Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১০ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪

আগরতলায় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে ফেলার নিন্দা

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:২৪, ৭ জুলাই ২০২১

প্রিন্ট:

আগরতলায় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে ফেলার নিন্দা

ছবি: সংগৃহীত

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ ও সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ এক বিবৃতিতে সম্প্রতি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলার কেন্দ্রস্থল পোস্ট অফিস চৌমুহনীতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে নির্মিত ৪০ ফুট  উঁচু শহীদ স্মৃতিস্তম্ভটি ভেঙে ফেলার সংবাদে গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, এই স্মৃতিস্তম্ভটি শহীদদের স্মৃতি রক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরার জনগণের অব্যাহত সমর্থন ও ত্যাগের কথাও স্মরণ করিয়ে দেয়। এই জাতীয় ঐতিহাসিক স্পর্শকাতর স্থাপনা ইতিহাসকেই প্রতিনিধিত্ব করে। বিবৃতিতে বলা হয়, এই ধরনের স্থাপনা ভারতের, বিশেষকরে ত্রিপুরার জনগণের সাথে বাংলাদেশের জনগণের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বিবৃতিতে ত্রিপুরা সরকারের নগর উন্নয়নের সূত্রে এই স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে ফেলাকে অবিবেচনাপ্রসুত উল্লেখ করে যথাস্থানে তা পূণনির্মাণের আহ্বান জানানো হয়। জোট নেতৃবৃন্দ ২০০০ সালে ত্রিপুরায় আয়োজিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ উৎসবের সময় এই স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদনের কথা উল্লেখ করেন।

ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার কেন্দ্রস্থল পোস্ট অফিস চৌমোহনির ৪০ ফুট উঁচু শহীদ স্মৃতিস্তম্ভটি ভারত ও বাংলাদেশের গণমানুষের অভিন্ন মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ও সৌহার্দ্যের অন্যতম প্রধান স্মৃতিচিহ্ন, যা দুই দেশের বীর শহীদদের সম্মিলিত রাখিবন্ধনের সাক্ষী।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলা শহরের প্রাণকেন্দ্র পোস্ট অফিস চৌমুহনী থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি শহীদ বেদি ভেঙে ফেলা হয়েছে। বলা হচ্ছে আগরতলা স্মার্টসিটি গড়তেই এ সিদ্ধান্ত। তবে বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন মহলে।  

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় বীর শহীদ জওয়ানদের স্মরণে একটি শহীদ সৌধ তৈরি করা হয় আগরতলার প্রাণকেন্দ্র পোস্ট অফিস চৌমুহনীতে। পাশাপাশি এই সৌধের পাশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে তাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে আনা ট্যাঙ্ক ও যুদ্ধে ব্যবহৃত ভারতীয় সেনাদের ব্যবহৃত কামান রাখা হয়।  

প্রতি বছর ২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস, ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবসে এই শহীদ স্মৃতিসৌধে বীর জওয়ানদের শ্রদ্ধা জানানো হয়ে আসছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। একই সঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফেও শ্রদ্ধা জানানো হয় এখানে।  

কিন্তু আগরতলা স্মার্ট সিটির জন্য রাস্তা সম্প্রসারণসহ অন্য উন্নয়নমূলক কাজের নামে আগেই ট্যাঙ্ক ও কামান এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শনিবার (৩ জুলাই) শহীদ বেদিটিও ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখন কঠোরভাবে করোনা কারফিউ চলছে। ফলে রাস্তাঘাটে লোকজন প্রায় থাকেই না। এই নির্জনতার সুযোগে এটি ভেঙে ফেলা হলো। যার জেরে রাজ্যের বুদ্ধিজীবী মহলে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।  

ত্রিপুরা বিধানসভার সাবেক ডেপুটি স্পিকার পবিত্র কর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন- সরকার বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মারক কামান স্মার্ট সিটির নাম করে আগররতলা শহরের প্রাণকেন্দ্র পোস্ট অফিস চৌমুহনী থেকে আগেই প্রতিবাদ উপেক্ষা করে সরিয়ে নিয়ে গেছে। আজ শেষ চিহ্ন যুদ্ধে নিহত সৈনিকদের স্মৃতি শহীদ বেদিও ভেঙে দিয়েছে। বলা চলে ভারত-বাংলা মৈত্রীর স্মারক সরিয়ে দেওয়ায় সমস্ত রাজ্যবাসী মর্মাহত।

ত্রিপুরা রাজ্যের সাবেক বিধায়ক তথা ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি তাপস দে এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। রোববার (৪ জুলাই) বাংলানিউজের কাছে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, উন্নয়নের নামে শহীদ বেদি ভেঙে ফেলা শুধু নিন্দনীয় নয়, এটি একটি ঘৃণ্য কাজও। এর মধ্য দিয়ে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এবং কংগ্রেস সরকারের যে ভূমিকা ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠন করার জন্য তা মুছে ফেলার অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।  

শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন কামান ও ট্যাঙ্ক সরিয়ে রাজধানীর লিচু বাগান এলাকার অ্যালবার্ট এক্কা পার্কে রাখা হয়েছে। এই শহীদ স্মৃতিসৌধটিও এখানে রাখা হবে বলে আগেই জানানো হয়েছে।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer