ঢাকা : একজন শিল্পীর কাছে, একজন গীতিকারের কাছে মৃত্যুও এর চেয়ে বোধহয় শ্রেয়। করোনা লকডাউনে বাঙালির নিত্য বিনোদন পাঞ্জাবি র্যাপার বাদশার নয়া র্যাপ `গেন্দা ফুল`। বাদশার বাদশাহি র্যাপ আর বলিউডের জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজের হাস্য-লাস্যে এই প্রজন্ম বেমালুম ভুলেছে `বড়লোকের বিটি লো` লোকগানের জন্মদাতা রতন কাহারকে।
শিল্পীর এই অপমৃত্যুতে দুঃখ পেয়েছেন আগের প্রজন্মের বহু গানপ্রেমী। তাঁদের দাবি, বঙ্গকে ধার করেই সমৃদ্ধ পাঞ্জাবি র্যাপারের এই গান। কিন্তু কোথাও রতন কাহারকে বা তাঁর নাম স্মরণ করা হয়নি!
বিতর্ক, ক্ষোভ---যা-ই বলুন, দানা বেঁধেছে গানটি সামনে আসার পর থেকেই।
গানের নবজন্মের হাত ধরে ফিরে এসেছে তার পূর্বজন্ম, অতীত স্মৃতিও। রতন কাহার দূরঅস্ত, গানের শিল্পী স্বপ্না চক্রবর্তীর নামই কোথাও উচ্চারিত হয়নি। উচ্চারিত হয়নি দোতারা বাদক পরিতোষ রায়ের কথাও। কিন্তু দোতারা বাজানোর ভঙ্গিটি অনায়াসে জায়গা করে নিয়েছে গানের দৃশ্যে! বিতর্ক ঝড় তোলার পরেই যোগাযোগের চেষ্টা করে হয়েছিল পাঞ্জাবি র্যাপারের সঙ্গে। কিন্তু তাঁর মুঠোফোন পরিষেবার বাইরে!
এদিকে, বিতর্ক দানা বাঁধার বেশ কিছুদিন পরেও টুঁ শব্দ শোনা যায়নি রতন কাহারের মুখে। বাংলা এবং বাঙালি তাঁর হয়ে, তাঁকে ন্যায় পেতে গলা তুলেছে। রচয়িতা তবু নীরব। অবশেষে নীরবতার আগল ভেঙে সোচ্চার হলেন রাঙামাটির দেশ বীরভূমবাসী। এবং মুখ খুলতেই গানের বদলে ক্ষোভ ঝরল গলা দিয়ে। জানালেন, ‘শুধু আজ কেন! কোনোদিনই এই গানের রচয়িতা হিসেবে স্বীকৃতি পাইনি। আমার লেখা, আমার সুর এবং গাওয়া গান অনেকবার নতুন খোলস পড়েছে। ভুলেও আমার কথা কেউ বলেনি। আমাকে চেনেই বা কে? আর চেনার চেষ্টাই বা করেছে ক`জন?`
এখানেই থামেননি সত্তরোর্ধ্ব মানুষটি। বলেছেন, আজীবন বঞ্চিত তিনি। এই যন্ত্রণা কতখানি একমাত্র ভুক্তভোগীই বুঝবেন! এরপরেই প্রবীণ শিল্পীর আন্তরিক মিনতি, "আমার চারপাশে অনেক বিশিষ্ট লেখক এবং ভালো মানুষ আছেন। তাঁদের কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ, এতদিন আপনারা মুখ খোলেননি। এবার মুখ খুলুন। প্রতিবাদ করুন। এভাবে একজন শিল্পীর জীবন্ত অন্ত্যেষ্টি দেখবেন না। ভালো গান নষ্ট হতে দেবেন না।
এনডিটিভি