ছবি: বহুমাত্রিক.কম
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে এক বীজ ব্যবসায়ীর দেওয়া ব্র্যাক সীড অ্যান্ড অ্যাগ্রো এন্টার প্রাইজ-এর হাইব্রিড-১৪ জাতের মেয়াদ উত্তীর্ণ ধান বীজের চারা রোপণ করে সর্বশান্ত হয়েছেন কয়েকজন সাধারণ কৃষক। এই মেয়াদ উত্তীর্ণ ধান বীজের চারা প্রায় ২৫ বিঘা জমিতে রোপিত হয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নের কাদোয়া (খোলাগাড়ি) গ্রামের মাঠে ক্ষতিগ্রস্থ ক্ষেতের সকল ধান গাছের চারার বাড়ন্ত থোকার থেকে মাঝখান ফেটে ফেটে ধানের শীষ বেড় হচ্ছে। আবার একই থোকা থেকে নতুন নতুন গাছ গজাচ্ছে এবং একই থোকাতে দেখা গেল ধান পাকা শুরু করেছে। এতে করে ক্ষেতের স্বাভাবিক ধান উৎপাদন সম্পুর্ণরূপে ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তিলকপুর বাজারের ষ্টেশন রোডের মেসার্স মিতু ট্রেডার্স এর মালিক মাহফুজ এর দোকানে কৃষকরা ধানী গোল্ড ব্রান্ডের হাইব্রিড জাতের ধান বীজ ক্রয় করতে যান। বীজ বিক্রেতা তার অধিক লাভের আশায় সু-কৌশলে মেয়াদ উর্ত্তীণ ও এই অঞ্চলের জন্য অনুমোদিত ধান বীজ নয় তবুও সেই বীজগুলো প্রতারনা করে অধিক ফলনের আশ্বাসে সাধারণ কৃষকদের কাছে বিক্রি করে। সেই বীজ গুলো রোপন করে ক্ষতির মুখে পড়েছে কাদোয় (খুলাগাড়ি) গ্রামের মৃত আশরাফ আলীর ছেলে আব্দুল আউয়াল, মুজিবর রহমানের ছেলে কৃষক আজিজুল ও মির্জাপুর গ্রামের কৃষক টুকু।
তারা মোট ২৫ বিঘা জমিতে ওই ধানের চারা রোপন করে সর্বশান্ত হয়ে বীজ বিক্রেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম মাহমুদ সজল ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে। সপ্তাহ জুড়ে কৃষকরা ঘুরছেন বিভিন্ন দফতরে কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোন প্রতিকার পাননি ভুক্তভোগী কৃষকরা। কৃষকরা দফায় দফায় পাচ্ছেন বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস। এখনও কৃষকরা পাননি ক্ষতি পোষানোর কোন স্থায়ী ব্যবস্থা।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘আমি আমন ধান রোপন মৌসুমে তিলকপুর বাজারের ষ্টেশন রোডের মেসার্স মিতু ট্রেডার্স এর মালিক মাহফুজ এর নিকট ধানী গোল্ড ব্রান্ডের হাইব্রিড আমন ধান বীজ ক্রয় করার জন্য যাই। বীজ বিক্রেতা আমাকে অধিক ফলনের কথা বলে ব্র্যাক-১৪ হাইব্রিড জাতের ধান রোপন করতে বলেন। আমি তখন অধিক ফলনের আশায় বীজ বিক্রেতার কথা সরল বিশ্বাস করে ২১ কেজি বীজ ক্রয় করে সেই বীজের চারা ২১ বিঘা জমিতে রোপন করি।
কিছুদিন পরেই ধানের বাড়ন্ত চারাগুলোর মাঝখান থেকে ফেটে ফেটে ধানের শীষ বেড় হচ্ছে। আবার একই থোকা থেকে নতুন নতুন গাছ গজাচ্ছে। আবার সেই চারার থেকেই ধান পাকা শুরু করেছে। এতে আমার কয়েক জায়গায় জমির ধান নষ্ট হয়ে যায়। এতে আমি বিশাল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছি। ক্ষতি পোষাতে সংশ্লিষ্টতে হস্তক্ষেপ কামনা করছি’।
তিলকপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সেলিম মাহাবুব সজল বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা আমার নিকট আসলে তাদের নিয়ে আমি উক্ত ধানের জমি পরিদর্শন করি। কৃষকদের ক্ষতি পোষাতে বিষয়টি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে জানাতে বলি’। এ ব্যাপারে বীজ বিক্রেতা মাহফুজ বলেন, ‘আমি ব্রাক সীড কোম্পানির অনুমোদিত বীজ বিক্রয় করেছি। ফসল উৎপাদনের ব্যঘাত ঘটলে সেই দায় কৃষকের আমার নয়। আমার দোকানের বীজ অন্য কৃষকরা নিয়ে গিয়ে রোপন করে তাদের ক্ষেত্রে এমন অবস্থা হয়নি’।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্থ ধান ক্ষেত গুলো সরজমিনে পরিদর্শন করে কৃষকদের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। তিলকপুর বাজারের বীজ বিক্রেতা মাহফুজ ব্রাক-১৪ হাইব্রিড জাতের মেয়াদ উর্ত্তীন ও এই অঞ্চলের জন্য অনুমোদিত ধান বীজ নয় তবু সেই বীজগুলো বিক্রয় করে প্রতারিত করেছে কৃষকদের। মেয়াদ উর্ত্তীন বীজের কারণে কৃষকদের ধান উৎপাদনের উপর মারাত্মক ব্যঘাত ঘটেছে’।
বহুমাত্রিক.কম