Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪

আইয়ুব বাচ্চুকে হারানোর দিন আজ

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৩৩, ১৮ অক্টোবর ২০১৯

আপডেট: ১০:৪২, ১৮ অক্টোবর ২০১৯

প্রিন্ট:

আইয়ুব বাচ্চুকে হারানোর দিন আজ

ঢাকা : গত বছরের অক্টোবরে রংপুরে কনসার্ট শেষ করে ঢাকাই ফিরেন উপমহাদেশের গিটারিস্ট প্রয়াত আইয়ু্ব বাচ্চু। এর পরেই ১৮ অক্টোবর হৃদরোগের আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে আকস্মিকভাবে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। চলে যান সেই তারা ভরা রাতের আকাশে। চলে গেলেও একজন্মহীন নক্ষত্রের মতোই জেগে আছেন কোটি মানুষের হৃদয়ে।

তিনি ছিলেন একাধারে গায়ক, লিড-গিটারিস্ট, গীতিকার, সুরকার ও প্লেব্যাক শিল্পী। এলআরবি ব্যান্ড দলের লিড গিটারিস্ট এবং ভোকাল আইয়ুব বাচ্চু বাংলাদেশের ব্যান্ড জগতের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সম্মানিত ব্যক্তিত্বদের একজন। এর আগে তিনি দশ বছর সোলস ব্যান্ডের সাথে লিড গিটারিস্ট হিসেবে যুক্ত ছিলেন।

আইয়ুব বাচ্চুর সঙ্গীতজগতে যাত্রা শুরু হয় ফিলিংস ব্যান্ডের সঙ্গে ১৯৭৮ সালে। তাঁর কণ্ঠ দেয়া প্রথম গান ‘হারানো বিকেলের গল্প’।১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালে তিনি সোলস ব্যান্ডের সাথে যুক্ত ছিলেন।

১৯৮৬ সালে তিনি প্রথম রক্তগোলাপ নামে একক অ্যালবাম প্রকাশ করেন। অ্যালবামটি তেমন সাফল্য না পেলেও সফলতার শুরু তার দ্বিতীয় একক অ্যালবাম `ময়না` দিয়ে ১৯৮৮ সালে ।১৯৯১ সালে আইয়ুব বাচ্চু এল আর বি ব্যান্ড গঠন করেন।

ব্যান্ড গঠনের পর ১৯৯২ সালে ব্যান্ডের নামেই প্রথম অ্যালবাম প্রকাশ করেন। এই অ্যালবামের ‘শেষ চিঠি কেন এমন চিঠি’, ‘ঘুম ভাঙা শহরে’, ‘হকার’ গানগুলো ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। পরে ১৯৯৩ ও ১৯৯৪ সালে তার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ব্যান্ড অ্যালবাম ‘সুখ’ ও ‘তবুও’ বের হয়। সুখ অ্যালবামের ‘সুখ’, ‘চলো বদলে যাই’, ‘রূপালি গিটার’, ‘গতকাল রাতে’ উল্লেখযোগ্য গান। এর মাঝে ‘চলো বদলে যাই’ বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতে অন্যতম জনপ্রিয় একটি গান। গানটির কথা ও সুর করেছেন বাচ্চু নিজেই।

১৯৯৫ সালে তিনি বের করেন তৃতীয় একক অ্যালবাম কষ্ট। এটি সর্বকালের সেরা একক অ্যালবাম বলে অবিহিত করা হয়। অ্যালবামটির প্রায় সবগুলো গানই জনপ্রিয়তা পায়। বিশেষ করে ‘কষ্ট কাকে বলে’, ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ‘অবাক হূদয়’, ও ‘আমিও মানুষ’।

সে বছরই প্রকাশিত হয় তার চতুর্থ ব্যান্ড অ্যালবাম ঘুমন্ত শহর। ঘুমন্ত শহরের টাইটেল ট্রাক ভ্রান্ত পথিক বেইলি রোডে গানগুলোও মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক বাংলা ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন আইয়ূব বাচ্চু। ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’ বাংলা ছবির অন্যতম একটি জনপ্রিয় গান। এটি তাঁর গাওয়া প্রথম চলচ্চিত্রের গান।

যদিও বাচ্চু সোলস ছেড়ে দিয়েছিলেন হার্ড রক গান করার জন্যে তবে একজন একক শিল্পী হিসেবে মূলত পপ রক ও সফট রক ঘরানার গান করতেন বাচ্চু। সংগীত জীবনের শুরু থেকেই আইয়ুব বাচ্চুর ব্লুজ, জ্যাজ ও ফাংক ঘরানার গানের প্রতি ছিলো প্রচণ্ড আগ্রহ৷

১৯৯৮ সালের শুরুর দিকে এবি কিচেন নামের একটি স্টুডিও ঢাকার মগবাজারে গড়ে তোলেন তিনি, যা পরবর্তীকালে একটি রেকর্ড লেবেলে পরিণত হয়। আইয়ুব বাচ্চু একজন একক শিল্পী হিসেবে একটি ডবল অ্যালবাম বের করতে চেয়েছিল।

