Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৬ ১৪৩১, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

আইনে থাকলেও শ্রমিকরা ন্যায্য হারে টাকা পাচ্ছেন না

নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:৪৬, ১৪ অক্টোবর ২০১৮

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

আইনে থাকলেও শ্রমিকরা ন্যায্য হারে টাকা পাচ্ছেন না

মৌলভীবাজার : সোমবার হতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা শুরু হচ্ছে। উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে দুর্গা পূজার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

দূর্গা পূজা উপলক্ষে চা বাগানের শ্রমিকরা উৎসব বোনাস পেয়ে থাকেন। গেজেটে ও শ্রম আইনে সকল শ্রমিকরা সমান হারে উৎসব বোনাস পাওয়ার কথা থাকলেও চা শ্রমিকদের কর্মে উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে বোনাস প্রদান করা হচ্ছে।

বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকদের ভিন্ন ভিন্ন হারে বোনাস প্রদান করার কারনে অনেকেই অন্যান্যদের মতো দুর্গা পূজার আনন্দ উৎসব পালন করতে পারবেন না বলে শ্রমিকরা অভিযোগ তুলেছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি চা-শ্রমিকদের মজুরি ৮৫ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে দৈনিক ১০২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। মজুরি চুক্তি অনুযায়ী চা-শ্রমিকদের বার্ষিক বোনাস ৪৫৯০ টাকা। এর মধ্যে দুর্গা পূজায় বকেয়াসহ ৩৫০০ টাকা উৎসব বোনাস প্রদান করার কথা থাকলেও সকল শ্রমিককে সমান হারে উৎসব বোনাস প্রদান করা হচ্ছে না। চা বাগান শ্রমিকরা জানান, দৈনিক মাত্র ১০২ টাকা মজুরিতে বর্তমান বাজারদরে যেখানে দু’বেলা ডাল-ভাত জুটানো দায়, সেখানে আনন্দ উৎসব করা তো দুরের কথা। তার উপর চা-বাগান কর্তৃপক্ষ দুর্গা পূজা উপলক্ষে উৎসব বোনাস প্রদানেও বৈষম্য সৃষ্টি করছেন।

চা-সেক্টরে ২০১০ সালের ৩০ মার্চ নি¤œতম মজুরির গেজেট (এসআরও নং ৮৯) এর ৫ (ক) নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে চা শ্রমিকদের প্রতি বছর যেকোন প্রধান দুইটি ধর্মীয় উৎসবে বোনাস পাবেন। বাংলাদেশ শ্রম আইনের শ্রম বিধিমালা-২০১৫ এর ১১১(৫) বিধি অনুযায়ী শ্রমিক কর্মচারীদের উৎসব বোনাস প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে শ্রমিক ইউনিয়নের চুক্তি অনুযায়ী শ্রমিকদের উৎসব বোনাস দিলেও সেটি উৎসাহ বোনাসের পর্যায়েই রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

দুর্গা পূজায় উৎসব বোনাস হিসেবে রাজনগর চা-বাগানের নারায়ন গোড়াইত সাতশত টাকা, কমলগঞ্জের সুনছড়া চা-বাগানের মঞ্জু গোয়ালা ১৪শ’ টাকা, রতন বৈদ্য ১৭শ’ দশ টাকা, শ্রীরাম ভূইয়া এক হাজার ৪শ’ টাকা, শিবু উরাং দু’হাজার ৬শ’ টাকা, কুলাউড়ার চাতলাপুর চা-বাগানে অঞ্জলি ভৌমিক সাতশত টাকা হারে পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেন।

জানতে চাইলে চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহবায়ক চা-শ্রমিক নেতা রাজদেও কৈরী বলেন, যে কোন সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সকল স্থায়ী শ্রমিক উৎসব বোনাস (ঋবংঃরনষব নড়হঁং) পেয়ে থাকেন এবং তা সবার জন্য সমান হয়।

উৎসব বোনাস সকল শ্রমিকের সমান হয় এবং এর সাথে কর্মে উপস্থিতি বা উৎপাদনের কোন সম্পর্ক নেই। তবে শ্রমিক কর্মচারীদের কাজে উৎসাহ বৃদ্ধির জন্য কর্মদিবস এবং উৎপাদনশীলতার উপর নির্ভর করে বিভিন্ন সেক্টরে বোনাস দেওয়ার রেওয়াজ আছে, যা উৎসাহ বোনাস (ওহপবহঃরাব নড়হঁং) হিসেবে পরিচিত। উৎসাহ বোনাস কর্মদক্ষতা ও কাজে উপস্থিতির সাথে সম্পর্কিত হওয়ায় তা বিভিন্ন শ্রমিকের কমবেশি হয়ে থাকে। চা-বাগান কর্তৃপক্ষ দুর্গা পুজা উপলক্ষে উৎসব বোনাসের পরিবর্তে উৎসাহ বোনাস প্রদান করে চা শ্রমিকদের ঠকাচ্ছে।

বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস বলেন, চা সেক্টরে সরকার ঘোষিত নি¤œতম মজুরির কোন সুবিধা বাদ দিয়ে চুক্তি করলে তা শ্রম আইনের পরিপন্থি হয়। তাছাড়া বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১০৩ (গ) ধারায় সকল শ্রমিককে সাপ্তাহিক ছুটির দিনের মজুরি প্রদান বাধ্যতামূলক করা হলেও চুক্তিতে বেআইনী শর্তযুক্ত করা হয়েছে। কমলগঞ্জের এনটিসি কোম্পানীর বাগানের ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন ও চা বাগান মালিক পক্ষের চুক্তি অনুযায়ী তাদের বোনাস প্রদান করা হচ্ছে। এই রেওয়াজটি দীর্ঘদিনের বলে তিনি দাবি করেন।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী বলেন, চা বাগানে উৎসব বোনাস আছে, তবে উৎসাহ বোনাস নেই। এটা আসলে দীর্ঘ দিনের একটি ট্রেডিশন। আগে একটা নিয়ম ছিল ১৯০ দিনের নিচে এক টাকাও দেয়া হতো না। এখন ১৭৫ দিনের নিচে যারা আছে তারা ২০ শতাংশ হারে পাবে। তবে আমরা সেখান থেকে পরিবর্তনের চেষ্টা করছি। চা শ্রমিকদের গ্রাচ্যুইটি নিয়ে আমরা লড়াই করবো।

এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গলস্থ বিভাগীয় শ্রম দপ্তর এর পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইত্তেফাককে বলেন, চা শ্রমিকদের বোনাস দু’মাসের মজুরির বেশি হবে না। তবে উৎসব বোনাস সকল শ্রমিকদের ক্ষেত্রেই সমান। ভিন্ন ভিন্ন হারে শ্রমিকরা বোনাস প্রাপ্তির বিষয়ে কেউ অভিযোগ দিলে তা খতিয়ে দেখা হবে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer