আজ বৃষ্টি হতে পারে।’