 ১৯৯৯ সালের শুরুর দিকে সময় ও একা অ্যালবাম নামে দুটি ডাবল অ্যালবাম প্রকাশ করে এলআরবি যা সাউন্ডটেকের ব্যানারে প্রকাশ হয় ।

২০০০ সালে এলআরবি প্রকাশ করে `মন চাইলে মন পাবে` অ্যালবাম। গগনের তারা,স্বার্থের কাছে বন্দী মন, আপন কেউ নয় সহ সব গুলো গানই সারাদেশের অলিগলিতে বাজতে থাকে। এছাড়া ২০০২ সালে `প্রেম তুমি কি` নামে একক অ্যালবাম করেন। এছাড়াও দুটি মন ও কাফেলা নামে একক অ্যালবাম বের করেন ।

২০০৩ সালে এলআরবি বের করে `অচেনা জিবন` এবং আইয়ুব বাচ্চু একক অ্যালবাম `প্রেম প্রেমের মতো` বের হয়।২০০৪ সালে বের করেন একক অ্যালবাম `পথের গান`।

২০০৫ সালে এলআরবি বের করে মনে আছে নাকি নেই এবং একক হিসেবে ২০০৬ সালে বের হয় `ভাটির টানে মাটির গানে জীবন` এবং জীবন।২০০৭ সালে আইয়ুব বাচ্চু সাউন্ড অব সাইলেন্স নামে একটি ইন্সট্রুমেন্টাল মুক্তি দেন ।২০০৮ সালে বের করেন `রিমঝিম বৃষ্টি`।

২০০৯ সালে তার একক অ্যালবাম বলিনি কখনো প্রকাশিত। ২০১১ সালে এলআরবি ব্যান্ড থেকে বের করেন ব্যান্ড অ্যালবাম যুদ্ধ। এই অ্যালবামে ১০টি গান রয়েছে। ছয় বছর পর তার পরবর্তী একক অ্যালবাম ‘জীবনের গল্প’ (২০১৫) বাজারে আসে। এই অ্যালবামেও রয়েছে ১০টি গান। গানের কথা লিখেছেন সাজ্জাদ হোসাইন এবং সুর ও সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন আইয়ুব বাচ্চু নিজে।

এ ছাড়া অনেক মিশ্র অ্যালবামে কাজ করেছেন। এর মধ্যে প্রিন্স মাহমুদের সুরে করা মিশ্র অ্যালবামগুলোতে তাঁর গান আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা পায়। তাঁর সেরা গানগুলো নিয়ে একটি অ্যালবাম বের করা হয়। প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে চলচ্চিত্রেও গেয়েছেন। যেখানে তাঁর আম্মাজান গানটি বাংলা সিনেমার ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় গানগুলোর একটি ধরা হয়।

আইয়ুব বাচ্চু পরিচিত নাম হলেও তার পুরো নাম আইয়ুব বাচ্চু রবিন, এবি নামেও বেশ পরিচিত। ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বাচ্চু। সেখানেই কেটেছে কৈশোর আর তারুণ্যের দিনগুলো। তারা তিন ভাই-বোন ছিলেন। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সে ছিল সবার বড়। মুক্তিযুদ্ধের পর তার বাবা চট্টগ্রাম শহরের জুবীলি রোড এলাকায় একটি বাড়ি ক্রয় করেন, যেখানে বাচ্চুর বেশিরভাগ কৈশর জীবন অতিবহিত হয়। ১৯৭৩ সালে তার বাবা তাকে তার ১১তম জন্মদিনে একটি গীটার উপহার দেন। তার কৈশর জীবনের শুরুর দিকে সে বিভিন্ন ব্রিটিশ এবং আমেরিকান রক ব্যান্ডের গান শোনা শুরু করে।

১৯৭৬ এর দিকে সে তার এক বন্ধুর থেকে ধার নিয়ে ইলেকট্রিক গীটার বাজাতো, যা ছিল একটি টিস্কো গীটার। পরে সে যখন গীটারটির প্রতি বেশি আগ্রহ দেখান, তার বন্ধু তাকে গীটারটি দিয়ে দেয়। ১৯৭৫ সালে তাকে সরকারি মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়। ১৯৭৯ সালে সে ওই স্কুল থেকে পাশ এস এস সি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেন। চট্টগ্রামে কলেজ জীবনে সহপাঠী বন্ধুদের নিয়ে তিনি একটি ব্যান্ডদল গড়ে তোলেন। এর নাম ছিল ‘গোল্ডেন বয়েজ’। পরে নাম বদলে করা হয় ‘আগলি বয়েজ’। সেই ব্যান্ডের গায়ক ছিল কুমার বিশ্বজিৎ এবং বাচ্চু ছিল গিটারিস্ট। সেই সময়ে তারা মূলত পটিয়ায় বিভিন্ন বিবাহ অনুষ্ঠানে গান গাইতো এবং শহরের বিভিন্ন ক্লাবে গান করতো।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer