ছবি: সংগৃহীত
ময়মনসিংহ : ‘মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্যে’ ছোটকাল থেকেই এটা শিখে আসছি। মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক অবসর জীবনে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচসহ পরিবারের সদস্যদের মূখে দুমুঠো অন্ন তুলে দিতে পারছিলেন না। কী কাজ করবেন, ভেবে চিন্তা করে পারছিলেন না।
লোকলজ্জার কারণে এলাকায় তো অনেক কাজই করা যায়না। অবশেষে নিজের এলাকা ছেড়ে ময়মনসিংহে চলে আসেন। নিরুপায় হয়ে রিকশার প্যাটেল ধরে রাস্তায় নামেন স্কুল শিক্ষক। এমন খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হলে দৃষ্টিগোচর হয় ময়মনসিংহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ হাফিজুর রহমান সজল এর। তিনি নিজেও বর্তমানে ময়মনসিংহ জেলা কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বরত।
এরআগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতাও করেছেন তিনি। তাইতো একজন শিক্ষকের দূরাবস্থা ও অসহায়ত্বের পরিস্থিতির কথা জানতে পেরে নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারলেন না মানবিক ইউএনও সজল। এ খবর শুনা মাত্রই ১১জুন রাত সাড়ে ৮টা তখন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল, বৃষ্টিকে মাথায় নিয়ে করোনা দুর্যোগের মধ্যে ছুটে যান সেই অসহায় শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের ময়মনসিংহ শহরতলীর ময়নার মোড়ের বাসায়। শিক্ষক হিসেবে সাহায্যের জন্য ভবিষ্যতে কারো কাছে যেন যেতে না হয় এবং কিছু আর্থিক যোগান পায় সেজন্য ওই শিক্ষকের পরিবারকে একটি সেলাই মেশিন উপহার দেন ইউএনও সজল।
এছাড়াও এক মণ চাল, ৪ লিটার তৈল, ৮ কেজি আলু, ৪ কেজি ডালসহ খাদ্য সামগ্রী বহন করে পৌঁছে দেন ওই শিক্ষকের বাসায়। আকস্মিক নির্বাহী অফিসারের বাসায় উপস্থিতি এবং মানবিক উপহার সামগ্রী পেয়ে শিক্ষক কান্নায় ভেঙে পড়েন। আল্লাহ পাকে কাছে শুকরিয়া আদায় ও ইউএনও জন্য দোয়া কামনা করেন।
মোঃ আবুল কালাম আজাদ শিক্ষক জামালপুরের ‘জলকুড়ি স্কুল থেকে ২০১০ ইং সালে শিক্ষকতা থেকে অবসরে আসেন। অবসরের সময় ওই স্কুলটি এমপিওভূক্তি হয়নি। অবসরের পর স্কুলটির এমপিওভূক্তি হলেও তিনি কোনো সুবিধা ছাড়াই খালিহাতে বাসায় ফিরেন। বর্তমানে ময়মনসিংহ শহরতলীর ‘ময়না মোড়’ নামক এলাকায় একটি বাসা ভাড়ায় থাকেন তিনি। আবুল কালাম আজাদ শিক্ষক অবসরে আসার পর স্কুল ও কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়াতেন। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস বিশ্বের এই মহামারী করোনা ভাইরাস দুর্যোগে প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংসারে অভাব অনটন শুরু হয়। সংসারের এই করুণ পরিস্থিতিতে ওই শিক্ষককে বাধ্য করেন রিকশা চালিয়ে টাকা উপার্জন করতে।
এছাড়াও ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান খবর পেয়ে ২০ কেজি চাল, ডাল, তেল, চিনি, লবন, আলসহ অন্যান্য খাদ্য সামগ্রীর বড় দুটি প্যাকেট ডিবি’র পুলিশ অফিসারদের মাধ্যমে পৌছে দেন অসহায় শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের বাসায়। বৈশাখী টিভির সাংবাদিক ও ময়মনসিংহ টেলিভিশন রিপোর্টাস ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আ.ন.ম ফারুক ইতিমধ্যে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে কিছু খাদ্য সামগ্রী উপহার হিসেবে পৌঁছে দিয়েছিলেন ওই আবুল কালাম আজাদ শিক্ষকের বাসায়।
আবুল কালাম আজাদ শিক্ষকের তিন ছেলে বর্তমানে পড়াশুনা করছেন- বড় ছেলেটি ত্রিশাল জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ছেলে দুটি ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, ছেলে তিনটি তাদের নিজের পড়াশুনার খরচ চালান প্রাইভেট পড়িয়ে। আবুল কালাম আজাদ শিক্ষক সংসার চালাতে খুবই কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
অধ্যক্ষ লে. কর্ণেল লায়ন (অব.) ড. শাহাব উদ্দীন শিক্ষকের সন্মান রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য শেখ হাফিজুর রহমান সজল এর আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান। এ ছাড়াও ওই শিক্ষককে কোনো একটি চাকরি দিয়ে পুনর্বাসিত করা যায় কিনা সে ব্যাপারে বিত্তবানসহ সংশ্লিষ্ট চাকরিদাতাদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন তিনি।
বহুমাত্রিক.কম