Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১০ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪

অরক্ষিত সীমান্ত নজরদারির আওতায় আনা হবে : প্রধানমন্ত্রী

বহুমাত্রিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৯:৩৮, ১৯ ডিসেম্বর ২০২১

প্রিন্ট:

অরক্ষিত সীমান্ত নজরদারির আওতায় আনা হবে : প্রধানমন্ত্রী

দেশের অরক্ষিত সীমান্তের মধ্যে চারশ’র বেশি কিলোমিটার সীমান্ত ইতোমধ্যে নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। খুব শিগগিরই অবশিষ্ট প্রায় ১৫০ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্ত নজরদারির আওতায় আনা হবে- বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রোববার  সকাল ১০টায় রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজের মাধ্যমে ‘বিজিবি দিবস ২০২১’- এর উদ্বোধন করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগ দিয়ে এ ঘোষণা করেন।

বাংলাদেশের পাহাড়ি দুর্গম পথে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সীমানা রয়েছে। এছাড়া জলসীমা রয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় এখনও সীমান্ত সড়ক নির্মাণ হয়নি। তাই কিছু এলাকায় টহল দিতে বিজিবিকে বেগ পেতে হয়। এসব এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধির কথাই প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গিত দেন, যা বিজিবিরও দাবি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তে ৪টি ব্যাটালিয়ন এবং সুন্দরবন এলাকায় ২টি ভাসমান বিওপিসহ মোট ৬২টি বিওপি তৈরির মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৫শ’ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্তের মধ্যে ৪ শতাধিক কিলোমিটার সীমান্ত ইতোমধ্যে নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। খুব শিগগিরই অবশিষ্ট প্রায় দেড়শ’ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্ত নজরদারির আওতায় আনা হবে।

সরকার প্রধান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ৮ জানুয়ারি পিলখানায় তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের প্রথম ব্যাচের শিক্ষা সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। তিনি এই বাহিনীকে যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে এর পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের কাজ শুরু করেন। জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সাল থেকে এই বাহিনীকে যুগোপযোগী সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন-২০১০’ প্রণয়নসহ ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ভিশন-২০৪১’-এর পরিকল্পনা গ্রহণ করে।

এরই ধারাবাহিকতায় বাহিনীকে আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে সমগ্র বাংলাদেশের দায়িত্বপূর্ণ এলাকা পুনর্বিন্যাস করে বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামোতে ৫টি রিজিয়ন, সেক্টর এবং ইউনিট তৈরি করে কমান্ড স্তরে ভারসাম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এই লক্ষ্যে ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত ৩৩ হাজারের বেশি জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। নতুন ১৫ হাজার জনবল নিয়োগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাপী নারীর ক্ষমতায়ন ও লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে এবং কর্মক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকল্পে ২০১৫ সাল থেকে অদ্যাবধি মোট ৮৬৮ জন মহিলা সৈনিক ভর্তি করা হয়েছে। আগামী ২০৪১ সাল নাগাদ এ বাহিনীর জনবল ৯২ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিজিবিকে একটি আধুনিক ও বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিজিবিতে ২টি অত্যাধুনিক এম-১৭১ই হেলিকপ্টার সংযোজনের মাধ্যমে এ বাহিনীকে একটি ‘ত্রিমাত্রিক বাহিনী’ হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। বিজিবি এখন জল, স্থল ও আকাশ পথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এছাড়া বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামো থেকে অতি পুরাতন ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্র বিলুপ্ত করে তদ্বস্থলে ১৪টি আধুনিক ও যুগোপযোগী অ্যান্টি-ট্যাংক গাইডেড উইপন্স সংযোজন করা হয়েছে। বিজিবিতে এসব অত্যাধুনিক ও যুগোপযোগী অস্ত্র-সরঞ্জামাদি যুক্ত হওয়ায় এ বাহিনীর আভিযানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সৈনিকদের মনোবল ও কর্মোদ্দীপনা বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।’

প্রশিক্ষণের ওপরে গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেকোনও পেশাদার বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজিবির একটি মাত্র ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজ রয়েছে, যা বায়তুল ইজ্জত, চট্টগ্রামে অবস্থিত।

তিনি বলেন, বর্তমানে বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামো জনবল বৃদ্ধি পাওয়ায় একটি ট্রেনিং সেন্টার অপর্যাপ্ত। ফলে বিজিবি সদস্যদের প্রশিক্ষণ পরিচালনার সুবিধার্থে চুয়াডাঙ্গা জেলায় নতুন করে আরও একটি বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজ তৈরির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা প্রদান এবং বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের ক্যাম্পের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষা এবং অবৈধ মিয়ানমার নাগরিকদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবির ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদস্যের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং ভবিষ্যতে এই সফলতা আরও বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিজিবি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে বলে তিনি আশা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার বিজিবির আভিযানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সৈনিকদের জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের কল্যাণমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিজিবির সদর দপ্তর পিলখানায় একটি অত্যাধুনিক সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্র নির্মাণসহ ৪টি সৈনিক ব্যারাক এবং রিজিয়ন/প্রতিষ্ঠান/সেক্টর/ব্যাটালিয়নের আবাসন ও অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধিকল্পে মোট ১১৩টি স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।

ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে ‘বর্ডার গার্ড হাসপাতালগুলোর কার্যক্রমকে শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বিজিবি হাসপাতালগুলোতে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সংযোজন করে বিজিবি সদস্য ও তাদের পরিবারবর্গের পাশাপাশি সাধারণ জনগণকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে এ যাবৎ ৪৫ হাজার ৩৮৩ জন বিজিবি সদস্যকে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে। এ যাবৎ ১১ জন বিজিবি সদস্যকে এসটিএমকে/মেহেনী মিশনে কুয়েত প্রেরণ করা হয়েছে এবং আরও ১৬ জনকে পর্যায়ক্রমে মিশনে প্রেরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বিজিবিতে কর্মরত পোশাকধারী সদস্যদের চুলকাটা ও পোশাক ধোলাই ভাতা ১১৫ টাকার পরিবর্তে ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া বিজিবি সদস্যদের রেশন সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্যদের আজীবন রেশন সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

ভাষণ শেষে প্রধানমন্ত্রী বিজিবি সদর দপ্তরে নবনির্মিত ‘সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্র’র উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরপর ডগ মার্চ, ট্রিক ড্রিল, বর্ণাঢ্য মোটর শোভাযাত্রা এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বীরশ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় সম্মিলিত প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।

বিজিবি দিবসের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিএসএফ মহাপরিচালক পংকজ কুমার সিংয়ের নেতৃত্বে ভারতীয় প্রতিনিধি দল বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নেন।

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer