Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৩ ১৪৩০, বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪

বর্তমান’র সম্পাদকীয়

আগামী দু’সপ্তাহের লড়াই আরও কঠিন

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:১৮, ৩ এপ্রিল ২০২০

প্রিন্ট:

আগামী দু’সপ্তাহের লড়াই আরও কঠিন

আগামী দু’টি সপ্তাহ খুব গুরুত্বপূর্ণ। আগামী দু’সপ্তাহেই ঠিক হয়ে যাবে, আমরা আমেরিকা হব কি না। এই দু’সপ্তাহেই ঠিক হয়ে যাবে, আমরা ইতালির সর্বনাশা রাস্তাকেই বেছে নিলাম কি না। এই দু’সপ্তাহেই প্রমাণ হয়ে যাবে, আমেরিকা, ইতালি, স্পেন থেকে আমরা সত্যিই কোনও শিক্ষা নিয়েছি কি না! আমাদের ভালো থাকা, আমাদের খারাপ থাকা, সবটাই আমাদের হাতে। আমরা যদি লকডাউন না মানি, আমরা যদি লকডাউনের সময় শৃঙ্খলাপরায়ণ না হয়ে ছুটির আমেজে ঘুরে বেড়াই, তাহলে ডেকে আনব সর্বনাশ।

সেই সর্বনাশের আগুনে দগ্ধ হব নিজেরা, দগ্ধ করব পরিবারের লোকজনকে, বিপদে ফেলব রাজ্য সহ সমগ্র দেশকে। বাঁধন আলগা হলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, তা সামাল দেওয়ার ক্ষমতা ভারতের নেই। মারণ ভাইরাস করোনা ছড়াতে শুরু করলে হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ মানুষ সংক্রামিত হয়ে যাবেন। সেই অবস্থা সামাল দেওয়ার মতো পরিকাঠামো আমাদের রাজ্যে বা দেশে নেই। তাই বারবার চিকিৎসক থেকে মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীও গৃহবন্দি রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন।

লকডাউন ঘোষণার পর প্রথম কয়েকদিন রাস্তাঘাটে মানুষের উপস্থিতি তেমন ছিল না। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষকে সেভাবে রাস্তায় নামতে দেখা যায়নি। একটা ভয় ছিল। কিন্তু, মঙ্গলবার থেকে আচমকাই বাঁধন আলগা হতে শুরু করেছে। অনেকেই করোনার এই আগ্রাসনকে খুব হাল্কা চালে নিতে শুরু করেছে। রাস্তাঘাট, বাজারের ছবি অন্তত সেটাই প্রমাণ করছে। অনেকেই অপ্রয়োজনে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছেন। যাঁদের ক্ষমতা আছে তাঁরা নিজেদের সুরক্ষিত রাখার জন্য এন৯৫ মাক্স মুখে লাগিয়ে বাইক নিয়ে স্বামী স্ত্রী বেরিয়ে পড়ছেন। অনেকেই ভাবছেন, ভিড়ে ঠাসা শহরের লকডাউনের বিপরীত ছবিটা দেখার সুযোগ হাতছাড়া করা ঠিক হবে না।

যাঁরা এটা ভেবে রাস্তায় বের হচ্ছেন, তাঁদের মস্ত ভুল হচ্ছে। খেসারত তাঁদের গুনতেই হবে। এভাবে সবাই শুনশান শহরের দৃশ্য দেখতে বেরিয়ে পড়লে এন৯৫ মাস্ক তাঁদের সুরক্ষিত রাখতে পারবে না। কারণ আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা যত বাড়বে, বাতাস ততই সংক্রামিত হবে। আর সেই বায়ুমণ্ডল থেকেই তাঁদের নিতে হবে অক্সিজেন। তাই সংক্রমণের সংখ্যা আমাদের কমাতেই হবে। আর তার জন্য একটা রাস্তাই খোলা, নিজেদের রাখতে হবে গৃহবন্দি। অনেকেই হয়তো রাজ্য এবং দেশের করোনা আক্রান্তের সংখ্যার দিকে নজর রেখে স্বস্তি পাচ্ছেন।

ভাবছেন, ১৩০ কোটির দেশে আক্রান্ত সবে তো হাজার দুয়েক! তাঁরা হয়তো শতাংশের হিসেব কষছেন। শতাংশের বিচারে সত্যিই খুবই কম। কিন্তু একটা কথা মনে রাখতে হবে, করোনা বাড়ে লাফিয়ে লাফিয়ে।
এই মুহূর্তে গোটা দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষ হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। তাঁদের টেস্ট হচ্ছে না। টেস্ট হলে সংখ্যাটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা অনেকেই অনুমান করতে পারছেন না।

ওয়ার্ল্ড হেল্থ অর্গানাইজেশন(হু) বারবার একটা কথাই বলছে, টেস্ট, টেস্ট অ্যান্ড টেস্ট। টেস্ট করে আক্রান্তদের চিহ্নিত করা এবং তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করাই এই মারণ ভাইরাস ঠেকানোর একমাত্র পথ। কিন্তু দেশজুড়ে টেস্টের সংখ্যা খুবই কম হচ্ছে। তাই আক্রান্তের সংখ্যাটাও হয়তো সেভাবে সামনে আসছে না। তাই আত্মতুষ্টির কোনও অবকাশ নেই। আগামী দু’ সপ্তাহ নিজেদের আরও বেশি করে কঠিন শৃঙ্খলে বাঁধতে হবে।

অনেকে এখনও হয়তো ভাবছেন, ভারতের উচ্চ তাপমাত্রা হয়তো করোনা থেকে আমাদের বাঁচিয়ে দেবে। প্রাকৃতিক কারণেই মারণ ভাইরাস থাবা প্রসারিত করতে পারবে না। এই ভাবনায় যাঁরা সাহস সঞ্চার করে রাস্তায় অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, সন্ধ্যায় চায়ের দোকান অথবা মদের ঠেকে গিয়ে জমাটি গল্প চালিয়ে যাচ্ছেন, তাঁরা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন। যে মারণ ভাইরাসের চরিত্র, গতিপ্রকৃতি এখনও বিশ্বের তাবড় তাবড় বিজ্ঞানী ও চিকিৎসক অনুধাবন করতে পারছেন না, সে এত সহজে কাবু হবে, ভাবাটা বড় ভুল হয়ে যাবে।

সেই ভুলটাই আমরা অনেকে করে যাচ্ছি। হয়তো বেশিরভাগ মানুষই লকডাউন মেনে গৃহবন্দি হয়ে আছেন। কিন্তু, যাঁরা রাস্তায় বের হচ্ছেন তাঁদের সংখ্যাটাও কম নয়। তাঁদের অবাধ বিচরণ, চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে অন্যজনের সঙ্গে দূরত্ব বজায় না রাখার খেসারত দিতে হবে গোটা সমাজকে। তাঁদের হাত ধরেই বাড়িতে ঢুকে যাবে মারণ ভাইরাসের বীজ। তারপর তা ছড়িয়ে যাবে গুণোত্তর প্রগতিতে। করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির হার বড়ই ভয়ঙ্কর। তাই সাবধান আমাদের হতেই হবে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার রাজ্যবাসীকে সতর্ক করে বলেছেন, ’খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে বেরবেন না। লকডাউন সফল করুন। সাবধানে থাকুন, দূরত্ব বজায় রাখুন। বাইরে আড্ডা দেবেন না, ঘুরবেন না।’ বাড়ির মেয়ে, বোন হিসেবে এটাই ছিল তাঁর হাতজোড় করা অনুরোধ। অনুরোধকে সম্মান জানানো আমাদের পরম্পরা। তার আরও একবার প্রমাণ আমাদের দিতেই হবে। মাত্র দু’টি সপ্তাহ।

বর্তমান’এর এর সম্পাদকীয় থেকে 

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer